পিরোজপুরের নাজিরপুরে এক হিন্দু বিধবা নারীর আকুতি শোনার কেউ নেই। স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ যেন টাকার কাছে বন্দি হয়ে পড়েছেন। ওই বিধবা নারীর উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন সরকারি খাস জমিতে থাকা দোকান ঘর অবৈধভাবে দখল করে নেয়ার পায়তারা করছে এক প্রভাবশালী। এ ঘটনায় অসহায় হিন্দু পরিবারটি প্রভাবশালীদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে ভুক্তভোগী পরিবারটির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত প্রায় ৩০ বছর পূর্বে ২ বছরের একমাত্র পুত্র সন্তান রেখে স্বামী মুকুন্দ বিহারী হালদার মারা গেলে বড়ই অসহায় হয়ে পড়েন সুষমা হালদার। জীবীকার তাগিদে বাড়ীর সামনে নাজিরপুর উপজেলা হাসপাতাল সড়কের পাশে একটুকরো সরকারি খাস জমিতে টংঘর তুলে সেখানে চা-পানের দোকান শুরু করেন। মাকে সার্বক্ষণিক দোকানে সহযোগিতা করতে গিয়ে লেখা-পড়া করতে পারেনি ছেলে রতন হালদার। বিগত ৪/৫ বছর আগে টংঘরের নিচে বালু ভরাট দিয়ে দোকান ঘর তুলে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করেন। এক পর্যায়ে উপজেলা ভূমি অফিস ওই দোকানের জায়গা সদর বাজারের আওতাভূক্ত করে নেয়। তখন সুষমার ছেলে রতন হালদার অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতো তাদের দখলে থাকা দোকানের জায়গা ভিটি হিসেবে বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরে আবেদন করেন। তৎকালীন উপজেলা সহকারি কমিশনারের (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তবিবুর রহমান সার্ভেয়ার ও তহশীলদারকে আবেদনের বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। ওই সময়ে সদর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীসহ রাজনৈতিক নেতাদের নামে বেনামে ভিটি বরাদ্ধ হলেও রতনের ওই আবেদন আলোর মুখ দেখেনি।
কয়েকদিন ধরে উপজেলা সদরের পাতিলাখালী গ্রামের বজলুর রহমান হাজরার ছেলে কামরুল হাজরা বিগত ৩০ বছর ধরে বিধবা সুষমা হালদারের দখলে থাকা দোকান ঘরের জায়গা নিজের দাবী করে দখল ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। এ ঘটনায় অসহায় সংখ্যালঘু পরিবারটি দিশেহারা হয়ে প্রভাবশালীদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে জানতে পারেন, কামরুল হাজরা ওই জায়গা কিনে নিয়েছে। জায়গা না ছাড়লে কামরুলের সাথে সমঝোতা করার পরামর্শ দেন প্রভাবশালীরা।
এ প্রসঙ্গে সুষমার ছেলে রতন হালদার বলেন, ‘কামরুল আমার দোকানের জায়গা ছেড়ে দেয়ার চাপ দিলে আমি ভূমি অফিসে খোজ নিয়ে জানতে পারি- দোকানের ওই জায়গা আমাকে বন্দোবস্ত না দিয়ে ইতিপূর্বে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা পাশ্ববতী উপজেলার নেছারাবাদের সুটিয়াকাঠী গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের শ্বশুর ও স্ত্রীর নামে এক সনা লিজ দেয়া হয়। গত বছর শহিদুল ইসলাম মারা গেলে তার শ্বশুর অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুল হক ও স্ত্রী ফারহানার কাছে ওই জায়গা কিনে নিয়েছে বলে কামরুল হাজরা দাবী করেন। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীদের জানালে তারাও আমাকে জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুল হাজরা বলেন, ‘আমি সাবেক উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার শহিদুল ইসলামের শ্বশুর ও স্ত্রীর নামে বরাদ্ধকৃত জায়গা কিনে নিয়েছি। আমি যাতে জায়গাটা দখল করতে পারি সে ব্যাপারে আমাকে সহায়তা করুন।’
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শামীম কিবরিয়া বলেন, ‘খাস জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’