শস্যভাণ্ডার’ খ্যাত দেশের সর্বোবৃহৎ বিলাঞ্চল নাটোরের চলনবিল। টানা কয়েক দিনের ভারি বষর্ণে চলনবিলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের সেই ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে কবিতার আত্রাই ও নাগর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অঞ্চলের লক্ষাধিক কৃষক এখন আতঙ্কিত। উজানের ঢলের পানি নাগর নদীর সারদানগর বাঁধ দিয়ে চলনবিলে প্রবেশ করে প্রায় ওই এলাকার দুই শতাধিক কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। এছাড়াও টানা বর্ষণে সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন খাল পানিতে ডুবে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান হুমকির মুখে রয়েছে।
এদিকে শ্রমিক সংকটে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে চলনবিলের কৃষকরা। ফলে অকালে ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। তাছাড়া শ্রমিকদের জন্য কৃষকদের গুণতে জন্য বাড়তি টাকা।
স্থানীয় কৃষি অফিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সিংড়া উপজেলার আত্রাই এবং নাগর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষক এখন আতঙ্কিত। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নাগর নদীর সারদানগর বাঁধ দিয়ে চলনবিলের ফসলি জমিতে প্রতিনিয়ত পানি প্রবেশ করছে। এতে সারদানগর এলাকার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার উপজেলার সারদানগর, চৌগ্রাম, একশিং তাড়াই, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভারি বর্ষণের পানি ফুসে উঠে চলনবিলের কৃষকের স্বপ্ন যেন এখন পানির নিচে। এছাড়াও ঝড় বাতাসে চলন বিলাঞ্চলের আধা কাঁচা-পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়ায় বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে চলন বিলের কৃষকরা।
সারদানগর গ্রামের কৃষক মামুন আলী, ইউসুব আলী ও চৌগ্রামের আতাহার আলী, আব্দুস সোবাহান এবং একশিং তাড়াই গ্রামের আব্দুল হালিম বলেন, চলনবিলের অধিকাংশ কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেন। হঠাৎ টানা বর্ষণ ও ঢলের পানিতে তাদের ফসল ডুবে যাওয়ায় তাদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। এখন তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কিভাবে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবেন।
চৌগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের সারদানগর বাঁধ দিয়ে চলনবিলে পানি প্রবেশ করায় প্রায় শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন চৌগ্রাম এলাকায় বেশকিছু ধান ডুবে এই এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও বাতাসে উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ শুয়ে পড়েছে। আর যারা নিচু খাল অথবা ক্যানেলে বোরো ধান চাষ করেছেন শুধু তাদের ধানই তলিয়ে গেছে। তবে এখন থেকে রোদের দেখা মিললে জমিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি শুকিয়ে গেলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত কম হবে।