জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় দলটির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে পহেলা বৈশাখের কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। তবে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর পক্ষ থেকে রাজধানীর নয়া পল্টনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিই নতুন বর্ষবরণ আয়োজনে বাধা হয়ে উঠেছে। নেতাকর্মীদের মনে নেত্রীর শূন্যতা। তাকে ছাড়া নতুন বছরের উদযাপন অনেকটাই ক্লিশে। তাই বিএনপির নববর্ষ উৎযাপনে ভাটা পড়েছে। নেই আগের মতো উৎসাহ-উদ্দীপনা। এ কারণে পহেলা বৈশাখ (শনিবার) উপলক্ষে দলটির কেন্দ্রীয় কোনও কর্মসূচি নেই। আয়োজন হচ্ছে না বৈশাখ শোভাযাত্রারও।
বিএনপির দফতর থেকে জানানো হয়েছে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শনিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ২টা থেকে নয়া পল্টনে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আর অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রশাসনের অনুমতি পেয়েছে জাসাস।
এ ব্যাপারে জাসাসের সহ-সভাপতি শায়রুল কবির খান জানান, সকাল ২টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। তবে এবার কোনও শোভাযাত্রা করা হচ্ছে না। পুলিশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের অনুমতি পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, নববর্ষের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, বৈশাখের অনুষ্ঠানে সংগঠনের বিভিন্ন শিল্পী ও নেতারা উপস্থিত থাকবেন। কণ্ঠশিল্পী মনির খান, বেবী নাজনীনসহ সমমনারা উপস্থিত থাকতে পারেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, নতুন বছরে নববর্ষের আয়োজনে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে আরও প্রাঞ্জল ও আকর্ষণীয় করে তুলতো। গত বছরও দেখা গেছে এমন চিত্র। বিএনপির চেয়ারপারসন লাল পাড়ের অফহোয়াইট শাড়ি পরে বৈশাখের আয়োজন উপভোগ করেছেন গত বছর। ওই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আসুন নববর্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই: শপথ নেই। বিভেদ নয়, ঐক্য গড়ে তুলে জাতিকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাই। শহীদরা যেমন রক্ত দিয়ে সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি আমরাও সবাই মিলে বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে শান্তি ও উন্নয়নের দেশ হিসেবে উপহার দেই। আসুন গণতন্ত্রের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে ম্যাডাম থাকবেন না। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় না-পাওয়া। প্রতিবার পহেলা বৈশাখের আয়োজনে তিনি উপস্থিত থাকেন, নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকে, সবাই আনন্দ সহকারে দিনটিকে উদযাপন করে। কিন্তু এবার আমাদের নেত্রী না থাকায় আয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই ভাটা পড়বে। তবে আমরা এ দিনে শপথ নেবো- নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।’
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির বিষয়ে শায়রুল কবির খান বলেন, ‘প্রতিবছর বৈশাখের অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু এবার তিনি জেলে থাকার কারণে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তার অনুপস্থিতি বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য সবচেয়ে বড় শুন্যতা। যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে তার প্রতি সম্মান রেখে এবার জাসাস বৈশাখের অনুষ্ঠান এবং বর্ষবরণ করবে।’
এদিকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের শুভেচ্ছা কার্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পৃথক-পৃথক বাণীও দিয়েছেন তারা।
বানীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করছে। মানুষে মানুষে মিলনের বাণীই আমাদের লোকজ ঐতিহ্যের উজ্জল অনুষঙ্গ। সাধকেরা সেই মিলনের গানই গেয়েছেন বাংলার পথে পথে। এদেশের সকল নৃ-গোষ্ঠীর সমান অগ্রগতি ও বিকাশ কামনা করি।’
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনও অনুষ্ঠান রাখা হয়নি। তবে দলের সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেখানে দলের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত থাকবেন।