বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রায় ৮০০ বৎসরের ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের বেদখলকৃত ১৪ বিঘা দেবোত্তর ভূমি পুনরুদ্ধার ও মন্দিরের প্রবেশ পথের পশ্চিম পাশের দেবোত্তর ভূমিতে নির্মাণ কাজ শুরু করার প্রতিবাদে অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে পর্যন্ত দুপুর ১টা পর্যন্ত কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
অনশনে নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক ধর্মীয় পীঠস্থান। এটি শুধু একটি ধর্মীয় পীঠস্থানই নয়, ইহা একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিশেষ নিদর্শন গেজেটে অন্তর্ভূক্ত এবং বিদেশী পর্যটক ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে ঐতিহ্য ও শ্রদ্ধার প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ, বিদেশী দূতগণ, বিভিন্ন দেশসমূহের মাননীয় রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ, ধর্মীয় যাজক প্রমুখের এখানে প্রায়শই আগমন ঘটে বিধায় ঢাকেশ্বরী মন্দির আজ জাতীয় মন্দিরের আসনে অধিষ্ঠান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, প্রায় ২০ বিঘা দেবোত্তর ভূমির মধ্যে বেদখলকৃত প্রায় ১৪ বিঘা পরিমান ভূমি বর্তমানে আজম, মমিন মোটর্স লি:, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নাভানা রিয়েল এস্টেট, গফুর গং, এ্যাড. কামাল, জিন্নাহ ও আজিম গং সহ অন্যান্যদের দখলে বিদ্যমান। ১৪ বিঘা ভূমি পুনরুদ্ধারে কয়েক দশক ধরে মামলা-মোকদ্দমা চালানো হলেও আজ পর্যন্ত তার কোনো সুরাহা হয়নি। আর হয়নি বলেই আজ ঢাকেশ্বরী মন্দির হিন্দু সম্প্রদায় তথা সমগ্র জাতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বক্তব্যে আরো বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ৪৭ বছর পরও জাতীয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের এ অবস্থা কারো কাছেই আজ কাম্য নয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্পত্তি নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আর এর সংরক্ষণ, উন্নয়ন ইত্যাদির দায়িত্ব মূলত রাষ্ট্র ও সরকারের। এ প্রেক্ষাপটে নেতৃবৃন্দ ও ভক্তবৃন্দের সরকার ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবী, অনতিবিলম্বে ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দিরের বেদখলকৃত ১৪ বিঘা দেবোত্তর ভূমি পূনরুদ্ধারপূর্বক ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাছে ফেরৎ দেয়া হোক।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি. এন. চ্যাটার্জী’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শ্যামল কুমার রায়ের পরিচালনায় অনশনে এসে সম্মতি প্রকাশ করেন সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, স্থানীয় সাংসদ হাজী মো: সেলিম, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদ, সহ-সভাপতি মো: হূমায়ন কবির, পংকজ নাথ, সুজিত রায় নন্দী, মানবাধিকার নেত্রী খুশি কবির, সাংবাদিক স্বপন সাহা, সাংবাদিক মনোজ রায়, সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, সাংবাদিক রাহুল রাহা, রঞ্জন কর্মকার, হেমন্ত আই কোড়াইয়া, পান্না লাল দত্ত, সুব্রত চৌধুরী, নির্মল চ্যাটার্জী, স্থানীয় কাউন্সিলর উমর বীন তামিমসহ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সব ধর্মের নেতৃবৃন্দ ও ভক্তবৃন্দ।
একই দিনে সকাল ৯.৩০টায় নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি ও আহতদের আশু আরোগ্য কামনায় শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক প্রার্থনা সভা আয়োজন করা হয়।
শনিবার মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৮ উপলক্ষে বেলা ১১:০০ টায় শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।