ইসলামি মৌলবাদের হাত থেকে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একদল বাংলাদেশি হিন্দু। এ দাবিতে নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশি হিন্দুদের ছোট একটি গ্রুপ।
এই র্যালির আয়োজক ছিলেন সীতাংশু গুহ। তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছি। এখন আমরা তাকে এটা বলতে চাই যে, বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অব্যাহতভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।’
কনকনে শীত উপেক্ষা করে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন স্থান থেকে এ র্যালিতে যোগ দেন বাংলাদেশি হিন্দুরা। এ সময় তাদের হাতে ইংরেজিতে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এগুলোতে লেখা ছিল, ‘হিন্দু নিপীড়ন বন্ধ কর’; ‘শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ট্রাম্পের আমেরিকাই সর্বোত্তম প্রত্যাশা’; ‘বাংলাদেশি হিন্দুদের রক্ষা করুন’।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা এবং সাঁওতাল হত্যাসহ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিস্তারিত তুলে ধরে তারা ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবর একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি হিন্দু, বৌদ্ধ,খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নাবেন্দু দত্ত ঘোষণা করেন, একই ইস্যুতে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউসের সামনে আরেকটি র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
বিক্ষোভ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবর পাঠানো স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমাদের বিশ্বাস আপনি একজন ব্যাপক সংবেদনশীল মানুষ। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের শোচনীয় অবস্থা মোকাবিলায় আপনি একটা সমাধান খুঁজে বের করবেন। মার্কিন নাগরিক হিসেবে আমরা নির্বাসিত বাংলাদেশি। বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুরা প্রতিদিন যে ব্যথা ও ভয়ের মুখোমুখি হন,সেই যন্ত্রণা আমরাও অনুভব করি।’
স্মারকলিপিতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার ক্ষমতা ও কূটনীতির মাধ্যমে দুনিয়াজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সুরক্ষা প্রদান করে। বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের সুরক্ষা দিতে আমরা আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও বাস্তবে তারা একটি জাতিগত নিধনযজ্ঞের পথ অনুসরণ করছে; যা প্রায় ৭০ বছর আগে পাকিস্তান করেছিল।
এ স্মারকলিপিতে বাংলাদেশি হিন্দুরা সাতটি পয়েন্টে বাংলাদেশকে চাপ দিতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। এ পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, সংখ্যালঘুদের জন্য কমিশন গঠন, বিদ্বেষমূলক অপরাধের তদন্তে বিশেষ একটি বিচারিক শাখা গঠন এবং তাদের ক্ষমতা দিয়ে হেট ক্রাইম ও সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলোর মীমাংসা করা।
এ স্মারকলিপির একটি কপি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। এতে বাংলাদেশের ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের পার্লামেন্টে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব দাবি করা হয়েছে। যেসব জেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য রয়েছেন, সেখানে তাদের জন্য টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্তির কথা বলা হয়েছে, যেখানে ‘হিন্দুদের একচেটিয়াভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত’ করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘আমরা প্রস্তাব করছি, বাংলাদেশ সরকার যেন ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংবেদনশীলতার প্রসারে একটি শিক্ষামূলক কর্মসূচি চালু করে।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক হিসেবে আমরা আপনি এবং আমাদের সম্মানিত আইনপ্রণেতাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিতের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার যেন তার ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় পূর্ণ করে।’
উল্লেখ্য, এর আগ চলতি মাসের গোড়ার দিকে একই ইস্যুতে জাতিসংঘের সামনে এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।