ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ২ নভেম্বর , ১৮৮৬ তৎকালীন বাংলা প্রদেশের ত্রিপুরা জেলার(বর্তমানের বাংলাদেশ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে। তাঁর বাবা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের সেরেস্তাদার। ধীরেন্দ্রনাথ পড়াশোনা করেছেন নবীনগর হাই স্কুল, কুমিল্লা কলেজ, এবং কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। তিনি ১৯০৪ সালে নবীনগর হাই স্কুল হতে প্রবেশিকা, ১৯০৬ সালে কুমিল্লা কলেজ থেকে এফ.এ.; ১৯০৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ হতে বি.এ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ হতে বি.এল পরীক্ষা পাস করেন।
ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তানে গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই প্রথম মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদার দাবি তুলেছিলেন। একাত্তরে শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যান তিনি।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর যখন বাংলা ভাষাকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল, তখন তার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ।
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ব্যক্তি হিসাবে গণপরিষদের অধিবেশনের প্রথম দিনই প্রস্তাব করেন, উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের ভাষা করা হোক।
সেদিন পূর্ব বাংলার কোনো মুসলমান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথের এই প্রস্তাব সমর্থন করেননি, বরং সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন মুসলিম লীগের নেতারা।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবটি গণপরিষদে অগ্রাহ্য হয়। সাম্প্রদায়িক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে গণপরিষদে বাংলা ভাষার অধিকারের প্রস্তাবটি নাকচ হয়।
তবে তার ওই পদক্ষেপই বাংলাভাষীদের দাঁড়িয়ে যাওয়ার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উত্তরে রামরাইল গ্রামে।
ছেলেবেলা থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকলেও রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি হয় ১৯০৫ সালের পর বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে।
শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরুর পর ১৯১১ সালে কুমিল্লা বারে যোগ দেন ধীরেন্দ্রনাথ। ১৯৩৬ সালে তিনি ত্রিপুরা জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে থাকায় কয়েকবার গ্রেপ্তার হন ধীরেন্দ্রনাথ। ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করলেও তখনকার ত্রিপুরা জেলার বিভক্তির পর জন্মভূমিতেই থেকে যান।
পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ধীরেন্দ্রনাথকে গৃহবন্দি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে তাকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা হয়।
১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে ছেলে দিলীপকুমার দত্তসহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নামতী সেনানিবাসে। সেখানেই তাকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
ভাষাসংগ্রামী শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩১ তম জন্ম তিথিতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও সহস্রকোটি প্রণাম ও শ্রদ্ধাঞ্জলি ।