প্রশ্নটা অনেক সহজ। আবার অনেকের কাছেই কঠিন বলে মনে হয়। কিন্তু ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র আমাদের চারিবর্ণেই নমস্কারের নিয়ম আছে। কিন্তু কিভাবে নমস্কার করতে হয়, হয়তো বা অনেকেই জানে না। কেউ হাত তুলে কপালে ধরে নমস্কার করে আবার কোনো লজ্জার জন্য নমস্কার দেন না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। সকল জাতিই সকলকে নমস্কার জানাতে পারে। এবার জেনে নমস্কারের পদ্ধতি গুলো।
নমস্কার বা নমস্তুতে বা সংক্ষেপে নমস্তে হচ্ছে বৈদিকযুগ হতে প্রচলিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্তৃক ব্যবহৃত অভিবাদনসূচক শব্দ। সাধারণত দুই হাত জোড় করে ‘নমস্কার’ শব্দটি উচ্চারণ করা হয়ে থাকে বলে একে অঞ্জলি মুদ্রা বা প্রণামও বলা হয়। ‘নমস্কার’ শব্দটি এসেছে মূল সংস্কৃত শব্দ ‘নমঃ’থেকে যার আভিধানিক অর্থ সম্মানজ্ঞাপনপূর্বক অবনত হওয়া। বর্তমান জগতে সনাতন ধর্ম বিরোধী নানা কু-প্রচারনার অংশ হিসেবে এক শ্রেণির কুচক্রী মহল প্রচার করে চলেছে যে, যেহেতু ,নমস্কার শব্দটি অবনত হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট তাই সাধারণ জনগণকে নমস্কার জানানো উচিত নয় । দেখা যাক, এ সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্র কি বলে।
“যো দেবো অগ্নৌ যো অপসু যো বিশ্বং ভূবনাবিবেশ য ওষধীষু যো বনস্পতি তস্মৈ দেবায় নমো নমঃ॥”(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ২-১৭) “যোগ যেমন পরমাত্মার দর্শনের সাধন বা উপায়, নমস্কারাদিও অনুরূপ বলিয়া তাঁহাকে নমস্কার জানাই।” তিনি কিরুপে? তিনি দেব অর্থাৎ পরমাত্মার প্রকাশভাব। তিনি কোথায়? তিনি আছেন অগ্নিতে, জলে, তৃণ-লতাদিতে, অশ্বাথাদি বৃক্ষে, তিনি এই বিশ্বভুবনে অন্তর্যামীরুপে অণুপ্রবিষ্ট হইয়া আছেন।”
তাই যখন কাউকে নমস্কার জানানো হয় তখন মূলত সর্বজীবে অন্তর্যামীরুপে অবস্থিত পরমাত্মাকেই প্রণতি নিবেদন করা হয়, কোন মনুষ্যদেহকে নয়। সুতরাং, নমস্কার সকলকেই জানানো যায়। দুই হাত জোড় মূলত অহম্ ত্যাগ পূর্বক বিনয়ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃতিভেদে করজোড়ে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায় যেমন দেবতাদের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে সাধকরা মাথার উপরে দু’হাত জোড় করে থাকে আবার কোন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাতে নমস্কার জানাতে বুকের বরাবর হাত জোড় করা একই সাথে পরমাত্মাকে প্রণতি ও আয়ুষ্মান (দীর্ঘায়ু কামনা)-কে নির্দেশ করে।