রাস উৎসবকে ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকেই কুয়াকাটা সৈকতে পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। পরিণত হয়েছে লাখো মানুষের মিলন মেলায়। শনিবার সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের রাস উৎসব। এমনটাই জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।
হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা উদযাপন ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় এখন সাজ সাজ রব। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি রাস উদযাপন কমিটি তাদের সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
অন্তত দুই শত বছর আগে থেকে প্রতিবছর পূর্ণিমার তিথিতে এ মেলায় হিন্দু পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায় এবং নানা গোত্রবর্ণ নির্বিশেষে লক্ষাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোর কুয়াকাটায় সমবেত হন। সে অনুযায়ী শুক্রবার এ মহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় যেন এখানকার সবাই এখন মুখিয়ে আছেন।
রাসমেলা ও সমুদ্র সৈকতে পুণ্যস্নানকে ঘিরে কুয়কাটা রাস উদযাপন কমিটিকে সব ধরনের সহায়তা দিতে বরাবরের মত এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলা প্রশাসন, কুয়াকাটা পৌরসভা, কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
রাসমেলায় আগতদের থাকা খাওয়া নির্বিঘ্ন করতে আবাসিক হোটেলে ভাড়া ও রেস্তরাঁয় খাবারের মূল্যতালিকা টাঙানো, সুপেয় পানি ও পর্যাপ্ত স্যনিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে চারদিকে দুই কি.মি. এর মধ্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
রাসপুজা ও পুণ্যস্নান সম্পর্কে কুয়াকাটা রাসমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিপুল হওলাদার জানান, সনাতন ধর্মমতে দাপরযুগে কংস রাজার অত্যাচারে মানবকুল অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তখন মহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে মানবকুলকে ওই অত্যাচারী রাজার হাত থেকে রক্ষায় স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ আবির্ভূত হন। তিনি অলৌকিক ক্ষমতাবলে কংস রাজাকে হত্যা করে মানবকুলকে রক্ষা করেন।
তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে মানুষের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি মোচনের জন্য এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার প্রয়াস স্বরূপ শ্রী কৃষ্ণ শ্রী রাধীকাকে নিয়ে বৃন্দাবনের তমাল ও কদমকুঞ্জে যে নিষ্কাম প্রেমের উপাখ্যান রচনা করেছিলেন; সেটাই আজ রাধা-কৃষ্ণের রাসলীলা বা রাসপূজা উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেই সঙ্গে সব পাপ পঙ্কিলতা মোচনের উদ্দেশে এ তিথিতে গঙ্গাস্নান বা পুণ্যস্নান করে থাকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অধিক লোক সমাগমের আশা করছেন উপজেলা প্রশাসন ও রাসমেলা উদযাপন কমিটি। তাদের ধারণা, ফেরিবিহীন সড়ক ও দেশে কোনো সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী না থাকায় এবং এখানে বরাবরই নিরাপত্তার কোনো কমতি না থাকার কারণে অধিক লোক সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান বলেন, মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, পাশাপাশি আগত তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তায় প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে প্রস্তত রয়েছে।
টুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনের এএসপি মো. আ. করিম বলেন, রাস উৎসবে আগত সব তীর্থযাত্রীর নিরাপত্তায় আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।