২৮শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৪:৫৬

হীরের গয়না শরীরে নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, অক্টোবর ২৫, ২০১৭,
  • 724 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

ভালোবাসার হীরের গয়না নিয়ে জন্মানো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিংশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিকরূপে । ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

‘আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না মৃত্যু হয় না – কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়না শরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম।’ (জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)।

তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি নীললোহিত, নীল উপাধ্যায় এবং সনাতন পাঠক ছদ্মনামে অনেক লেখা লিখেছেন । তবে নীললোহিত সুনীলের অধিক প্রচলিত ছদ্মনাম। নীললোহিতের মাধ্যমে সুনীল নিজের একটি পৃথক সত্তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। নীললোহিতের সব কাহিনীতে নীললোহিতই কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে নিজেই কাহিনীটি বলে চলে আত্মকথার ভঙ্গিতে। সব কাহিনীতেই নীললোহিতের বয়স সাতাশ। তার বয়স বাড়ে না। বিভিন্ন কাহিনীতে নীললোহিত চিরবেকার। চাকরিতে ঢুকলেও বেশিদিন টেকে না। বাড়িতে মা, দাদা, বৌদি রয়েছেন। নীললোহিতের বহু কাহিনীতেই দিকশূন্যপুর বলে একটি জায়গার কথা বলা হয়েছে। যেখানে বহু শিক্ষিত সফল, কিন্তু জীবন সম্পর্কে নিস্পৃহ মানুষ একাকী জীবন যাপন করে।

আধুনিক বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি সুনীল ২০১২ সালে আজকের এই দিনে (২৩ অক্টোবর) কলকাতায় নিজ বাসভবনে মারা যান। প্রয়াণ দিবসে কবিকে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। মাত্র চার বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি কলকাতায় চলে যান। পড়াশুনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। সুনীলের মা কখনোই চাননি তার ছেলে শিক্ষকতা করুক। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মি. পলেন কলকাতায় এলে সুনীলের সঙ্গে ঘনিষ্ট পরিচয় হয়। সেই সূত্রে মার্কিন মুলুকে গেলেন সুনীল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে। ডিগ্রি হয়ে গেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন সুনীল।

বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী এই লেখক আমাদের মধ্যে, বিশেষ করে সাহিত্যপিপাসু মানুষের মনে, চিরবিরাজমান। বাংলা সাহিত্যে ভাণ্ডারকে তিনি করেছেন সমৃদ্ধ। দীর্ঘ ৭৮ বছরের জীবনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দুশোটির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা ও ভ্রমণকাহিনি।

১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ সালে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি ‘কাকাবাবু-সন্তু’ নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য আকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৬৭ সালে তিনি স্বাতী বন্দোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র সন্তান সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়। ২০০২ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরের শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ সালে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনী চলচিত্রে রূপায়ণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং  ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া কাকাবাবু চরিত্রের তিনটি কাহিনী ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’,  ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন?’ এবং  ‘মিশর রহস্য’ চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »