৯ই চৈত্র ১৪২৪ বাংলা (২৪শে মার্চ ২০১৮ ইং) শনিবার ঘঃ ১০/১৪/১০ গতে ১০ই চৈত্র ১৪২৪ বাংলা (২৫শে মার্চ ২০১৮ ইং) রবিবার সকাল ঘঃ ৭/৫২/৫২ পর্যন্ত পূণ্যভূমি লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী স্নান।
ইহার মধ্যে ১০ই চৈত্র (২৫শে মার্চ) রবিবার সকাল ঘঃ ৬/১০/১১ গতে ঘঃ ৭/৫২/৫০ এর মধ্যে মহাষ্টমী তিথিতে ব্রক্ষ্মপুত্র নদে স্নানে বিশেষ ফল পাওয়া যাবে।
‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’ এ মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জগতের যাবতীয় সংকীর্নতা ও পঙ্কিলতার আবরণে ঘেরা জীবন থেকে পাপমুক্তির বাসনায় হিন্দু পুন্যার্থীরা ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নান শুরু করবে।
পাপ মোচনের আশায় নারায়ণগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতিবছর চৈত্রের মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে স্নান করতে আসেন দেশ বিদেশের সনাতন ধর্মালম্বীদের লাখ লাখ পুন্যার্থী। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস তিথির নির্দিষ্ট সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে পুণ্য স্নান করলে সব পাপ মোচন হয়ে যায়।
লাঙ্গলবন্দ স্নান এবং নদের উৎপত্তি সর্ম্পকে হিন্দু পুরান মতে, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট। এ নগরীতে ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্র সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট। পরশুরামের জন্মকালে বিশ্বজুড়ে চলছিল মহাসঙ্কট। একদিন পরশুরামের মা রেণুকা দেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান। সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধবরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরী গণসহ)। পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকা দেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন। অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরে পেয়ে রেণুকা দেবী কলস ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান। তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাকে হত্যার আদেশ দেন। প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন। পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান। তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি। কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই থাকে। অনেক চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারেন না তিনি। এক পর্যায়ে পিতার কথামত পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন। শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মপুত্র পুণ্যজলে স্নান করে তার হাতের কুঠার খসে যায়। পরশুরাম মনে মনে ভাবেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে। তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন। লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি। ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানায় এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন। এই জন্য এই স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ। এরপর এই জলধারা কোমল মাটির বুক চিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে। পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। গৌতম হালদার