ব্রাত্যজনের দর্শন–পর্ব ০১♪ লেখকঃ ভানুলাল দাস
—————————————————————–
বাঙালি হিন্দুসমাজে ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কোন দ্বিজবর্ণ নেই, কিন্তু শুদ্রবর্ণের মধ্যে ৩৬ জাতি মতান্তরে ৪১ জাতির দেখা মেলে। ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য এরা হচ্ছে দ্বিজবর্ণ, কারণ শুদ্রের চেয়ে এদের উপনয়ন নামক একটি অতিরিক্ত সংস্কার রয়েছে। উপনয়নের পর এরা গায়ে পবিত্র সূতার পৈতা ধারন করে, এর ফলে নাকি ওরা দ্বিতীয় জনম লাভ করে দ্বিজ হয় এবং কপালে উপনয়ন নামক ৩য় একটি চক্ষু খুলে!
শুদ্রের ৩৬ বা ৪১ জাতি আবার কায়স্থ, বৈদ্য, বণিক, সুত্রধর, কর্মকার, বারুজীবি, মালাকার, রঞ্জক, নমঃশুদ্র, চর্মকার,ডোম, মেথর ইত্যাদি উত্তম, মধ্যম ও অধম সংকরজাতিতে বিভক্ত। এই শঙ্কর বা মিশ্রজাতি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি হিন্দু সমাজ। এই জাতিগুলো সবই শুদ্রজাতির অন্তর্গত, এদের কারো দ্বিজত্ব নেই অর্থাৎ পৈতাধারী নয়। অথচ কতিপয় উত্তম বর্ণসংকর উন্নাসিকতায় ভোগেন। নিজেদের শুদ্রাপেক্ষা উচ্চতর মনে করেন, যদিও তাদের এমন মনোভাবের সপক্ষে কোন শাস্ত্রীয় প্রমাণ কিংবা ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
বাঙালি হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণ ও শুদ্র ব্যতিত চতুর্বর্ণের অন্য দুই জাতি তেমন নাই। বর্ণসংকর, ব্রাত্যজন তথা অনার্যদের নিয়ে বৃহৎ শুদ্রমন্ডলী গঠিত।
ব্রাহ্মণ্যবাদী ও তাদের অনুচররা নিজেদের সুবিধাবাদ, শ্রেণীস্বার্থ, অর্থনৈতিক ফায়দা ও অন্যার্য সামাজিক সম্মান সুরক্ষার্থে ভ্রান্ত মতামত দিয়ে অনার্য সমাজকে হাজারো ভাগে বিভক্ত ও খন্ডিত করে রেখেছে, যাতে তাদের অযৌক্তিক ধর্ম-আর্থ-সামাজিক সুবিধা খোয়াতে না হয়। কারণ, নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ট অনার্যরা অধিকার সচেতন হলে স্বার্থান্বেষী কর্তৃক প্রবর্তিত এই জাতপাত বিষয়ক মানবতা ও বিজ্ঞান বিরোধী মতবাদের কবর রচিত হতে বাধ্য। ফলশ্রুতিতে, এই কায়েমী স্বার্থান্বেষীদের সুবিধাবাদের ধ্বংশ হয়ে উঠবে অনিবার্য।
অযৌক্তিক সামাজিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূর হয়ে আধ্যাত্মিক সাম্য হিন্দু সমাজে প্রতিষ্ঠালাভ হোক–এটা সনাতনীদের সবার কাম্য। কিন্তু বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে তলিয়ে দেখছেন না কেউ। যেন এমনি এমনি কালক্রমে ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা হলো হাজার বছরেও এ অচলায়তন ভাঙছে না।
আবর্জনাকে ঝেড়ে না ফেললে তা আপনি পরিস্কার হয় না , এটাই ইতিহাস । কুসংস্কার আর যুক্তিহীন জাতপাতের হিংসায় যে তিমিরে আগে ছিল সেই তিমিরে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে হিন্দু সমাজ। অসবর্ণ বিবাহ, সামাজিক মেলামেশা, পানাহার, আন্তোষ্টী-ক্রিয়াসহ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অবাধ বৈষম্যহীন মিলন ও অংশ গ্রহণই পারে নিমজ্জমান হিন্দুর অতলান্তে পতন ঠেকাতে । সামাজিক ঐক্য মজবুত ও উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশের সনাতন সমাজের নিকট বিকল্প কিছু অবশিষ্ঠ আছে বলে মনে হয় না। অনার্য বা শুদ্র সমাজের মনে সেই কবে – দুই হাজার বছর আগে, যে আফিম রূপ ভ্রান্তসংস্কার ব্রাহ্মণ্যবাদীরা প্রবিষ্ঠ করিয়েছিল মহান ধর্মগ্রন্থ, মনুসংহিতা, পুরাণ, কাল্পনিক উপাখ্যান আর ঈশ্বরের নামে–সেই বিষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহন করে চলেছে, এমন কি এই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের যুগেও।
আশ্চর্য সেল্যুকাস!
এই দুষ্টচক্র থেকে মুক্তির জন্য বেদ, মনুসংহিতা, গীতা, পুরাণ ইত্যাকার শাস্ত্রাদি কী কী বলছে তা প্রকৃত অর্থে জানা প্রয়োজন।
বর্ণসংকরের উৎপত্তি এবং চতুর্বর্ণ সমাজে বর্ণসংকরদের অবস্থান শাস্ত্রানুসারে পরিস্কার করা হলেই সঠিক ধারণা হবে জাতপাত বিষয়ে এবং বিষয়টির বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা-পর্যালোচনাও সম্ভব হবে। এমন কি চাইলে জাতপাত বিষযে যুগোপযুগী যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্তেও উপনীত হওয়া সম্ভবপর।
হিন্দু ধর্ম যুগে যুগে নতুন নতুন গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা হাজির করেছে অবতার, মহাপুরুষ, ধর্মীয় গুরুদের মাধ্যমে। শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্যদেব, কুল্লুকভট্ট, বিজ্ঞানেশ্বর, জীমুতবাহন, ঠাকুর রামকৃষ্ণ, রাজা রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ মনীষিরা বহু সংস্কার সাধনসহ নব দর্শনের আলোয় সনাতন ধর্মকে যুগেযুগে আলোকিত করেছেন। এই নমনীয়তা ও নতুনত্বকে বরণ করার এই বিস্ময়কর ক্ষমতাকে স্বামী বিবেকানন্দ সনাতন ধর্মের ‘অমীয় সঞ্জিবনী শক্তি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ গুণের জন্য হাজার হাজার বছর আগের সনাতন ধর্মটি বহাল তবিয়তে আজও ঠিকে আছে।
যুগধর্মে যা অচল বা বাতিল তা দ্রুত পরিত্যাগ করা সমীচীন। সতীদাহ প্রথা ও বিধবাবিবাহ নিষিদ্ধ, কুলিন প্রথার নামে বহু বিবাহ, গঙ্গায় সন্তান বিসর্জন ইত্যাদি কুপ্রথাগুলো আজকের যুগে গোড়া ব্রাহ্মণরাও সমর্থন করবেন না, কিন্তু অনিষ্ঠকর এই কুপ্রথাগুলো দুর করার জন্য রামমোহন ও বিদ্যাসাগরকে ধর্মীয় ধ্বজাধারীদের কাছে কত না নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে। ‘ধর্ম গেল জাত গেল’ বলে কত না চিৎকার শুনেছি কুলিন ব্রাহ্মণ আর ভট্টাচার্য মশাইদের গলায়!
কুলিন ব্রাহ্মণরা যখন একেক জনে পঞ্চাশাধিক কিশোরী বালিকাকে বিয়ে করে এদের জীবনযৌবন ব্যর্থ করে দিত কৌলিন্য প্রথা রক্ষার নামে, তখন ধর্ম বোধহয় মহীয়ান হয়ে ওঠতো!
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে ধর্মীয় রীতিনীতি, প্রথা-বিধান, স্মৃতি, পুরানাদির ব্যাখ্যা ও টীকা-টিপ্পনীগুলোর পূর্নমূল্যায়ন হওয়া উচিত। শাস্ত্রাদিতে মানবতাবিরোধী, অন্যার্য, অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব ও যুক্তিহীন মতামত থাকলে অবশ্যই তা পরিত্যাজ্য। কারণ, স্মৃতি-পুরানাদি মানব রচিত, স্মৃতিশাস্ত্র বেদের মতো অপৌরষেয় ঈশ্বর-বাণী নয়, তাই পরিবর্তন যোগ্যও। তাছাড়া শ্রুতিশাস্ত্রে কোন অবান্তর প্রক্ষিপ্ত উপাখ্যান ঢুকানো হয়েছে কি-না পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার।
★কোলকাতা হাইকোর্ট সমুদয় শাস্ত্র প্রমাণাদি ও ঐতিহাসিক তথ্য বিচার বিবেচনা করতঃ কায়স্থদের “শুদ্রবর্ণ” বলেছেন। তা ছাড়া কোর্ট মন্তব্য করেছেন, এতকাল যাবৎ ব্রাহ্মণেরা কখনো কায়স্থদের দ্বিজবর্ণ বলে স্বীকার করেন নাই এবং এদের উপনয়ন সংস্কারও চালু নেই। কায়স্থরাও নিজেদের দ্বিজবর্ণ দাবি করেছেন, এমন কখনও শুনা যায়নি।
—————————————————————
ব্রাত্যজনের দর্শন ০২: জাতপাত সর্ম্পকে ঐতিহাসিক আর সি মজুমদারের অভিমত।
শুদ্র মন্ডলীর ভেতর কেউ বড়, কেউ ছোট, কেউ বা বিশুদ্ধ আর্যরক্তের, এ দাবি ঐতিহাসিক সত্য নয়। ভ্রান্ত ধারণা, হীনস্বার্থ, অবাস্তব ও অযৌক্তিক উন্নাসিকতার কারণেই শুদ্রের মধ্যেও এত শত বিভক্তি। ভাবতে অবাক লাগে, ভারতবর্ষে আর্যরা বহিরাগত ও আক্রমণকারী, এটি ঐতিহাসিক সত্য জেনেও বৃহত্তর অনার্য সমাজ তাদেরই প্রস্তাবিত অবৈজ্ঞানিক কৃত্রিম জাতপাত মান্য করেন। এমনকি পূনর্জন্মের নামে এ পদ্ধতিকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করেন।
আমার উপরোক্ত বক্তব্য হয়তো অনেকের অপছন্দ হতে পারে। তাই প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আর সি মজুমদারের (রমেশ চন্দ্র মজুমদার) মতামত এখানে তুলে ধরছি।
রমেশ চন্দ্র মজুমদার ভারত বিভক্তির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন এবং বরীন্দ্রনাথের অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন। ঢাকা সফরে এলে রবিঠাকুর মজুমদারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় থাকতেন। আর সি মজুমদার সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তথ্যনির্ভর অবিভক্ত বাংলার ইতিহাস রচনা করেন। ভারত বিভাগ পরবর্তীতে তিনি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব পান এবং এই বিরাট কর্মযজ্ঞ সমাপ্তও করেন। তিনি নিজে বৈদ্য স¤প্রদায়ের ছিলেন।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক শ্রী মজুমদার তার রচিত বাংলাদেশের ইতিহাস (প্রাচীনযুগ) গ্রন্থে বৃহদ্ধর্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ও অন্যান্য ঐতিহাসিক প্রমাণের ভিত্তিতে লিখেছেন,
১) প্রাচীন বাংলাদেশে রাজা বেন বর্ণাশ্রম ধর্ম নষ্ট করিবার অভিপ্রায়ে বলপূর্বক বিভিন্ন বর্ণের নরনারীর সংযোগ সাধন করেন। ইহার ফলে বিভিন্ন মিশ্রবর্ণের উৎপত্তি হয়। মনুসংহিতায়ও রাজা বেনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এই মিশ্র বর্ণগুলি সবই শুদ্রজাতীয় এবং এরা উত্তম, মধ্যম ও অধম এই তিন সংকর শ্রেণীতে বিভক্ত।
(ক) উত্তম সংকর মোট ২০টি। করণ, অম্বষ্ঠ, উগ্র, মাগধ, তন্তুরায়, গান্ধিবণিক, নাপিত, গোপ(লেখক), কর্মকার, তৌলিক(সুপারি ব্যবসায়ী), কুম্ভকার, কংসকার, শাঙ্খিক, দাস(কৃষিজীবি), বারুজীবি(বারুই), মোদক, মালাকার, সূত, রাজপূন ও তাম্বুলী।
(খ) মধ্যম সংকর মোট ১২ টি। তক্ষণ, রজক , বনিক, গন্ধবনিক, আভীর, তৈলকারক, ধীবর, শৌন্ডিক, নট, শাবাক, শেখর, জালিক।
(গ) অধম সংকর এরা ৯টিঃ মালগ্রহি, কুড়ক, চন্ডাল, বরুক, তক্ষ, চর্মকার, ঘট্টজীবি, দোলাবাহী, ও মল্ল।
এদের অতিশুদ্র বা অন্ত্যজও বলে।
২) বৃহদ্ধর্মপুরাণ অনুসারে বর্ণসংকরের মর্যাদা তিনটি সূত্র দ্বারা চিনতে হবে :
ক) যাদের পিতামাতা অনুলোমজ পদ্ধতিতে চতুবর্ণভূক্ত (সংকরবর্ণ নয়) তারা উত্তম সংকর। যেমন, বৈশ্য পিতা ও শুদ্রমাতার সন্তান করণ এবং ব্রাহ্মণ পিতা ও বৈশ্য মাতার সন্তান অম্বষ্ঠ।
খ) যাদের মাতা চতুবর্ণভূক্ত কিন্তু পিতা উত্তম সংকর তারা মধ্যম সংকর। যেমন, নিষাদ পিতা ও শুদ্রমাতার সন্তান পুক্কস।
গ) যাদের পিতামাতা উভয়ই সংকর, তারা অধম সংকর। যেমন, নিষাদ পিতা (শুদ্রার গর্ভে ব্রাহ্মণপুত্র) ও আয়োগব মাতার (শুদ্র পিতা ও বৈশ্যমাতার সন্তান) সন্তান কৈবর্ত।
বৃহদ্ধর্ম পুরাণমতে, শ্রোত্রীয় ব্রাহ্মণেরা শুধুমাত্র উত্তম বর্ণসংকরের পূজার্চ্চনা করবেন। মধ্যম ও অধম এই দুই বর্ণসংকরের পুজার্চ্চনাকারী পুরোহিত ব্রাহ্মণরা পতিত হিসেবে গণ্য হবেন এবং তারা যজমানের বর্ণ প্রাপ্ত হবেন। এ অর্থে শ্রোত্রীয় ব্রাহ্মণ ব্যতিত সকল ব্রাহ্মণ পতিত ও শুদ্র।
ঘৃতাচি উপাখ্যান ও শিল্পি-জাতির উৎপত্তি :
বৃহদ্ধর্মপুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীন বাঙালি হিন্দুর সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণভেদ ও সমাজ জীবনের অন্যতম নির্ভরযোগ্য তথ্য-উৎস। কারণ, পুরাণ লেখকদ্বয় নিজেদের গৌড়জন বলে পরিচয় দিয়েছেন, তাই পুরাণদ্বয়ের রচয়িতা বাঙালি বলে অনুমান করা যায়। পুরাণ দু‘টিতে বাঙালির হিন্দুর জাতপাত বা বর্ণসংকরদের জীবিকা, সামাজিক মর্যাদার উল্লেখসহ কতিপয় বর্ণসংকরের উৎপত্তির বিষয়ে কৌতুহল জাগানিয়া উপাখ্যান রয়েছে। এমনই একটি কাহিনী ঘৃতাচি উপখ্যান।
উর্ব্বসী, মেনকা, রম্ভার মতো ঘৃতাচি স্বর্গের একজন নর্তকী ও মনোরঞ্জনকারিনী। একদা কামদেবের আহ্বানে সুসজ্জিতা রূপসী ঘৃতাচি তার গৃহে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে স্বর্গের শিল্পি বিশ্বকর্মার সঙ্গে দেখা। বিশ্বকর্মা ঘৃতাচির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে কামনা করলেন। ঘৃতাচি জানালেন, তিনি কামদেবের গৃহে যাচ্ছেন। আগামীকাল বিশ্বকর্মার কাছে যাবেন। কিন্তু বিশ্বকর্মা ঐদিন ঘৃতাচিকে অংকশায়িনী হিসেবে চাচ্ছিলেন।
ঘৃতাচি যখন কিছুতেই বিশ্বকর্মার সংগে তাৎক্ষণিক যেতে রাজি হন নি, তখন তিনি ঘৃতাচিকে অভিশাপ দেন এই বলে যে, পৃথিবীতে শুদ্রানী হয়ে তুমি জম্ম নাও, ঘৃতাচি।
ঘৃতাচি এই অন্যায় অভিশাপের প্রতিবাদে বিশ্বকর্মাকে পাল্টা অভিশাপ দেন, বিনা দোষে আমাকে অভিশাপ দিলে বিশ্বকর্মা! তুমিও নরযোনীতে জম্ম নেবে।
পারস্পরিক অভিশাপে ঘৃতাচি শুদ্রানী হয়ে জন্ম নিলেন আর বিশ্বকর্মা ব্রাহ্মণ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিলেন।
যৌবনকালে সুন্দরী ঘৃতাচির সংগে নদীতীরে ব্রাহ্মণ যুবক বিশ্বকর্মার দেখা। মন দেয়া-নেয়া এবং পরিণতিতে বিয়ে। শুদ্রানী ঘৃতাচির গর্ভে ব্রাহ্মণ বিশ্বকর্মার ঔরসে সাতটি পুত্র জম্মে যারা সাতটি শিল্পি জাতির পূর্বপূরুষ।
যেহেতু, শুদ্রানী ও ব্রাহ্মণের বিবাহ মনুশাস্ত্র অনুসারে অসবর্ণ অনুলোম বিবাহ,তাই শিল্পি সন্তানদের বর্ণ হয়েছে মায়ের বর্ণানুসারে শুদ্রবর্ণ। এই সাত শিল্পি সন্তানের জাত হল, কাংস্যকার, স্বর্ণকার, কর্মকার, কুম্ভকার, মালাকার, শীল ও চিত্রকর।
এরা সবাই উত্তম সংকর ও জলছোঁয়া।