হিন্দুরা বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি বানিয়ে পূজার অনুষ্ঠান করে কেনো ? আপনি আপনার স্ত্রী বা প্রেমিকাকে প্রতিদিনই ভালোবাসেন, তারপরও যে কারণে ১৪ই ফেব্রুয়ারি তাকে একটি বিশেষ উপহার বা গোলাপ ফুল দেন; আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে আমরা খুব ভালোবাসি, তারপরও যেকারণে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমরা শহীদ মিনার বানিয়ে তাতে ফুল দিই; আমরা আমাদের দেশকেও খুব ভালোবাসি, তারপরও যেকারণে একটি বিশেষ দিনে, যেমন- বাংলাদেশে ১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস), ২৬ মার্চ(স্বাধীনতা দিবস) এবং ভারতে ১৫ আগস্ট (স্বাধীনতা দিবস), ২৬ জানুয়ারি (প্রজাতন্ত্র দিবস)- এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের রূপ দিই, মূর্তি বানিয়ে বিশেষ দিনে দেব-দেবীর পূজার অনুষ্ঠান আসলে সেই, বিষয়টিকে মনে করিয়ে দেওয়া এবং আগামি প্রজন্মের স্মৃতির মধ্যে তাকে সঞ্চারিত করা, যাতে তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলতে থাকে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর যে প্রভাব বা অবদান, সেই অবদানকে শ্রদ্ধা ভক্তি দেখানোর জন্য না হয় দেব-দেবীর পূজার ব্যাপারটা বোঝা গেলো, কিন্তু গ্রহ নক্ষত্রের পূজা করার কারণ কী, গ্রহ নক্ষত্র তো আর এই পৃথিবীতে বা প্রকৃতিতে নেই ?
প্রকৃতির শক্তিগুলোর আমাদের উপর যে প্রভাব, সেটা বাস্তব অর্থাৎ সেটাকে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই, যেমন- কাউকে যদি জল খেতে দেওয়া না হয় সে আস্তে আস্তে মারা যাবে বা কাউকে এয়ারপ্রুফ ঘরে রাখা হলে সে দম আটকে মারা যাবে; কিন্তু আমাদের জীবনে গ্রহ নক্ষত্রের যে প্রভাব, সেটা আমরা কখনো চোখে দেখতে পাই না, মনে মনে ফিল করতে পারি, যেমন- আত্মাকে আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু এটা বুঝতে পারি যে আত্মা আমাদের দেহে আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি, তাই এই ব্যাপারটাকে বলা যেতে পারে আধ্যাত্মিক। এ প্রসঙ্গে এটাও বলে রাখি যে, আত্মা সম্পর্কিত ব্যাপারই আধ্যাত্মিক।
পৃথিবীতে একটা মানুষের যখন জন্ম হয়, তখন সে- যে দেশে, যে পরিবেশ, যে পরিবারে জন্ম নেয় এবং সেই সময় আকাশে গ্রহ নক্ষত্রের যে অবস্থান, সেটাই তার ভাগ্য। মানুষের এই ভাগ্যকে বিচার করার জন্য পৃথিবীকে কেন্দ্র ধরে পৃথিবীর চারপাশের আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যাদেরকে বলা হয় রাশি। আবার দিন রাতের ২৪ ঘণ্টাকে ১২ টি ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগকে বলা হয়েছে এক একটি লগ্ন যা পড়ে কোনো না কোনো রাশিতে। এখন কোনো মানুষ যখনই জন্ম গ্রহন করুক, সেই সময় অনুযায়ী, সে পাবে একটি লগ্ন এবং সেই লগ্নকে ১ নং ঘর ধরে হিসেব করে মোট ১২ টি ঘরে কোন কোন গ্রহ অবস্থান করছে, তার উপর ভিত্তি করে তার জীবন কিভাবে বা কেমন যাবে, সেই ভবিষ্যদ্বানী করা হয়। এছাড়াও একেকটি ঘর মানুষের চরিত্র বা জীবনের একেকটি বিষয়কে নির্দেশ করে। যেমন লগ্ন বা প্রথম ঘর অনেক কিছুর সাথে বোঝায় মানুষের দেহকে, চতুর্থ ঘরকে অনেক কিছুর সাথে বোঝায় সংসারের সুখ ও পিতা বা মাতাকে এবং ৭ম ঘরকে বোঝায় দাম্পত্য সঙ্গী অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রীকে। অন্যদিকে গ্রহগুলোর মধ্যে কয়েকটি মানুষের জন্য সব সময় শুভ এবং কয়েকটি সব সময় অশুভ। যেমন শনি গ্রহ সব সময়ই অশুভ বা খারাপ ফল দেয়। এখন এই শনি গ্রহ যদি প্রথম ঘরে থাকে, তাহলে হয় সেই ব্যক্তির গায়ের রং কালো হবে বা দেহের কোনো না কোনো খুঁত থাকবে বা রোগাপাতলা হবে; চতুর্থ ঘরে শনি থাকলে সংসারের সুখ সে খুব একটা পাবে না বা পিতা-মাতার সাথে তার মনের মিল থাকবে না; আবার ৭ম ঘরে শনি থাকলে সে দাম্পত্য জীবনের সুখ খুব একটা পাবে না।
একটা মানুষের জন্মের সময়ই নির্ধারিত হয়ে যায় যে, সে কী পাবে না বা কী সে পাওয়ার যোগ্য; এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা মানুষের নেই। মানুষ শুধু জ্যোতিষ শাস্ত্রের মাধ্যমে সেটা জেনে তার খারাপ বিষয়গুলোকে কিছুটা প্রশমিত এবং ভালো বিষয়গুলোকে কিছুটা
স্পিড দিতে পারে মাত্র। যার ডাক্তার হওয়ার যোগ বা সম্ভাবনা নেই, তাকে জোর করে মেডিক্যালে পড়ালেও যেমন সে খুব ভালো বা নামী দামী ডাক্তার কখনোই হতে পারবে না; তেমনি যার রাজযোগ নেই, সে রাজনীতি করলেও কখনো মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না।