নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের জেলেপাড়ায় চাঞ্চল্যকর সংখ্যালঘু স্কুল শিক্ষককে ৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবীতে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনার প্রধান আসামী মনিরুল মোল্যা (৪০) কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার লাহুড়িয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কমল কুমার পালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার রোনগর গ্রাম থেকে মনিরুল মোল্যা কে গ্রেফতার করে লোহাগড়া থানায় সোপর্দ করেন। লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাকে বুধবার দুপুরে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং পলাতক আসামীদের আটকের জোর চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গতঃ উপজেলার জয়পুর ইউপি’র মরিচপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লাহুড়িয়ার জেলেপাড়ার মনি কুমার বিশ্বাস(৪১) কে ২ অক্টোবর রাতে লাহুড়িয়া বাজার থেকে বাড়ী ফেরার পথে একই গ্রামের লাহুড়িয়া ইউপি সদস্য আকবর ওরফে মিলিটারী আকবর ও মনিরুল মোল্যার নেতৃত্বে আনিচুর, রবিউল, আমিনুর রহমান ও সুদে আমিনুর ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে মনিরুলের বাড়ি সংলগ্ন মেহগুনি গাছের সাথে বেঁধে ৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবীতে বেদম মারপিট করে গুরুত্বর আহত করে। এরপর সন্ত্রাসীরা শিক্ষক মনি কুমারের স্ত্রীকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য খবর দেয়। খবর পেয়ে মনি কুমারকে ছাড়াতে তার স্ত্রী শিক্ষিকা বাসনা রানী প্রতিবেশী ত্রিনাথ ও পরিমল স্বর্ণকারকে সাথে নিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয় এবং সাড়ে ৪ লাখ টাকার একটি চেক ও একটি ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনেন।
সন্ত্রাসীদের অব্যহত হুমকির কারনে ৪ দিন নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকার কারণে আহত ওই শিক্ষককে চিকিৎসা ও থানায় মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। ৬ অক্টোবর বিকালে সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার পর পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করলে ঘটনার ৪ দিন পর ৬ অক্টোবর রাতেই নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আহত শিক্ষককে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন।
এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষককের স্ত্রী বাসনা রানী বাদী হয়ে ৬ অক্টোবর রাতে ৬ জন কে আসামী করে লোহাগড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের করার পরের দিন ৭ অক্টোবর পুলিশ মামলার অপর আসামী রবিউল ইসলাম (৪১) কে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার ৬ জন আসামীর মধ্যে ২ জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সন্ত্রাসীদের নেওয়া নগদ ৫০ হাজার টাকা, সাড়ে ৪ লাখ টাকার একটি চেক ও স্বাক্ষরযুক্ত একটি ফাঁকা ষ্ট্যাম্প এখনও পুলিশ উদ্ধার করতে পারে নাই।