* মতুয়ারা কেন হিন্দু ?*** ”
রিপোর্টার নাম
-
আপডেট টাইমঃ
মঙ্গলবার, মে ১৫, ২০১৮,
-
200 সংবাদটি পঠিক হয়েছে
ওড়াকান্দি পূণ্যধামে হরি অবতার।/ তাঁর যত ভক্ত আছে পৃথিবী ভিতর।।/ ‘মতুয়া’ বলিয়া তাঁরা খ্যাতি পাইয়াছে।” – শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ চরিত। পৃথিবীতে প্রচলিত অন্যান্য ধর্মগুলোর সাথে (বিশেষ করে সেমেটিক ধর্মগুলোর সাথে ) হিন্দুধর্মমহামন্ডলের বিশালত্বের তুলনা করলে, বৃহত্তর হিন্দুধর্মকে কোনমতেই একক ধর্ম বলা চলেনা। আমার মতে, হিন্দুধর্ম ভারতখন্ড হতে উদ্ভুত বহু আস্তিক্যবাদী ধর্মমতের এক সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম, যাদের মধ্যে বিরোধ ও সাযুজ্য দুই-ই বিদ্যমান। হিন্দুত্বের প্রকৃত মানদন্ড কি হবে, তা নিয়ে ভারতীয় ধর্মাচার্য্য ও পন্ডিতগণ আজ পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেন নি। কোন কোন পন্ডিত ‘বেদবিশ্বাস’কে হিন্দুত্বের প্রামাণ্য নির্ধারণ করছেন। কিন্তু আমি তা যথার্থ মনে করছিনা। কেননা, হিন্দু ধর্মমহামন্ডলের অন্তর্ভুক্ত এমন বহু মতবাদ আছে, যা বেদস্বতন্ত্র , এমনকি বেদবিরোধীও। ভারতীয় ধর্মদর্শনের একজন ছাত্র হিসেবে, হিন্দুধর্ম মহামন্ডলভুক্ত ধর্মমতগুলোর মধ্যে অন্তত তিনটি মৌলিক সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছি, যা কোন ধর্মমতের হিন্দুত্বভুক্তির মানদন্ড হতে পারে …… ১. সর্বব্যাপী ঈশ্বরতত্ত্ব । ২. কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ । ৩. অহিংসা (যদিও ব্যাখ্যাগত ভিন্নতা রয়েছে)। ভারতীয় সংবিধানে বৌদ্ধ ও জৈনদের হিন্দু বলা হলেও, এই তিনটি মানদন্ডের আলোকে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মকে হিন্দুত্বের আওতায় ফেলা যায়না।এই তিনটি মানদন্ডের আলোকে মতুয়াবাদের হিন্দুত্বভুক্তি যাচাই করা যাক… ১. মতুয়াবাদ পৌরাণিক ভক্তিবাদ হলেও, বৈদান্তিক সর্বেশ্বরবাদ এর অন্তর্নিহিত সত্য। মতুয়াদর্শনে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, অনায়াসে তা বেদান্তের সর্বব্যাপী ব্রহ্মতত্ত্বের সাথে তুলনীয়। ”অনাদি অনন্ত দেব অনন্ত শায়িন ।/ ….ইচ্ছাময় ইচ্ছাশক্তি সৃষ্টির বিকার।/ ঈক্ষণে ঈশ্বর – ভাবে শকতি প্রচার।।/ ওম্ ধ্বনি আদি নাদ অনাহত শব্দ।/…বদন আকাশ যাঁর বারিধি বসন।/শব্দরূপে বিশ্ব সদা করিছে শাসন।।/ ষড়ৈশ্বর্য্যশালী যিনি নরের আকারে ।/ সহস্র ফনায় পূজে অনন্ত যাঁহারে।।/ হরিচাঁদ রূপে সে-ই এল ওড়াকান্দি।” – শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ চরিত। মতুয়া ধর্মসাধনার সর্বোচ্চ স্তর ‘হরিময় জগৎদর্শন’ বেদান্তের সর্বময় ব্রহ্মদর্শনেরই ভক্তিবাদী রূপ। ২. অবতারবাদ মতুয়া বিশ্বাসের প্রধানতম মৌলিক ভিত্তি। তাই, কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ মতুয়াদর্শনে আপনা হতেই স্বীকৃত। ৩. মূলধারার প্রায় সব মতুয়া চিন্তাবিদ’ এ ব্যাপারে সহমত যে, বৈষ্ণবীয় ভক্তিবাদের বিকাশমান স্রোতধারা মতুয়া ভাবসমুদ্রে এসে শেষ হয়েছে। আর বৈষ্ণবীয় অহিংসার মাত্রা বৌদ্ধ- জৈন অহিংসার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সবদিক থেকেই, মতুয়াধর্ম হিন্দুধর্ম মহামন্ডলভুক্ত, পৌরাণিক ধারার একটি বিকশিত ভক্তিবাদ, বৈদান্তিকতা যাতে অন্তর্নিহিত । মতুয়াবাদকে একটি মানবদেহের সাথে তুলনা করলে, এর মস্তিষ্ক বৈদান্তিক, হৃদয় বৈষ্ণবীয় আর বহিরঙ্গ পৌরানিক।
উদীয়মান মতুয়াতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম গবেষক।
এই পোস্টটি শেয়ার করুন...
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...