শেখ শামসুন্নাহার ইতি : ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি। টরন্টোতে যে মসজিদে আমি নামাজ পড়ি, সেই মসজিদের টাকা আসে সব হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, গে, আস্তিক, নাস্তিক, সবার ট্যাক্স এর টাকা থেকে। এত অহংকার কি দিয়ে করবেন? মুসলিম হবার অহংকার !!! অন্য ধর্ম কে ছোট করে, অন্য কে গালি দিয়ে কি নিজে বড় হওয়া যায়?
একবার, ঈমাদের যখন ২ বছর বয়স, আমার বান্ধবীর ছেলের জন্মদিনে গেলাম। খোদ টরন্টোতে সেই জন্মদিনে, এক হুজুর দোয়া পড়াচ্ছেন, তিনি কিন্তু, ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স পাশ করা (বাংলাদেশ এবং কানাডা দুই দেশ থেকেই) । তিনি দোয়া পড়াতে গিয়ে মোনাজাতে বললেন, ” হে আল্লাহ্ এই দেশের কাফেরদের হাত থেকে আমাদের সন্তান দের রক্ষা করো ” । সাথে সাথে আমি হাত নামিয়ে ফেললাম। আমার মনে হল ভুল হুজুরের মোনাজাত আমি করবো না।
কারন , উনাকে কি কানাডার সরকার পায়ে ধরে এই দেশে এনেছিল? নাকি গায়ে পড়ে এসেছিলেন? বাহ, যেই দেশের খাবে-পরবে , সেই দেশকেই গালি দিয়ে কাফের বলবে? যার বিন্দুমাত্রও ভদ্রতা বোধ নাই, তার মোনাজাত আমি করি না। আজ মনে হচ্ছে আমি ঠিক কাজ টাই করে ছিলাম।
কোথায়, আমার মসজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তো কনো ভিন্ন ধর্মের কেউ বলে না যে আমি মুসলিমদের জন্য কাজ করবো না । বরং পরম যত্ন নিয়ে ঈদ, রোযা, জুম্মার নামাজসহ সব উৎসবে আমাদের সব সুবিধা নিশ্চিত করে। রোযার সময় আমরা রাত ১২ টায় নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরি। আমার সোনার বাংলাদেশে কি এটা সম্ভব?
যতদিন পর্যন্ত না ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কে সমান সন্মান করতে না শিখবো , ততোদিন পর্যন্ত আমরা পিছিয়ে পড়া সমাজের কাতারেই থাকব। আমাদের মুক্তির পথ পবিত্র কোরআনে পরিস্কার করে বলে দেয়া আছে , ” লা কুম দিনু কুম ওয়াল ইয়া দিন” মানে , ” যার যার ধর্ম তার তার কাছে”। “Lakum Dinukum Waliyadin…”for you,your religion,for me my religion… প্রকৃত মোসলমান মানেই সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করা… শুধু নামাজ পড়লেই মুসলিম হওয়া যায় না…
বাংলাদেশটা শুধু মাত্র মুসলমান ভাইদের না। ১৯৭১ সালে সব ধর্মের সবাই মিলেই এক সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন করে ছিল। আর আমাদের মুসলমান ভাইরাই আমাদের মেয়েদের মসজিদে ধর্ষণ করে ছিলো। এত সহজেই সেই ইতিহাস ভুলে গেলেন ????
আমাদের তণু কিন্তু “হিজাব ” পরাই ছিলো, ওকেউ হত্যা করা হয়ে ছিল ধর্ষণ করেই। কোথায় ছিল তখন আপনার সেই ধর্মের অহংকার ???
আপনি, আমি বাংলাদেশের যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে আজ দুই কলম লিখতে শিখে ” শিক্ষিত” হয়ে গেছি ( !!!! ) তার টাকাটাও কিন্তু, এই সব হিন্দু, বৌদ্ধ , খৃষ্টান, গে, আস্তিক, নাস্তিক, ভিক্ষুক, বারবনিতা, হিজড়া, রিকসা ওয়ালা, গারমেন্টসের শ্রমিক এদের সবার ট্যাক্স এর টাকা দিয়েই হয়েছে!!!
কোথায় একবার ও কি বলেছিলেন , ” আমি এই অসূচী টাকার সরকারী সাহায্য নিব না ” ???
না কি টাকার বেলায় সব “পবিত্র- মুসলিম টাকা” হয়ে যায় ???
না কি শুধু টাকারই ধর্ম নাই ?? রাষ্ট্র , সমাজ, মানুষের বেলায় মনুষত্য বাদ দিয়ে শুধু ধর্ম প্রধান হয়ে যায় ???
কোথায়, ১৯৭১ সালে তো ছিল না । যদি থাকত , তবে ওই হিন্দুদের ভাত খেয়ে ছিলেন কি করে??? গলা দিয়ে নেমে ছিল??? আহা ! কি মধুর তত্তকথা !!! অই দিকে আমি আরেক বাড়ীর পড়শীর জন্য কেঁদে ভেসে যাই আর এই দিকে পূজার মণ্ডপ ভেঙ্গে বাপ-দাদার ভিটামাটি থেকে তাড়াই … শুধুই সরকারকে দোষ দিয়ে পার পাবো ???
সমাজের মানুষ হিসেবে যখন আমার মনুষত্য নাই, তবে একা সরকার ধুয়ে পানি খাই। “যত দোষ , নন্দ ঘোষ ” – আর আমি হচ্ছি মুসলিম ” তুলসী পাতা”। ভালো তো ভাল না ???
আচ্ছা সৌদিআরবে যখন আমার দেশের গরীব নারীদের ধর্ষণ করে, আবার সেই অসহায় নারী কে “জেনা” করার জন্য জেল এ দেয় , তখন আমার মুসলমান ভাইরা কী করেন ??? এই জন্য তো বাদজুম্মা কোনো প্রতিবাদ মিছিল হয় নাই । কি হইছে ??? না কি মুসলিম রাষ্ট্রের মুসলমান ভাইদের ধর্ষণ ও হালাল ( জায়েজ আছে ) ???
মহান আল্লাহ্ পাক এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য, ধর্মের নামে অন্ধ হয়ে সমাজে, রাষ্ট্রে অশান্তি তৈরী করার জন্য না।
আজ কে আমি, আমরা সবাই মিলেমিশে কানাডার মতো সুন্দর দেশে থাকতে পারছি শুধু মাত্র সব ধর্মের সবার সমান অধিকার সমান থাকার জন্যই । আমি বিশ্বাস করি , আমার বাংলাদেশেও সবার মধ্যে এই সভ্যতাবোধ টুকু কাজ করবে।
কানাডায় যদি গির্জায় নামায পড়ার জন্য মুসলিমদের জন্য জায়গা হতে পারে তবে আমি নিশ্চিত বাংলাদেশে অন্তত মসজিদে পূজা করতে না দিন, ঘৃণিত অমানুষের মতো মন্দিরের পূজার মন্ডপ ভেঙে নিজের ভেতরের পশুটাকে আরো হিংস্র করবেন না ( ভুলে যাবেন না ২ দিন আগেই কোরবানীর ঈদে মনের পশু কেই কোরবানি করেছিলেন, পবিত্র ধর্ম ইসলাম কিন্তু তাই বলে)।
আর তাই, “ধর্ম যার যার উৎসব সবার…”
সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা
লেখকের ফেসবুক পোষ্ট