স্বামীর সঙ্গে রাগ করে পাঁচদিন আগে ঘর ছেড়ে বের হওয়া নিখোঁজ গৃহবধূ বৈশাখী ধর তৃপ্তির গলিত লাশ মিলল সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সুরমা নদীতে। কিন্তু তার মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। পুলিশের ধারণা, তৃপ্তি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সুরমা নদীতে অভিমানী গৃহবধূ কীভাবে আত্মহত্যা করলো সেই প্রশ্নের কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
লাশ উদ্ধারের পর তৃপ্তির বাবা বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তৃপ্তির স্বামী সিলেটের পল্লী বিমোচন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক রিংকু ধরকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় রিংকুর সংশ্লিষ্টতার কোনো সূত্র পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না।
বৈশাখী ধর তৃপ্তি সিলেট সদর উপজেলার দাশপাড়া গ্রামের আশুতোষ ধরের মেয়ে। আর তার স্বামী রিংকু ধর এনজিওর উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে মাস্টার্স পাস করা তৃপ্তি ছিলেন সিলেট রেলওয়ের মেইল বিভাগের কর্মকর্তা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর খানেক আগে তৃপ্তি ও রিংকুর বিয়ে হয়। এরপর দক্ষিণ সুরমার মাহবুব কমপ্লেক্সের ভাড়া বাসায় থাকতেন। প্রায় দুই মাস আগে রিংকু ও তৃপ্তির মধ্যে মনোমানিল্য দেখা দেয়। চাকরিতে ব্যস্ত থাকায় তৃপ্তি স্বামী রিংকুকে ততটা সময় দিতে পারতেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। সাংসারিক জীবনে কিছুটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসেরও সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তাদের সংসারে প্রায় সময়ই ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। এমনকি মাঝে মধ্যে কথাবার্তাও বন্ধ থাকে। রিংকু ও তৃপ্তির পরিবারের সদস্যরা এসে তাদের বিবাদ প্রায় সময় মিটিয়ে দিয়ে যান। গত শনিবার সকালে প্রতিদিনের মতো দক্ষিণ সুরমার মাহবুব কমপ্লেক্সের বাসা থেকে বের হয়ে যান বৈশাখী ধর তৃপ্তি। বাসা থেকে বের হওয়ার দিন দুপুর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রবিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় তৃপ্তির স্বামী রিংকু ধর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় স্ত্রী নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন। পাশাপাশি তারা রিংকুকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু পরিচিত জন কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাড়ি- কোথাও যায়নি তৃপ্তি।
গত বুধবার দুপুরে খবর আসে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সুরমা নদীতে এক মহিলার লাশ ভাসছে। খবর পেয়ে তৃপ্তির স্বামী ও পিতার বাড়ির সদস্যরা গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। তৃপ্তির শরীর গলে গেছে। মুখ কিছুটা বিকৃত। পরিবারের সদস্যরা লাশ শনাক্ত করার পর তৃপ্তির মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে- তৃপ্তির বাবা আশুতোষ ধর বাদী হয়ে তার স্বামী রিংকুর বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা করেছেন। মামলায় রিংকুর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার প্রেক্ষিতে গত বুধবার বিকালে তৃপ্তির স্বামী রিংকু ধরকে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বৈশাখী ধর তৃপ্তির মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে পুলিশ রাতভর থানায় রেখে রিংকুকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ তৃপ্তির পিতার দায়ের করা মামলায় রিংকুকে আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল জানান, বৈশাখী ধর তৃপ্তি নিজ থেকে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ- তৃপ্তি নিখোঁজের খবর জানার পর পুলিশ মাহবুব কমপ্লেক্সে যায়। সেখানে সিসিটিভির ফুটেজ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে নিখোঁজের দিন শনিবার তৃপ্তি একাই বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে আর কেউ ছিল না। এ ছাড়া নিখোঁজের আগের দিন তৃপ্তি তার মা-বাবাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল, আমার আশা ছেড়ে দেও তোমরা। আমাকে পাইবা না। আমি আত্মহত্যা করবো। নিখোঁজের আগের দিন এসব কথা বলে যাওয়ায় পরিবারও ধারণা করছে সে আত্মহত্যা করেছে।
তৃপ্তি সুরমা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। সুরমা নদীর পাশেই ভাড়া বাসায় বসবাস করে তৃপ্তি। পেছনেই কাজিরবাজার সেতু। কিন্তু সকালে বের হওয়া তৃপ্তি কখন আত্মহত্যা করেছে তার কোনো তথ্য মিলেনি। আর দিনের বেলা নদীতে ঝাঁপ দিলেও লোকজনের চোখে পড়তো। তার গলায়ও কোনো কিছু বাঁধা ছিল না। আর রাতে সে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলে গোটা দিন কোথায় ছিল সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ওসি জানিয়েছেন, তৃপ্তির মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের জন্য ময়না তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হবে।