কি! সে এত ছোট, আমি তার সামনে মাথা নত করে কথা বলব! এটাও আবার হয় নাকি! না হয় একটু ভুল করেছিই,তাই বলে ওর সামনে আমি সরি বলব!! এই আমি!! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, জার্মানীর প্রধান এডলফ হিটলার প্রায় ইউরোপ তার নিজের দখলে নিয়ে এসেছেন। জাপান পার্ল হার্বার ও ফিলিপাইন এ আমেরিকার ঘাটি চূর্ণ বিচূর্ন করে আমেরিকার মত ঘুমন্ত বাঘকে একরকম ইদুর হয়ে চ্যালেঞ্জ করে বসল। এদেখে সারাবিশ্ব তখন অবাক।
এদিকে এডলফ হিটলার ইউরোপ ছেড়ে আমেরিকা আক্রমণের চিন্তাও করছিলেন। কিন্তু তার তখন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করা বাকী। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান স্ট্যালিনেরথির সাথে হিটলারের সম্পর্ক খুবই খারাপ ছিল। তিনি স্ট্যালিন এর নাম শুনতেই পারতেন না। হিটলার মস্কো আক্রমণ করে বসলেন, জয় ও সুনিশ্চিত ছিল। যখন স্ট্যালিন মস্কো ছেড়ে প্রাণ নিয়ে বাঁচার জন্য পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন প্রকৃতি তার সহায় হলেন। মস্কোতে নামতে শুরু করল তুমুল বরফের ঝড়, যা হিটলার কখনই আশা করেছিলেন না। মস্কোতে তিনি হেরে বসলেন। জার্মানদের প্রথম পিছু হটতে হলো।
স্ট্যালিন হিটলারের সাথে সমঝোতা করতে রাজি ছিলেন কিন্তু হিটলার এর দম্ভ কখনই মাথা নোয়াবার ছিল না। তিনি ৬ লক্ষ সেনা পাঠালেন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্ট্যালিনইয়ার্ডে (স্ট্যালিনের প্রিয় একটি এলাকা হওয়ায় এলাকার নামকরণ তার নামেই হয়)। কিন্তু হিটলারের সৈন্য গড়ে প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন করে মারা পড়লেন। পুরো ৬ লক্ষ সেনাবাহিনীর দল খোয়ালেন সেখানে। এরপর ও হিটলারের দম্ভ বিন্দু মাত্র না কমিয়ে সেখানে আবার সেনাবাহিনী পাঠালেন এবং সর্বশান্ত হলেন।
এদিকে তখন ব্রিটিশ সূর্য অনেক আগেই নত হয়েছিল, আমেরিকা তখন ভয়ে অস্থির যে কখন হিটলারের সৈন্য এর পা পড়ে আমেরিকায়। এমন সময় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডেকে আনলেন ব্রিটেন এর প্রধান চার্চিলকে। দীর্ঘ আলোচনার পর তারা সিদ্ধান্ত নিলেন তারা তাদের শত্রু স্ট্যালিনের সাত্থে বন্ধুত্বতা করতে রাজি আছেন হিটলারে পতনের জন্য। তারা তাদের শত্রুকে খুব বড়সড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন। এদিকে স্ট্যালিনও হাপিয়ে উঠেছেন। তিনি নিজের স্বার্থেই বসলেন রুজভেল্ট আর চার্চিলের সাথে এবং হিটলার দমনে একত্র হলেন।
হিটলারের দম্ভ তাকে ৪৮,০০,০০০ বর্গ মাইলের মালিকে থেকে ৫০ বর্গ মাইলের মালিক বানাতে সময় নেয় নাই। তবুও তিনি মাথা নত করেন নাই। তিনি মুসলিনের অনুসারী ছিলেন কিন্তু যখন তিনি জানলেন যে মুসলিন পালাতে গিয়ে খুন হয়েছে এবং তার মৃতদেহ নিয়ে মিলানের রাস্তায় উৎসব হচ্ছে তখন তিনি নিজেকে এই পরিণতিতে ফেলতে চাইলেন না, তিনি আত্নহত্যা করলেন। তিনি একমাত্র নিজেকে এই পৃথিবীর ঈশ্বর মনে করতেন, নিজেকেই এই বিশ্বের হর্তাকর্তা মনে করতেন, কখনই অন্যের কাছে নত হতেন না। তিনি মনে করতেন জার্মানীর যদি কেউ কারো কাছে মাথা নত করে তবে সে বিশ্বাসঘাতক, একজন জার্মানী নাগরিক সে কখনই হতে পারেন না।
আজ যদি তিনি তার দম্ভ কমিয়ে স্ট্যালিনের সাথে শান্তিচুক্তি করতেন তবে নিশ্চিত সারা বিশ্ব আজ তার পায়ের তলায় থাকত। না মারা যেতে তার প্রায় ৮ লক্ষ সেনা, না চার্চিল-রুজভেল্ট স্ট্যালিনের সাথে চুক্তিতে বসার সুযোগ। বরং সোভিয়েত ইউনিয়ন হতে পারত জার্মানীর আরেকটা শক্তি। সামান্য দম্ভ বিশ্বে সেরা নায়ক থেকে তাকে মাটির নিচের বাংকারে নামিয়ে এনেছিল, যেখানে তাকে নিজের মাথায় নিজেকেই গুলি করতে হয়।
অন্যদিকে রুজভেল্ট-চার্চিল এই ভুলে না করে নিজের দেশকে সুরক্ষা করেছিলেন। যদিও তাদের ভয় ছিল স্ট্যালিন সুযোগ না পেলে আবার হিটলার না হয়ে বসে।
তবে আমাদের ভাগ্য ভালো যে হিটলার এমন দম্ভ ছিল না হলে তিনি কখন কার উপর চড়াও হতেন তার কোন ঠিক নাই। হুট করে যদি তার মনে হতো যে ইহুদীদের মত তার ভূমিতে হিন্দু বা মুসলিমদের জায়গা নেই তাহলে তো হয়েছিলই। বিষাক্ত গ্যাসে আরো কোটি কোটি মানুষ মারা যেত।
তাই বলছি, নায়ক হয়েও যদি মহানায়ক হতে চান তবে দম্ভ না দেখিয়ে অন্য নায়কদের দেখে নাক না ছিটকানোই ভালো।