পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নে এক পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের দাবীতে গৃহবধু তানিয়া (২০) কে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করার চেষ্টা করেছে । গত শনিবার রাতে নির্যাতিতার বাবা এ ঘটনায় দশমিনা থানায় নারী ও শিশু আইনের ১১(ক)৪(১)এর সংশোধিত ৩০ ধারায় মামলা করেছেন । মামলা নং ০২/২০১৭ ।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র এবং দশমিনা থানা থেকে জানা যায়, দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মালেক শরীফের মেয়ে তানিয়া বেগমের (২০) সাথে ৪নং ওয়ার্ডের মালেক মুন্সীর ছেলে ইব্রাহীম মুন্সীর (২৩)সাথে দুই বছর আগে পারিবারিক ভাবেই আনন্দ আয়োজনে বিয়ে হয় । বিয়ের বেশ কিছুদিন পরেই যৌতুক ও নানা অজুহাতে স্বামী ও শ্বশুর পরিবারের সদস্যরা তানিয়ার উপর নির্মম নির্যাতন শুরু করেন । দাবীকৃত একলক্ষ টাকা যৌতুক না পেয়ে গত ৬ অক্টোবর স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় । এতে শরীরের অধিকাংশ ঝলসে যায় । পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এবং বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শ্বশুর বাড়ীর লোকজন প্রথমে পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাউফলে হাতুরে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে অবস্থা আরও সংকটাপন্ন করে তোলে । পরে বরিশাল এবং ঢাকায় নিয়ে কোন উন্নতি না দেখে বাড়ীতে নিয়ে আসে । খবর শুনে তানিয়ার বাবা মা অত্র ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেনকে ঘটনাটি জানায় । চেয়ারম্যান বিষয়টি থানায় অবহিত করলে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে গত ১১ নভেম্বর শনিবার রাতে তানিয়াকে উদ্ধার করে দশমিনা থানা সংলগ্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । হাসপাতালের দায়িত্বরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মুমূর্ষ অবস্থায় তানিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে দেখা যায় তার শরীরের ৩০ শতাংশ আগুনে ঝলসে গেছে । তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বার্ণ ইউনিটে রেফার করেছি কিন্তু তার অসহায় বাবা মা অর্থের অভাবে নিতে পারছে না ।
তানিয়ার ৫মাস বয়সী একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে ।সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে তানিয়ার নাভীর উপরের অংশ সম্পূর্ণ ঝলসে যাওয়ায় শিশুটি বুকের দুধ পান করতে না পারায় ক্ষুধায় কাঁদছে । এ বিষয় দশমিনা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মোস্তফা বলেন, নাভী থেকে উপরের গলা পর্যন্ত আগুনে সম্পূর্ণ ঝলসে যাওয়ায় তানিয়া বেঁচে গেলেও এই অবুজ শিশুটিকে আর কখনও বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে কিনা সন্দেহ ।তানিয়ার দিনমজুর বাবা মালেক শরীফ ও অসহায় মা মাহিনুর বেগম এই হত্যা চেষ্টার উপযুক্ত বিচার দাবী করেছে ।
দশমিনা থানা সূত্রে জানা যায়, তানিয়ার বাবা মালেক শরীফ বাদী হয়ে তানিয়ার স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুরীকে আসামী করে গত শনিবার মামলা করেছেন । এ বিষয়ে দশমিনা থানার নবনিযুক্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রতন কৃষ্ণ রায় চৌধুরী জানান, বিভৎস্য ভাবে মেয়েটিকে আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে । ইতি মধ্যেই তানিয়ার শ্বাশুরী ফাতেমা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে । বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে । মামলার তদন্তকারী অফিসার এস.আই আঃ ওহাব ।