২৭শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ১:৩৪

স্বামীকে হত্যায় ৫ পুরুষকে নিয়ে স্ত্রীর অবিশ্বাস্য ফাঁদ!

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, ডিসেম্বর ২, ২০১৭,
  • 551 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

দেনমোহর না বাড়িয়ে উল্টো তালাক দেয়ার হুমকি-ধমকি দেয়ার কারণে অবিশ্বাস্য চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে ফাঁদ পেতে চট্টগ্রামে আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীকে হত্যা করেছে তার স্ত্রী রাশেদা বেগম।

তার পরিকল্পনা এবং উপস্থিতিতেই নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এতে অংশ নেয় রাশেদার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হুমায়ুন রশীদসহ আরও ৫ জন।

ঘটনার দু’দিনের মাথায় রোববার রাতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লায় ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে রাশেদা বেগম ও হুমায়ুন রশীদকে গ্রেফতার করে। এরপর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আরও চারজনকে।

গ্রেফতারের পর রাশেদা পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে।

সোমবার সন্ধ্যায় পিবিআই এক ব্রিফিংয়ে আসামিদের গ্রেফতার অভিযানের বর্ণনা দেয়। ব্রিফিং করেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মইনুদ্দিন।

এ সময় বলা হয়, বাপ্পীকে হত্যার সময় হত্যাকারীরা অভিনয় করে। হত্যাকাণ্ডের পর রাশেদা খুনিদের হাতে তুলে দেয় পাঁচ হাজার টাকা। রাশেদার নির্দেশেই বাপ্পীর গোপনাঙ্গ কেটে নেয় কিলিং মিশনের সদস্য রুবেল।

মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

বাপ্পী খুনের ঘটনায় গ্রেফতার অন্য চারজন হল- বরগুনার আল আমিন, খাগড়াছড়ির পারভেজ, নোয়াখালীর আকবর হোসেন প্রকাশ রুবেল ও বরিশালের জাকির হোসেন ওরফে মোল্লা জাকির।

যে কারণে হত্যা : পিবিআই জানায়, বিয়ের পর রাশেদার কার্যকলাপে অতিষ্ঠ বাপ্পী তাকে তালাক দেয়ার হুমকি-ধমকি দেন।

দেনমোহর অল্প টাকা হওয়ায় যে কোনো সময় বাপ্পী তাকে (রাশেদাকে) তালাক দিয়ে দিতে পারেন- এ ভয়ে বাপ্পীকে দেনমোহর বাড়ানোর জন্য চাপ দেয় রাশেদা। ১০ লাখ টাকা বা কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা ধার্য করার জন্য চাপ দেয়।

কলহের একপর্যায়ে পরস্পরের মামলায় দু’জনই জেল খাটে। বাপ্পী জামিনে বের হওয়ার জন্য আদালতে একটি তালাকনামা উপস্থাপন করলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে তালাক বা ডিভোর্স হয়নি।

পিবিআই সূত্র জানায়, এরই মধ্যে রাশেদা চাতুরীর আশ্রয় নেয় বাপ্পীকে বাগে আনতে। অতীতে যা হয়েছে তা ভুলে যেতে বলে বাপ্পীকে। বাপ্পীও সরল বিশ্বাসে রাশেদার কথায় সায় দেন।

যেভাবে ফাঁদ পাতে রাশেদা : মঙ্গলবার রাশেদা তার বন্ধু হুমায়ুনকে নিয়ে চকবাজার কে বি আমান আলী রোডের বাসাটি (যেখানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়) ভাড়া নেয়।

শুক্রবার রাতে বাপ্পীকে ফোন করে নতুন বাসায় যেতে বলে রাশেদা। কথামতো বাপ্পী সন্ধ্যায় ওই বাসায় যান। রাত ১০টার দিকে হুমায়ুন কবিরসহ অপর ৪ জন ওই বাসায় যায়। গিয়েই তারা বাপ্পীকে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বলে। দেনমোহর বাড়ানোর জন্যই ওই স্ট্যাম্পে সই নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

রাশেদার জড়িত থাকার বিষয়টি যাতে বাপ্পী বুঝতে না পারেন সে জন্য হুমায়ুন রশীদ রাশেদার গলায়ও ছুরি ধরে কোনো ধরনের চিৎকার না করতে বলে।

এ সময় ভয়ে বাপ্পী চিৎকার করতে চাইলে সবাই মিলে বাপ্পীকে ধরে হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন বাপ্পী। চোখেমুখে পানি দিয়ে হুশ ফেরানোর চেষ্টা করে।

হুশ না ফেরায় হুমায়ুন রশীদ চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে রাশেদা বলে, ‘আমার কাজ না করে যাও কেন ভাই। আমি যখন তাকে পাব না অন্য কোনো নারীও যাতে তাকে না পায় সে জন্য তার গোপনাঙ্গ কেটে নাও।’

হুমায়ুন এতে রাজি না হলেও রুবেলসহ অন্যরা রাজি হয়। হুমায়ুন রাশেদাকে বলে, ‘তুমি মেয়ে মানুষ দ্রুত বের হতে পারবে না। ওরা কাজ করে আমাদের জানাবে। আমরা চল যাই।’

এরপর রাশেদা ও হুমায়ুন রিকশায় বহদ্দারহাট চলে যায়। বাপ্পীর গোপনাঙ্গ কেটে নিয়ে ছবি তুলে রাখে রুবেলসহ অন্যরা। পরে ফোনে বিষয়টি হুমায়ুনকে জানায়।

হুমায়ুন তখন তাদের বহদ্দারহাট আসতে বলে। অপর চারজন বহদ্দারহাট এলে তাদের হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেয় রাশেদা। এরপর রাশেদা ও হুমায়ুন চলে যায় রাশেদার এক বোনের বাসায়। সেখান থেকে পরদিন দু’জন কুমিল্লা চলে যায়।

পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিং করে কুমিল্লার মিয়াবাজার থেকে রোববার গভীর রাতে রাশেদা ও হুমায়ুনকে গ্রেফতার করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নগরীর ইপিডেজ এলাকা থেকে অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। সূত্র: যুগান্তর।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »