লেখক: অধ্যাপক ইমানুল হাকিম
১
তাঁকে বলা হয় আধুনিক বরিশাল’র রূপকার। তিনি আলোকিত বরিশাল’র পথপ্রদর্শক। নদীবিধৌত অঞ্চল’র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে চিন্তার আড়ষ্টতা থেকে দেখান মুক্তির পথ । তিনি অশ্বিনীকুমার দত্ত। জন্ম পিতার কর্মস্থল পটুয়াখালী’তে হলেও হাতেখড়ি পৈত্রিক বসতবাড়ি বরিশাল’র গৌরনদীর বাটাজোর গ্রামে। পিতা ব্রজমোহন দত্ত তখন ছিলেন ডিপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি চাকরি শুরু করেন মুন্সেফ পদে আর শেষ করেন ছোটো আদালতের জজ হয়ে। বদলীর চাকরি।অশ্বিনীকুমার’র শিক্ষা জীবন তাই একজায়গায় স্হির থাকেনি। স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে বিষ্ণুপুর, রংপুর, কৃষ্ণনগর হয়ে কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ’এ । প্রেসিডেন্সি থেকেই ১৮৭৯ সনে তিনি এফ.এ পাশ করেন। চারিত্রিক দৃঢ়তা, সত্যনিষ্ঠা, ধর্মাভাব ছেলেবেলা থেকে তাঁর ভিতর পরিস্ফূট হয় । কলেজ’এ পড়াকালীন সময়ে তা আরও প্রবল হয়। প্রবেশিকা পরীক্ষার সময় তাঁর বয়স ছিলো ১৪ বছরের কম। কিন্তু পরীক্ষার সময় তা বাড়িয়ে লেখা হয়। এই মিথ্যা সংশোধনের জন্য তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ’এ লেখাপড়া স্থগিত রেখে পিতার কাছে ফিরে আসেন। ব্রজমোহন দত্ত তখন যশোরে থাকেন। এখানে তিনি পিতার সাহচর্যে থেকে ধর্মচর্চা, সংস্কৃত ও ফার্সি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে কৃষ্ণ নগর কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ১৮৮০ সনে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ এবং বি.এল পাশ করেন। সংসার জীবন আরম্ভ করেন কলেজ’এ পড়ার সময়। বরিশাল শহরতলীর নথুল্লাবাদ এলাকার মীরবহর পরিবারের কায়স্থ কন্যা সরলাবালাকে বিয়ে করেন। সরলাবালার বয়স তখন নয় বছর চার মাস। যাহোক এম.এ পাশ করে এবং বি.এল পরীক্ষা দিয়ে অশ্বিনীকুমার শ্রীরামপুর’র কাছে চাতরা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক’র দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শিক্ষা প্রদানে তাঁর অভিনব কৌশল এই চাতরা বিদ্যালয়েই প্রথম বিকাশ লাভ করে।ইতিমধ্যে বি.এল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে অশ্বিনীকুমার পিতার নির্দেশ ও ঋষি রাজনারায়ন বসুর উপদেশে বরিশাল জর্জকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। কেননা রাজনারায়ণ তাঁকে বলেছিলেন, ‘যদি নাম করতে হয় তো কোলকাতায় এসো, আর যদি কাজ করতে হয় তো বরিশালে যাও’। অশ্বিনীকুমার এই উপদেশ শিরোধার্য মেনে নেন। বরিশালে তখন তিনিই প্রথম এম.এ বি.এল। প্রখর ব্যক্তিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার কারনে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নীতিবান এবং প্রজ্ঞাবান উকিল হিসেবে তিনি জনগণ’র ভিতর জনপ্রিয়তা ও শ্রদ্ধার আসনটি লাভ করেন।
অশ্বিনীকুমার’র যুগটা ছিলো বাংলার নবজাগরণ’র প্রভাবিত যুগ। তাঁর কোলকাতায় অবস্হানকালে তিনি রামতনু লাহিড়ী,রাজনারায়ণ বসু, কেশবচন্দ্র, রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের সংস্পর্শে আসেন। তাঁদের কাছে তিনি জীবনের বীজমন্ত্র ‘সত্য, প্রেম, পবিত্রতা’র সন্ধান পান। (চলবে)