কুড়িগ্রামে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক স্বপ্না রাণী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অটোরিকশা চালান তিনি। শত আলোচনা-সমালোচনার মুখেও বন্ধ হয়নি তার অটো চালানো। স্বপ্নার এমন সাহসীকতা এখন নারীদের জন্য রোল মডেল। অটো চালিয়ে সংসার চালালেও স্বপ্না রাণী স্বপ্ন দেখেন পিকআপ ভ্যান কেনার।
জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের দিগটারী গ্রামের মৃত বকসী চন্দ্র বর্মণের মেয়ে স্বপ্না রাণী। মা সাবিত্রী বর্মণ। ৫ ভাই আর তিন বোনের মধ্যে স্বপ্না ৬ নম্বর।
১৭ বছর আগে দিনাজপুরের ফুলবাড়ির রণজিৎ দাসের ছেলে স্বর্ণ কারিগর রতন দাসের সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে হয় স্বপ্নার। দু’সন্তানের মধ্যে মেয়ে রাধা রাণী (১২) ৫ম শ্রেণি এবং ছেলে হৃদয় (৮) প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্বপ্নার ইচ্ছা থাকলেও অভাবের জন্য ৫ম শ্রেণিতেই শেষ করতে হয় পড়াশোনা। বিয়ের কিছু দিনের মাথায় নেমে আসে যৌতুকের জন্য অত্যাচার। প্রায় সময়ই অনাহার আর অর্ধাহারে থাকতে হতো স্বপ্নাকে।
নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি একটি এনজিওতে অভিযোগ করে স্বপ্নার পরিবার। এরপর তিনদিনের ছেলে রেখে চলে যায় স্বামী। অভাবের তাড়নায় কয়েকদিন উপোষ থাকার পর বড় ভাই নারায়ণ ও সুবল তাকে নিয়ে যায় বাড়িতে। সেই থেকে পথ চলা শুরু স্বপ্নার। রাজমিস্ত্রি থেকে শ্রমিক এমনকি দিন মজুরের কাজ করতে মাঠঘাটেও চষে বেড়িয়েছেন স্বপ্না।
এরইমধ্যে ২০১৫ সালে স্বপ্ন প্রকল্পে দেড় বছর দৈনিক ৬ ঘণ্টা কাজ করে ২শ টাকা মজুরি পেতেন। প্রকল্প থেকে কাজের পাশাপাশি নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে দেয়া হতো বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে তার সঞ্চয়কৃত ২০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় একটি অটোরিকশা কেনেন তিনি। প্রায় দু’বছর যাবৎ কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী-রংপুর এবং শহর কিংবা গ্রামের রাস্তায় দিব্বি অটো চালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বপ্না। কখনও দুর্ঘটনার স্বীকার না হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যাও কম না তার।
শত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানদের বাবার অভাবটা বুঝতে দেননা স্বপ্না। সন্তানদের কাছে স্বপ্নাই বাবা ও মা। খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে সন্তানদের আবদার মিটিয়েছেন অনায়েসে। অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন পিকআপ কেনার জন্য অর্থ জোগাড় করছেন।
তিনি বলেন, প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হয়েছে। যাত্রী উঠতে চায়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে সকলের সহযোগিতায় এখন আর এই সমস্যা হয় না। শুরুতে দৈনিক প্রায় দু’হাজার টাকা আয় হলেও বর্তমানে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ৫ থেকে ৮শ টাকা আয় হয়। আর এ কারণেই চিন্তা আছে পিকআপভ্যান কেনার।
ইউএনডিপি স্বপ্ন প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক আহমাদুল কবীর আকন বলেন, স্বপ্না তার কঠোর পরিশ্রম দিয়ে জেলা এবং জেলার বাইরেও পরিচিতি লাভ করেছে। স্বপ্না এখন এই দরিদ্র জেলার নারীদের জন্য রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে দিখিয়েছে ইচ্ছা শক্তি থাকলে নারীরাও পুরুষের মতো সমান তালে কাজ করতে পারে।