সংবাদ সম্মেলন কক্ষে মাহমুদ উল্ল্লাহ এসে যখন ঢুকলেন, তখন মঞ্চে বসে আছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ১৮ বছরের এই তরুণই শুরুতে তিন উইকেট নিয়ে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে, যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। মুশফিক কালও খেলেছেন ৭২ রানের ইনিংস, কিন্তু আগের ম্যাচের মতো পাশে পাননি তামিম ইকবাল-লিটন দাসদের। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদও মানলেন, এমন উইকেটে ১৭৭ রান তাড়া করার সামর্থ্য থাকলেও টপ অর্ডারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়াতেই এই হার; যেখানে তিনি দায় দেখছেন নিজেরও।
নিদাহাস ট্রফি থেকে ভারতের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি ওয়াশিংটন সুন্দর। এই অফস্পিনার নিয়মিত পাওয়ার প্লেতে আসছেন বল করতে, নিচ্ছেন প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যানদের উইকেট। মঞ্চে আসার আগে তাঁকে নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকদের উচ্ছ্বাসটাও কানে গেছে মাহমুদের। নিজেও মানছেন, এই তরুণ খুব ভালো করছেন, তবে একই সঙ্গে দায়টা দিলেন নিজের দলের টপ অর্ডারকেই, ‘আগের ম্যাচে লিটন, তামিম ভালো শুরু এনে দিয়েছিল। শুরুতে অফস্পিনার থাকাতেই আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সৌম্যর জায়গায় লিটনকে ওপেনিংয়ে এনেছিলাম, এই কৌশলটা আজকে (কাল) কাজে দেয়নি। টপ অর্ডারের কেউ যদি একটা ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ রানের ইনিংসও খেলত, তাহলে মনে হয় আমরা এই রানটা তাড়া করে জিততে পারতাম। এমনকি আমিও বাজেভাবে আউট হয়েছি, যে বলে আউট হয়েছি সেটায় ছক্কাই হওয়া উচিত ছিল।’
তাসকিন আহমেদকে বসিয়ে কাল সুযোগ দেওয়া হয়েছিল আবু হায়দারকে। এই বাঁহাতি পেসার ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান, কোনো উইকেট পাননি। ১৮তম ওভারে বোলিং করতে এসে দিয়েছেন ২১ রান। তবু মাহমুদ দায় দেখছেন না বোলারদের, ‘রুবেল ভালো করেছে, অপু কম রান দিয়েছে, মিরাজ একটু বেশি রান দিলেও ঠিক আছে। অন্যরা হয়তো রান একটু বেশি দিয়ে দিয়েছে। তবে আমি এই জায়গাটার সঙ্গে আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদেরও দায় দেখছি। এই দুটো জায়গাতেই আমাদের উন্নতি করতে হবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটায় আমাদের টপ অর্ডার ভালোভাবে নিজেদের কাজ করেছে, যেটা এই ম্যাচে হয়নি।’
লোয়ার মিডল অর্ডারে ক্রমাগত ব্যর্থ সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিংটাও ঠিক টি-টোয়েন্টির চাহিদা পূরণের মতো নয়। সে ক্ষেত্রে দৃশ্যত সেমিফাইনালে পরিণত হওয়া শেষ ম্যাচটাতে কি কোনো অলরাউন্ডার বা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে আসবেন একাদশে? এমন প্রশ্নে অধিনায়কের উত্তর, ‘টুর্নামেন্টের সবগুলো ম্যাচেই দেখছি যে বেশ রান হচ্ছে। এ রকম ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে একজন বোলার কম নিয়ে নামলে ঝুঁকিটা অনেক বেশি হয়ে যায়। এই সুযোগে প্রতিপক্ষ যে বাড়তি রানটা করে ফেলবে, তাতে হয়তো রানটা আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। আমাদের মূল চাহিদাটা টপ অর্ডারের কাছে। ওদের ১৭৬ রান তাড়ায় মুশফিক একাই করেছে ৭২ রান, আমাদের অন্য ব্যাটসম্যানরা মিলে বাকি রানটা করতে পারেনি।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তুলেছিল ৭৪ রান, কাল ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৪৮। শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশ আর ফিরে পায়নি ছন্দটা। তাতেই ভারতের কাছে ১৭ রানের হার, যার ফলে আগামীকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা পরিণত দৃশ্যত সেমিফাইনালে। ওই ম্যাচের আগে কাল রোহিত শর্মার ইনিংস থেকে নিজ দলের ব্যাটসম্যানদের শেখার তাগিদ অধিনায়ক মাহমুদের, ‘রোহিতের শুরুতে সেট হতে সময় লেগেছে। এরপর সে রান তোলার গতি বাড়িয়েছে আর সুনির্দিষ্ট করে কয়েকজন বোলারের বলে বড় বড় শট খেলার চেষ্টা করেছে। আমার মনে হয় পাওয়ার প্লেতে আমরা বড্ড বেশি তাড়াতাড়ি রান তোলার চেষ্টা করেছিলাম। আমাদের ব্যাটসম্যানরা যদি প্রথাগত ক্রিকেটীয় শট খেলে রান তোলার চেষ্টা করত, তাহলে হয়তো গল্পটা অন্য রকম হতে পারত।’
ফিল্ডিংটা আরেকটু আঁটসাঁট হলে, শেষের দিকে বোলিংটায় আরেকটু কম রান দেওয়া গেলে আর টপ অর্ডারে একজন একটা ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ রানের ইনিংস খেললেই পুষিয়ে নেওয়া যেত ১৭ রানের ঘাটতি। তা হয়নি বলেই তো ফাইনালে পৌঁছে যাওয়ার স্বস্তির বদলে আক্ষেপ আর শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হওয়ার দুশ্চিন্তা নিয়েই ঘুমাতে গেলেন তামিম-মুশফিকরা। সেই সঙ্গে উত্কণ্ঠা বাড়ল সমর্থকদেরও। আরেকবার লঙ্কা জয় হবে তো?