রাজীব হোসেনের চিকিৎসা ব্যয় বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহন করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে তাকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রম্নল দিয়েছে হাইকোর্টযাযাদি রিপোর্ট
জীব হোসেনদুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব হোসেনকে শমরিতা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শমরিতা হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
শমরিতা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চিকিৎসক মো. হোসেন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাজীবের জ্ঞান আছে, কিন্তু একটা ঘোরের মধ্য আছেন। তার সারা শরীরে ব্যথা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তাকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত্ম তার অস্ত্রোপচার করা হয়। তার বাহুর নিচ থেকে পুরোটাই কাটা পড়েছে। ক্ষতগুলো ঠিক করা হয়েছে। এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল। এই আঘাত ছাড়া আর কোনো বড় আঘাত নেই।
মো. হোসেন বলেন, রাজীবের পরিবার জানিয়েছে, এখানে চিকিৎসার ব্যয় বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায় পরিবার।
এর আগে রাজীব হোসেনের খালা জাহানারা বেগম বলেন, ‘ওর জ্ঞান এখনো পুরোপুরি ফেরেনি। মাঝেমধ্যে সে শরীর নাড়াচ্ছে। বাম হাত দিয়ে ডান হাতটা খুঁজছে।’
জাহানারা বেগম বলেন, ‘তার চিকিৎসার খরচ জোগানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। মঙ্গলবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত্ম ওষুধের দামসহ দেড় লাখ টাকা বিল হয়েছে। এর মধ্যে ওষুধের খরচ ছিল ১৭ হাজার। আমরা ৫০ হাজার টাকা দিতে পেরেছি। বাকি টাকা পরে দেব-এমন আবেদন লিখিতভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি।’
রাজীবের মা-বাবা নেই। স্বজনদের সহৃদয় সহযোগিতায় কষ্টেসৃষ্টে পড়াশোনা চালাচ্ছিলেন।
থাকেন যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগের একটি মেসে।
হাসপাতালে রাজীবের মামা মোহাম্মদ জাহিদ বলেন, মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত্ম পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সরকারসহ সবার কাছে তারা আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। সুস্থ হলে প্রধানমন্ত্রী যেন রাজীবকে একটি চাকরি দেন-এমন আবেদন
করেন তিনি।
মঙ্গলবার বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্ত্মব্যে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। হাতটি বেরিয়েছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার বা ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিক গা ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দু-তিনজন পথচারী দ্রম্নত তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন সে হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি।
চিকিৎসা ব্যয় দিতে হবে
বাসমালিকদের
অন্যদিকে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের চিকিৎসা ব্যয় বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহন করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সেই সঙ্গে রাজীব হোসেনকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রম্নল দিয়েছে হাইকোর্ট।
যাত্রীদের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রম্নলে।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনারসহ আট বিবাদীকে রম্নলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরম্নল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার রম্নলসহ এ আদেশ দেয়।
এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রম্নহুল কুদ্দুস কাজল বুধবার হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালতে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
রম্নহুল কুদ্দুস কাজল পরে বলেন, ‘আদালত বলেছে, রাজীবের হাত রিপেস্নস করার সুযোগ থাকলে তার ব্যয়ভারও দুই বাস কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।’
দুই বাসচালক গ্রেপ্তার
এদিকে কারওয়ান বাজারে বেপরোয়া দুই বাসের মাঝে পড়ে তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব হোসেনের হাত হারানোর ঘটনায় উভয় বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ ও স্বজন বাসের চালক মো. খোরশেদ।
বুধবার এক প্রেস বার্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক আফতাব আলী জানান, ঘটনার পরপরই স্বজন পরিবহনের চালক বাস রেখে পালিয়ে যায়। তবে দোতলা বাসের চালক ওয়াহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।