জীবনের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন হরেন বাউল। কৃত্রিম প্লাস্টিকের পায়ে ভর করে আর জীবনকে বহন করতে পারছেন না তিনি। তাই এখন জীবন থেকেই নিষ্কৃতি চান। ১৯ বছর আগে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলায় পা হারান বাউল শিল্পি হরেন গোসাই।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ গভীর রাতে যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পর পর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ। সেই বিভীষিকাময় রাতের হামলায় যারা আহত হন তাদের একজন হরেন গোসাই। তিনি যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের মৃত নিতাই পদর ছেলে। সেদিন রাতের পর তার দুই পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে হয়েছে। দুটি প্লাস্টিকের পায়ের অংশ আর হাতে লাঠির ভর করে বয়ে চলেছেন জীবনের ভার। উদীচীর তালিকায় তিনি টিভি শিল্পী।
উদীচী ট্র্যাজেডির ১৯ বছর পর আজও হরেন বাউলের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। পাননি সরকারি কোনো অর্থ সহায়তা। তার ষাটোর্ধ্ব স্ত্রী পার্বতী অধিকারীও পান না কোনো ভাতা। ৬ মাস পরপর মাসে ৭০০ টাকা হারে যে প্রতিবন্ধী ভাতা পান তাই দিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটান তিনি। ৪ মার্চ সোনালী ব্যাংকের চৌগাছা শাখায় এসেছিলেন ৬ মাসের প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে।
হরেন বাউল জানান, দুটি ছেলে ছিল তার। বড় ছেলে অরবিন্দ অধিকারী দুই ছেলে ও স্ত্রী রেখে মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। ছোট ছেলে বিদ্যুৎ অধিকারীর স্ত্রী ও তিন ছেলে। ছোট ছেলের সহায়তায় তিনি বড় ছেলের বিধবা স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি ট্রাকচালক ছোট ছেলে বিদ্যুৎ চট্টগামে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
এখন দুই বিধবা পুত্রবধূ, তাদের পাঁচ ছেলে আর নিজের স্ত্রী সবই যেন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে হরেন বাউলের কাছে। তিনি বলেন, এই মাসের ৭০০ টাকা তাও ছয় মাস পরপর পাই। এতে কি এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে ৯টা মানুষের মুখের খাবার জোগাড় হয়? হরেন বাউল আক্ষেপ করে বলেন, কোনোভাবে যদি একটা পৌত্রের চাকরি হতো তাহলে হয়ত শেষ জীবনে দুটো খেয়ে পরে বাঁচতাম। এই ১৯টি বছর যে কীভাবে কাটছে তা বলে বোঝাবার নয়। সেদিনের সেই বিভীষিকাময় রাতে যদি মরেও যেতাম এই কষ্ট থেকে হয়ত নিষ্কৃতি পেতাম।