ঢাকা শহরে থাকেন আর মশার কামড় খাননি এমন কথা যে বলে আর যে বিশ্বাস করে, দুজনেই আহম্মক। দেশজুড়ে নগর জীবনের সবচেয়ে পরিচিত উপদ্রবের নাম মশা। তাই শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশেই স্থানীয় প্রশাসনের বাজেটের বড় একটা অংশজুড়ে থাকে শুধু একটি জিনিস- মশক নিধন। দেশের সাধারন মানুষও মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে নানান রকম উপশম ব্যবহার করে। তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত উপশমের নাম মশার কয়েল। সস্তা আর সহজলভ্য বলে কয়েলই এদেশের বহু পরিবারে মশক উপদ্রবের সবচেয়ে সহজ সমাধান। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, এই কয়েলেই রয়েছে আপনাকে অসুস্থ করে ফেলার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
মশার উপদ্রব বেশি লক্ষ্য করা যায় রাজধানীর অনুন্নত ও উন্নয়নশীল এলাকায়গুলোতে। নোংরা পরিবেশে মশা জন্ম লাভ করে। আর এসব এলাকা ছেয়ে গেছে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কয়েলে।
অবশ্য কয়েলের মারণাস্ত্র হয়ে উঠবার এক অদ্ভূত অভিযোগ প্রথম পাওয়া গেল কাঁটাবনের শৌখিন পোষা পাখির দোকানে। ‘সাগর একুরিয়াম অ্যান্ড পেট ফুট’ মালিক মো. নাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, ‘ঢাকার প্রায় এলাকা থেকেই আমাদের কাছে কাস্টমার আসে, আর প্রায়ই শুনতে হয় তাদের শখের পাখিটি মারা গেছে। কেইজ বার্ড গুলোতো সবাই ঘরে রেখেই পালে। আর এসব বাড়িতে সবাই কমবেশি কয়েল ব্যবহার করে। রাতে ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে ঘুমাতে গেছে। সকালে দেখে খাচার ভেতর পাখি মরে পড়ে আছে। আসলে কয়েলের ধোঁয়ায় দম আটকে পাখিগুলো মারা যায়। এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।’
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিছুদিন ধরেই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা বাড়লেও কমেনি কয়েলের ক্রেতা। রাতে কয়েল হাতে বাড়ি ফেরাটা অনেকেরই দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। তবে, পাড়ার খুচরো দোকানে খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত নামজাদা কোম্পানির কয়েল। ক্রেতার চাহিদার উপর ভিত্তি করেই বেনামি কোম্পানির কয়েল বিক্রি করতেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন দোকানিরা। এমন মন্তব্য প্রায় সব দোকানির।
কিন্তু যারা কেনেন তারা কেন না জেনে না শুনে কেনেন? একবারের জন্য হলেও মনের মধ্যে যে ক্ষতির ভাবনা উঁকি দেয় না ব্যাপারটা তা না। এসব কয়েলের নিয়মিত ক্রেতা ডিপিডিসি মোহাম্মাদপুর জাপান গার্ডেন কন্ট্রোলের কর্মচারী মো. রুবেল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জানি তো কয়েল ক্ষতি করে। কিন্তু কী করার আছে? মশার যন্ত্রণার চাইতে কয়েল ভালো।’
আর দোকানির জন্যতো আসলে ক্রেতাই সব। ক্রেতা চায় বলেই দোকানি রাখে। অন্তত এমনটাই বললেন হাজারীবাগ ঝাউচর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘দোকান করি ২০ বছর। আগে মরটিন-এসিআই বেচতাম। হুট কইরা কই থেকে এই সব আমপাতা-জামপাতা কয়েল আইলো, এখন কাস্টমার এগুলাই চায়, এগুলাই বেশি চলে। আগে দোকানে আমিই এসব কয়েল জালাইতাম। দেখি মশাতো মশা, তেলাপোকা, ইন্দুর সব মইরা যায়। পরে বুঝলাম এগুলা শুধু মশা না মানুষ মারারও কয়েল। ভয়ে এখন আর জালাইনা। খালি বেচি। ব্যবসা করি ভাই। কাস্টমার যেটা চায় সেইটাতো রাখা লাগবোই।’