হিমালয় দুহিতা নেপাল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে। ২০১৮ সালের ১৫ই মার্চ, নেপাল একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্ট্যাটাস অর্জন করেছে। পাশাপাশি, তারা টুয়েন্টি-২০ আন্তর্জাতিক স্ট্যাটাসও অর্জন করে ফেলেছে।
বিগত দুই-আড়াই দশক ধরে আমরা ভারতীয় ক্রিকেটে অর্থের দাপট দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু ভারতীয় দলের যে পারফরম্যান্স- তাতে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছে যে, এই সমস্ত পেপার টাইগারদের পিছনে হাজার হাজার কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করে কি লাভ! মাত্র কয়েক দিন আগে আমরা দেখেছি, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত মাত্র ৩৬ রানে অল আউট হয়ে গেছে। সেই সচীন তেণ্ডুলকার থেকে আজকের বিরাট কোহলি― অন্ধভক্তরা যাদের দেবতার আসনে বসিয়েছে, এরা আসলে বড় ম্যাচের চাপ সহ্য করতে ব্যর্থ।
নেপালি ক্রিকেটে তীব্র অর্থ-সঙ্কট। নেপাল কমিউনিস্ট-আক্রান্ত, গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত হতদরিদ্র দেশ। ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা, উচ্চ-সম্মানী দিয়ে যোগ্য প্রশিক্ষক নিয়োগ করতে পারে না; তা সত্ত্বেও নেপালে উঠে এসেছে কমপক্ষে তিনজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার।
প্রথম যে নেপালি ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনামে উঠে আসে, সে সন্দীপ লামিচানে। এই উদীয়মান লেগস্পিন-গুগলি বোলার-কে, ক্রিকেট কিংবদন্তী শেন ওয়ার্নের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যদিও নেপালি ক্রিকেটে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে যার নিরলস প্রচেষ্টায়, তার নাম পরস খডকা। এই বর্ষীয়ান ব্যাটিং-অলরাউন্ডারের খেলা দেখলে, আমার মনে পড়ে যায়- ১৯৮৩ সালে ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক মহিন্দর ভরদ্বাজ অমরনাথের খেলা।
মহিন্দর অমরনাথের মতোই পরস খডকা, নেপালি ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের অনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে, কর্তৃপক্ষের রুদ্ররোষে পতিত হয়েছে এবং তাকে অধিনায়কের পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে। পরস খডকা দৃঢ়কন্ঠে মিডিয়ার সামনে বলেছে, “কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা উঠে আসতে পারছেনা। কর্তৃপক্ষের এই আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা, নেপালি ক্রিকেটকে পিছিয়ে দেবে..”
নেপালে উঠে এসেছে একজন জেনুইন ফাস্ট বোলার, শ্যামপাল কামি। মাঝারি গড়নের এই তরুণ ফাস্ট বোলারকে দেখে বোঝার উপায় নাই যে, সে হরহামেশা ১৪৫ – ১৪৬ কিলোমিটার বেগে বল করতে পারে। আশির দশকে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারদের দাপটে হেন দেশ নেই, যে দেশের ব্যাটসম্যানরা রক্তাক্ত না হয়েছে। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা অহঙ্কারে, অন্যান্য দেশের ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে হ্যামলেট ছাড়া খেলতেন। তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবাগত শ্রীলংকার ফাস্ট বোলার রুমেশ যোসেফ রত্নায়েকে, একটি ওয়ানডে ম্যাচে দু’জন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানকে আহত করে মাঠের বাইরে চলে যেতে বাধ্য করেছিলেন। রুমেশ রত্নায়েকের মতোই শ্যামপাল কামি, লেট অর্ডারে দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে পারে। এছাড়াও অধিনায়ক জ্ঞানেন্দ্র মল্ল ও বিনোদ ভাণ্ডারী, মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান। বোলিং-অলরাউন্ডার করণ কুমার ছেত্রী, ভারতের রজার বিনির সঙ্গে তুলনীয়।