লেখিকা:কনক বিশ্বাস
আজ লিখবো লক্ষন দাসের হাতির নির্মম মৃত্যু।
বাঙ্গালী জাতি কখনোই ৭১ এর নির্মম দুঃসহ দিনগুলো র
কথা কখনোই ভুলতে পারবে না। এখনও সেই দুঃস্বপ্ন ঐ সময়ের ভুক্তভোগীদের তাড়িয়ে বেড়ায়।যুদ্ধ চলাকালীন পাক
হানাদার বাহিনীর হাতে কত মানুষ জীবন হারিয়েছে , মেয়েরা হয়েছে অত্যাচারিত ,নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে শিশুদের।
পশুরাও বাদ যায়নি। যেমন গুলি করে শিকল বাধা অবস্থায়
মারা হয়ে ছিল লক্ষন দাসের হাতি কে। তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান ও বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চলে লক্ষন দাস এর নামে এক সার্কাস পার্টি ছিল।ঐ সময় শীতের সিজনে বিভিন্ন
জেলায় বিশেষ করে বরিশালে মাস ব্যাপী প্রদর্শনী ( একজিবিশন) হত। সেখানে নানা রকম রকমারি দোকান, খাবার এর দোকান, গয়নার দোকান, সার্কাস পার্টি র সার্কাস প্রদর্শন , বিভিন্ন শিল্পী দের গানের আয়োজন ছিল।আমরা ভাই বোনেরা বাবা মায়ের হাত ধরে সন্ধ্যার পরে ওখানে যেতাম সবাই সবার হাত ধরে থাকতাম যদি হারিয়ে যাই।বরিশাল শহরের ব্লেচ পার্ক মাঠ সন্ধার পর আলোয় আলোয়
আলোকিত হতো। রাত জেগে সবাই যাত্রা দেখতো। দুর দুরান্ত থেকে মানুষ আসতো এই একজিবিশন দেখতে। একবার বাবার সাথে লক্ষন দাসের হাতির সার্কাস দেখতে গেলাম বিভিন্ন পশু পাখির খেলা দেখে হাতির বল খেলা দেখে ভয়ে বাবার কোলে মুখ লুকোতাম।লক্ষন দাসের বাড়ি
বরিশালের গৌরনদী আমার মামা সেই বাড়ির পাশেই বিয়ে করেন ছোট বেলা মামি বাড়ি গেলে আমরা সবাই দল বেধে
হাতি দেখতে যেতাম। ১৯৭১ সাল এলো মুক্তি যুদ্ধ ,পাক হানাদার বাহিনী সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লো শহরের মানুষ ভয়ে গ্রামে পালিয়ে গেল তেমনি আমরা সবাই বরিশাল ছেড়ে
গ্রামে আগৈলঝারা রাহুত পাড়া গ্রামে আশ্রয় নেই। দিনে আমাদের নিয়ে বাবা মা সবার সাথে জঙ্গলে পালিয়ে থাকতো
আমি নাকি খুব কাদতাম মা মিলিটারি র ভয়ে আমার মুখ চেপে ধরতো।এই ভাবে ঐ এলাকার বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভিটা বাড়িতে যেখানে মানুষ থাকে না সেখানে আমরা সারাদিন কাটাতাম। এইভাবে একদিন বাকাল গ্রামের পাশে কোনো এক বাড়িতে আমরা ছিলাম এত জঙ্গল বোঝা যায় না ওখানে কোনো বাড়ি আছে। পাশেই বাকাল স্কুল সেখানে শিকল দিয়ে বাধা ছিল লক্ষন দাসের প্রিয় হাতি যে নানা কসরত দেখিয়ে শত শত মানুষ কে আনন্দ দিত।পাক বাহিনী এলো সবাই দৌড়ে পালাচ্ছে চিৎকার করছে মিলিটারী, মিলিটারী কিন্তু পশুরা তো জানে না মিলিটারি কি পায়ে শিকল পড়ানো ছিল সেই অবস্থায় তাকে গুলি করে ,ব্রাশ ফায়ার করে হাতিটির শরীর ঝাঁঝরা করে দেয়া হল।হাতিটির গগন বিদারী আর্তনাদে পাশের গ্রাম গুলি কেঁপে উঠে। ওর
পায়ে শিকল পড়ানো ছিল তাই ও কিছুই করতে পারে নি চোখের সামনে ওর মনিব লক্ষন দাস কে গুলি করে মারা হলো হাতিটি অসহায়ের মত চোখের জল ছেড়ে দিয়ে মৃতুর কোলে ঢলে পড়লো। তার গগন বিদারী অসহায় আর্তনাদ
পাক বাহিনীর উল্লাসে পরিনত হয়েছিল। আমার মা বলেন
এখনো কানে বাজে লক্ষন দাসের হাতির চিৎকার। আমার লেখা এই মুক্তি যুদ্ধের সময় এই নারকীয় নির্মম ঘটনা কিছু মায়ের কাছ থেকে শোনা কিছু আমার আবছা স্মরনের কারন তখন আমি ছোট ছিলাম। মুক্তি যুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ
নয় মাসে আমাদের দুর্বিষহ জীবন বারে বারে মৃতুর মুখোমুখি
হওয়ার ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরতে চাই।আপনারা কমেন্ট স করবেন ভালো মন্দ যাতে করে আমার লেখা নতুন
প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেবার আরও উৎসাহ পাই।