সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার খুকণী যুগিবাড়ি গ্রামের সংখ্যলঘু অসহায় এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বালককে ধর্ষক সাজিয়ে তার তাঁত শ্রমিক পিতার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
মিথ্যা নাটক সাজিয়ে রাত দেড় টার সময় কয়েক প্রতারক তার পিতা শুকুমার চাকীকে ধরে বেদম মারধর করে টাকা গুলো আদায় করতে তৎক্ষনাত বাড়ির গাভী পর্যন্ত সস্তায় বিক্রি করতে বাধ্য করিয়েছে। শুধু তাই নয় ৩শ টাকার সাদা ষ্টাম্পে টিপসই রেখে দিয়ে আগামী ১ মাসের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার হুমকি দিয়েছে তারা। বিষয়টি নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলাতো দুরের কথা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা হীনতায় দিন কাটছে তাদের। তাই চাঞ্চল্যের ঘটনাটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে সাধারন জনতা।
নির্যাতিত পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, বুধবার বেলা ১১ টার দিকে এলাকার রাস্তায় দরিদ্র তাঁত শ্রমিক শ্রী শুকুমার চাকীর ছোট ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিতাই চাকি (১২) আম খাচ্ছিল। তখন একটি কুকুরকে দেখে ঢিল ছুড়লে কুকুরটি তাড়িয়ে আসে। তখন সে দৌড় দিলে এলাকার মনি হোসেনের স্কুল পড়ুয়া শিশু কন্যার সাথে ধাক্কা লাগে। তখন মেয়েটি কাঁদতে থাকলে তার স্বজনেরা ছেলেটিকে ধরে এনে বেদম মারধর করে। তখন তার মা ও বাবা ছেলের প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তাকেও লাঠি দিয়ে মারধর করে।
পরে বিকেলে মুমুর্ষ অবস্থায় তার ছেলে এনায়েতপুর জনতা ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ঐদিন রাতে মেয়েটির চাচা সোনালী হোসেন, স্থানীয় উটতি মাতব্বর এলাকার হাসেম আলী, হিরা খা, খুকনী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ সদস্য মোখলেছুর রহমান মোকবেল মিলে শুকুমার চাকীকে হাসপাতাল থেকে ছেলেটিকে বাড়ি আনতে হুমকি দেয়। রাত দেড়টার দিকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি আসলে শুকুমারকে পাশের একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়। তখন ঐ মাতব্বররা কৌশলে সহযোগী সুলতান, নাজিম, আনোয়ার, নায়েব আলী, আবুসামা মিলে আবারো মারধর করে।
শুকুমার চাকী অভিযোগ করে জানান, সে সময় তারা বলে তোর ছেলে ধর্ষন করেছে। মিথ্যা সাজানো বললে আরো মারধর করে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে ৩ লাখ টাকা দাবী করে ১ লাখ টাকা নগদ সহ প্রায় ৭০ হাজার টাকার ২টি গাভী মাত্র ৪৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে রাতেই দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৩শ টাকার সাদা ষ্টাম্প তার টিপসই করে নেয় এলাকার মাতব্বর রুপী সন্ত্রাসীরা মিলে। অসহায় শুকুমার চাকী আরো জানান, আমি বার-বার তাদের হাত-পা ধরে বলেছি আমার ছেলে ১০/২০ টাকার নোট পর্যন্ত চেনেনা সে পাগল। সেকি এমন কাজ দিনে দুপুরে করতে পারে? মেয়েটিও নাবালক।
মেয়ের বাবাকে মেয়েকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বর-চেয়ারম্যানদের দিয়ে সালিশ করবো। এভাবে না। তারা বলে আমরাই সব। আমাদের কথা না শুনলে তোর পরিবারের সবাইকে হত্যা করবো বলে দেড় লাখ টাকা নিয়ে নেয়। আমরা এখন কি করবো? আমাদের কি রক্ষা করার কেউ নাই? আমাকে তারা এও বলেছে আগামী এক মাসের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার জন্য। এখন কি হবে। মামলা ও অভিযোগ করবো তারা মেরে ফেলবে। হিন্দু বলে কি আমাদের বাড়ি, আমাদের দেশে থাকতে পারবো না।
এদিকে সরেজমিনে শুকুমারের বাড়িতে গেলে দেখা যায় সুনশান নিরবতা। তার আহত স্ত্রী আশা রাণী ও ছেলে নিতাইয়ের পুরো শরীর জুড়ে আঘাত। তারা দুজনেই যন্ত্রনায় কাতর। এ নিয়ে আশা রাণীরও আক্ষেপের শেষ নেই। আর ছেলেটি তো এখন বাকরুদ্ধ।
তখন প্রতিবেশী শ্রীবাস মোদক, গোপাল হোসেন, শাহীন রেজা সহ কয়েকজন প্রবীন ব্যক্তি জানান, ধর্ষনের এ ঘটনা সম্পুর্ন সাজানো। আমরা সবাই জানি এলাকার একটি চক্র নিরীহ এই পরিবারকে ভিটেছাড়া করতে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
শিশুটি ও তার বাবা এরকম কোন অভিযোগ কারো কাছে করে নাই। আমরা এর যথাযথ তদন্ত পুর্বক এর বিচার চাই। এ ব্যাপারে শিশুটির বাবা মনি হোসেনের বাড়িতে গেলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে চায়নি। শুকুমারের পরিবারকে নির্যাতনকারী হাসেম আলী, মোকবেল হোসেনের বাড়ি গেলে তাদের পাওয়া যায়নি।
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাইদ জানান, হিন্দুদের এভাবে নির্যাতন, ঘটনাটি শুনে আমি বিষ্ময় প্রকাশ করেছি। থানা পুলিশ সহ দায়িত্বশীল অনেককেই জানিয়েছি। কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এভাবে তাদের নিপীড়ন করলে তো তারা আর বাংলাদেশে থাকবেনা। তাদের নিরাপত্তা দেয়া তো দুরের কথা এমন আচরন করলে নৌকায় ভোটও বিতাড়িত হবে। তাই দোষী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে। দোষীরা অধিকাংশই বিএনপির নেতা ও সমর্থক। নির্বাচনের আগে হিন্দুদের দেশ ছাড়া করতেই এমন কৌশল করছে তারা।
ব্যাপক আলোচিত এই বিষয়টি নাকী এনায়েতপুর থানার ওসি মাহবুবুল আলম অবহিত নয় বলে জানিয়ে বলেন, আমাকে এ বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি।