মহাসড়কে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারানোর মিছিলে এবার যোগ হয়েছেন আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের বাসের হেলপার রামচরণ চন্দ্র সরকার। আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের একটি বাস, একই পরিবহনের অন্য একটি বাসকে অতিক্রম করতে গিয়ে দুই বাসের চাপায় পিষ্ট হন হেলপার রাম চন্দ্র। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।
গত সোমবার রাতে মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে।
হাইওয়ে পুলিশ দুটি বাসকেই আটক করেছে। নিহত রাম চন্দ্র যে বাসের হেলপার ছিলেন, ওই বাসের চালক পালিয়ে গেছে। আটক করা হয়েছে অন্য বাসটির চালক অপু মৃধাকে (৩৫)। তিনি বরিশালের উজিরপুর থানার হস্তিসন্ধি গ্রামের মঞ্জু মৃধার ছেলে।
নিহত রামচরণ চন্দ্র সরকার (২৮) গাজীপুর সদর উপজেলার বড় কয়ের গ্রামের সন্তোষ চন্দ্র সরকারের ছেলে। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে নিয়ে তিনি কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় বনের জমিতে ঘর তুলে থাকতেন। রামচরণ ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সালনা হাইওয়ে থানার পুলিশ জানায়, ঢাকার সদরঘাট থেকে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা চলাচলকারী বাস দুটি প্রতিযোগিতা করে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাস দুটি কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের আনসার ভবনের সামনে যাত্রী ওঠাচ্ছিল আর পাল্লাপাল্লি করে সামনের দিকে যাচ্ছিল। পেছনে থাকা বাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হেলপার রামচরণ। একপর্যায়ে সামনে থাকা বাসটিকে অতিক্রম করতে গিয়ে দুই বাসের চাপায় পিষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। খবর পেয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে বাস দুটিকে আটক করে হাইওয়ে ফাঁড়িতে নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার রামচরণের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, লাশ ঘিরে চলছে স্বজনদের মাতম। বাবাকে হারিয়ে নির্বাক বসে আছে ছেলে দুর্জয় (১১)। বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন স্ত্রী ঝর্ণা রাণী।
ঝর্ণা জানান, শুক্রবার রাতে ছেলেকে নিয়ে ঘরে শুয়ে ছিলেন রামচন্দ্র। চালকের ফোন পেয়ে ওই দিন রাত ৮টার দিকে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
যাওয়ার আগে ছেলেকে নিয়মিত স্কুলে পাঠাতে বলে যান তিনি। তারপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি তাঁদের।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর বিচার দাবি করে ঝর্ণা আরো বলেন, পাঁচ দিন পর পর বাসায় আসতেন রামচরণ। তিনিই ছিলেন সংসারে আয়ের মানুষ। এখন ছেলের লেখাপড়া এবং সংসার কিভাবে চলবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
রামচরণের ভাই নিতাই চন্দ্র জানান, তাঁরা পাঁচ ভাই এক বোন। তাঁদের অভাবের সংসার। রামচরণ কয়েক বছর ধরে আগে চন্দ্রায় গিয়ে বনের জমিতে একটি ঘর তুলে থাকতেন। ছেলে স্থানীয় স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কিছুদিন রামচরণ ওয়ালটন কারখানায় চাকরি করেছেন। দুই বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনে চাকরি নিয়েছিলেন।
নিতাই বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আইন-কানুন এত বুঝি না। পুলিশ যেভাবে বলেছে, সেভাবে লাশ নিয়ে এসেছি। ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তির বিচার চাই।’
সালনা হাইওয়ে থানার ওসি বাসুদেব সিনহা জানান, ভোরে রামচরণের লাশ তাঁর বড় ভাই নিতাই চন্দ্র সরকার বুঝে নিয়েছেন। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই মহসিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। আটক বাসচালক অপু মৃধাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।