২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৮:৩১
ব্রেকিং নিউজঃ

যশোর ডিবি অফিসেই শিশিরকে খুন করে কপালে গুলি:এতিম শিশুর কী হবে?

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ রবিবার, আগস্ট ১১, ২০১৯,
  • 1627 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

ওই রাতেই মাইক্রোতে নির্জন এলাকায় নিয়ে লাশের কপালে গুলি করে বন্দুকযুদ্ধ প্রচার দেয়া হয়েছে>>স্বজনরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন
এবিসি ডেস্ক:যশোর ডিবি অফিসেই মাথা থেতলিয়ে শিশির ঘোষকে হত্যা করে মাইক্রো করে শহরতলীর মাহিদার নির্জন এলাকা কেশবের মোড় সংলগ্ন ইটভাটার সামনে লাশ ফেলে কপালে গুলি করে বহুল আলোচিত এএসআই আলমগীর।হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে সেখানকার এক ইউপি মেম্বার ও স্থানীয় কয়েকজনকে ডেকে ক্রস ফায়ারের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে সাদা কাগজে সাক্ষর আদায় করে ফের লাশ গাড়ীতে তুলে যশোর আড়াইশ বেড হাসপাতাল মর্গে জমা দিয়ে জনরোষের ভয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। হাসপতালের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই তথ্য জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাত ৮টার পরপরই শিশিরকে তার ষষ্টিতলাপাড়ার বাড়ির সামনে থেকে সাদা পোশাকে আলমগীরসহ ৫ জনের একদল ফোর্স সন্ত্রাসী স্টাইলে তাকে ধরে ইজিবাইকে করে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়।এ সময় ষষ্টিতলাপাড়ার বেশকিছু নারী-পুরুষ বাধা দিতে গেলে চিহ্নিত আলমগীর কোমর থেকে পিস্তল বের করে তা উচিয়ে সবাইকে না এগুনোর কথা বলেন। কেউ এগুলে গুলি চালাতে বাধ্য হবেন বলেও হুমকার ছোঁড়েন। তার হুংকারে সবাই পিছু হঠতে বাধ্য হন। আরও পড়ুুন>>যশোরে ডিবি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত নিহত

রাতে পৌনে ১২টার দিকে শিশিরের কাকা তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর ০১৬১১-৬৬৭৯৪৬ খেকে ডিবির ওসি মারুফ আহমেদ’র ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নম্বর ০১৭১৩-৩৭৪১৭১-এ ফোন করেন শিশির ঘোষের কাকা সুনীল ঘোষ। কি কারণে আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য না। এক পর্যায়ে সুনীল ঘোষ জানান, কাউকে আটক করা হলে পুলিশ স্বউদ্যোগে অভিভাবকদের জানানো, কথা বলা ও আই্নজীবী নিয়োগের সুযোগ করে দিতে পুলিশ বাধ্য। এ পর্যাবে তিনি জবাবে বলেন, শিশিরের বিরুদ্ধে কোন পরোয়ানা নেই।কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে এএসআই আলমগীর আটক করে এনেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ সময় শিশিরের কাকা সাংবাদিক সুনীল ঘোষ ওসি মারুফ আহমেদকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর শিশির ও শুভ নামে দুজনকে পুলিশ পা ও হাতে গুলি করে পঙ্গু করে রেখেছেন।
তারপর থেকে শিশিরকে আমার বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছি। তাকে বাথরুমে নিতে বেতন ভাতা দিয়ে একটি ছেলে রেখে বহু কষ্টে সংসার নির্বাহ করছি।বর্তমানে শিশিরেরি এক বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী রয়েছে। তাকে আমি গাইড করি। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি সে কোন অপরাধে জড়িত নেই। কারনে সে একা বাথরুমেও যেতে পারে না।যেকারণে বেতন ভাতা দিয়ে নাইস নামে একটি ছেলেকে রেখে কষ্টে দিন পার করছি। এ সময় তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, না তেমন কিছু হবে না।

সেদিন ডিবির ওসি মারুফ আহমেদ’র কথায় আস্থা রেখে আমি বাড়ি ফিরি। আমার বিশ্বাস জন্মেছিল পুলিশের অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে আটকের কথা স্বীকার করতেন না। কারণ ইতিপুর্বে যশোরে গত কয়েকবছরে দুই শতাধিক আওয়ামী কর্মীকে কথিত ক্রস, বন্ধুক যুদ্ধ, কখনো দুদল মাদক কারবারীর মধ্যে গোলাগুলিততে নিহত হওয়ার কল্প কাহিনী পুলিশ প্রচার করে আসছিল।
ওসি মারুফ আহমেদ’র সাথে যখন সুনীল ঘোষ মুঠোফোনে কথা বলছিলেন তখন শিশিরের মা চায়না ঘোষ ডিবি অফিসের গেটে ছেলের সাথে দেখা করার জন্য গেটের দায়িত্বে থাকা পুলিশকে হাতে-পায়ে জড়িয়ে কান্না করে একবার মাত্র দেখা করিয়ে দেয়ার সুযোগ চান কিন্তু তাকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, আলমগীর স্যার না বলা পর্যন্ত এই কাজটি করতে পারবো না। তার বিনানুমতিতে শিশিরের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করলে চাকরি থাকবে না।

ওসি মারুফ আহমেদ আটকের কথা স্বীকার ও তেমন কিছু হবে না আশ্বাস দেয়ায় সুনীল ঘোষ শিশিরের মাকে বাড়ি চলে আসতে বলেন।ওসি আশ্বস্ত করেছেন কিছুই হবে না বলার পর শিশিরের মা বাড়ি ফেরেন।

পরদিন বুধবার কাকডাকা ভোরে খবর আসে শিশির ঘোষকে ক্রসে হত্যা করা হয়েছে।স্বজনরা দ্রুত হাসপাতাল মর্গে গিয়ে দেখতে পান শিশিরের মাথা থেতলানো এবং কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে যে গুলি করা হয়েছে তা মাথার পিছনপাশ উড়িয়ে নিয়ে গেছে।
তারপর হাসপাতাল থেকে এ্যাম্বুলেন্সে করে ষষ্টিতলাপাড়ার বাড়িতে আনার পথে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে গাড়ী থামিয়ে স্বজনরা পুরো ঘটনা সাংবাদিকদের কাছে বর্ননা করে ন্যায় বিচারে সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেন। এ সময় শিশিরের কাকা সুনীল ঘোষ আলমীগর দারোগার বিরুদ্ধে একটি স্বর্ণের চেইন, ৮ হাজার টাকা ও দুটো হাওয়াই মোবাইল প্রকাশ্যে ছিনতাই করার ঘটনায় একটি ও আলমগীর ও ওসি মারুফ আহমেদ’র বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা করবেন বলে ঘোষণা দেন।
কিন্তু অবাক কান্ড, ঢাকার জাতীয় বেশকিছু প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইনে প্রকৃত ঘটনা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করলেও স্খানীয় কিছু পত্রিকায় পুলিশের শেখানো কল্প কাহিনী প্রকাশ করেছে। শিশির ইয়াবা কারবারী এমন দায়িত্বও পত্রিকাগুলো ঘাড়ে তুলে নিয়েছে, যা সংবাদপত্রের নীতিমালার পরিপন্থী এবং মানবতার প্রতি অবমানবার সামিল। এটা অপসাংবাদিকতা ছাড়া কিছুই না।
যারপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক সুনীল ঘোষ তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন কেউ ইয়াবা কারবারী প্রমাণ করতে পারলে লাখ টাাক পুরস্কার দেয়া হবে।

এদিকে কোতয়ালী পুলিশ শিশির ঘোষকে আটক না করলেও ওসি মনিরুজজামান গণমাধ্যমকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে একজন বহুল আলোচিত পেটি দারোগার বেআইনী ও খুনের দায়ি নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়ে নিজেকে একজন মিথ্যাবাদি ওসি হিসেবে প্রমাণ করেছেন।
তিনি কোন মিডিয়ার কর্মীকে বলেছেন কোতয়ালী পুলিশ তাকে শংকরপুর মুরগী ফার্ম এলাকা থেকে আটক করে অস্ত্রগুলি উদ্ধার করেছে। তার বিরুদ্ধে কখনো বলেছেন ১৬টি কখনো বলেছেন ১৮টি মামলা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শিশিরের বাবা নিত্যপদ ঘোষ জানান, যেসব মামলার কথা বলা হচ্ছে তার সই পেন্ডিং মামলা। এক কথায় কোথাও কোন অপরাধমুলক ঘটনা ঘটলে সেখানে শিশিরকে আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোন মামলার এহাজারে নাম নেই। শিশির প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার।
তিনি বলেন এরআগে ১২ সালের ২৭ জুলাই তার বড়ছেলে প্রদীপ ঘোষকে ক্ষমতাসীন দলের একাংশের ক্যাডারবাহিনী ও থানার দারোগা খলিলুর রহমান  পারস্পরিক যোগসাজসে এমএম কলেজের পাশে কলাবাগান নামক স্থানে একটি বাড়িতে আটকে ফেলে বোমা নিক্ষেপ করে ক্ষতবিক্ষত করে। হাসপাতাল নেয়ার পর পুলিশ ৩ ঘন্টা চিকিৎসা হতে দেয়নি। ৪দিন পর ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার অনুমতি মেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থার প্রদীপের মৃত্যু হয়।

এদিকে ৬ আগষ্ট ষষ্টিতলাপাড়া থেকে আলমগীর দারোগা যখন শিশিরকে আটক করেন, সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন জানান, তারা আলমগীর দারোগাকে ভালভাবে চেনেন। কারণ তিনি যশোরে ইয়াবা দারোগা, ব্লা্কমেইলের ওস্তাদ দারোগা ও খুনি দারোগা হিসেবে বহুল পরিচিত। আলমগীর দারোগা শিশিরকে তুলে নিয়ে যায়। বাধা দিলে তিনি পিস্তুল উচিতে গুলি চালানোর হুংকার দেন। তাছাড়াও ওসি মারুফ ওই রাতেই আটকের কখা স্বীকার করে কিছুই হবে না বলে আশ্বস্ত করেন।যা কললিস্ট যাচাই করে দেখা হলে প্রমাণ মিলবে।

প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে কোতয়ালী পুলিশ শিশিরকে আটক করেনি। করলে ডিবির ওসি মারুফ আহমেদ আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলতেন না। এ থেকে কী প্রমাণ হয় ? কার বক্তব্য সত্য-এ প্রশ্ন আজ সর্বমহলে।তিনি এখন অস্বীকার করলেও পার পাবেন না বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
অস্বীকার করলেই তা সত্যি প্রমাণ হয়ে যাবে এমনটি না উল্লেখ করে সচেতন মহল বলছে দেশটা পুলিশের হয়ে যায়নি ? তার কললিস্ট চেক করলে তার সাথে শিশিরের কাকার ০১৬১১-৬৬৭৯৪৬ নম্বর থেকে দু’জনের মধ্যে কি কথোপকথন হয়েছে তা প্রমাণ হয়ে যাবে।
বাস্তবতা হলো বর্তমানে যশোরের মানুষ ক্রস আতঙ্কে আছেন।
কেউ পুলিশের অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করার সাহস দেখাচ্ছেন না। বুধবার ঢাকার বাংলা ট্রিবিউন ও যুগান্তরসহ বেশকিছু মিডিয়ায় যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট শিশির পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন।
প্রসঙ্গত: গতবছর সদর ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ইয়াবা দারোগা নামে পরিচিত আলমগীর তার কর্ম এলাকা টপকিয়ে ঝিকরগাছা থানা এলাকায় গিয়ে ২ হাজার ইয়াবাসহ এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করেন। ওই মাদক বিক্রেতার বাড়ি যশোর শহরতলী শেখহাটি গ্রামে।
তাকে আটক করে ফাঁড়িতে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তার স্ত্রৗকে ৫ লাখ টাকা আনতে বলেন। টাকা নেই বলাতে নির্যাতন বাড়িয়ে দেন আলমগীর। সে সাফ জানিয়ে দেয় উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিয়ে ফাঁদিতে থাকতে হয়।
এক পর্যায়ে টাকা যোগাড়ে ব্যর্থ হওয়াল ওই মাদক বিক্রেতার স্ত্রীকে জাপটে ধরে ধর্ষনের চেষ্টা করেন বলেন বলে অভিযোগ ওঠে।

সেই ঘটনায় আলমগীরকে কিছুদিন বরখাস্ত করে রাখা হয়।ক্ষতিগ্রস্ত শিশিরের মা চায়না ঘোষ জানান, এই নৃশংস হত্যাকন্ডের বিচার না হলে দেশ ছেড়ে চলে যাবো।
তিনি আরও বলেন, শিশিরের এক বছরে শিশুপুত্র মৃত্যঞ্জয়ের কি হবে ? কি হবে তার স্ত্রীর ?
তিনি এসব প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বিষয়টির বিচার বিভাগীয় তদন্ত করাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি শিশির হত্যাকান্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দুই ওসি ও খুনি আলমগীর পার পাবে না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আলমগীরের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »