২৭শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ১২:১২

বাংলাদেশী হিন্দুদের স্বদেশ ত্যাগ অব্যাহত!

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭,
  • 623 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

॥ সুমন হালদার আশীস ॥

এ্যাডঃ স্বপন দত্ত, এ্যাডঃ দিপক লাল দত্ত, মিন্টু বসুর (এরা সকলেই বরিশালের সনাম ধন্য ব্যাক্তি )মত এমনি অনেকেই বরিশালে জন্ম কিন্ত নিজে বাড়ি করেনি আত্মীয়-স্বজনদের সুবাদে পশ্চিমবঙ্গে বাড়ি করছে। সন্তানদের লেখাপড়া ওখানেই করিয়েছে এমনি সরকারী চাকরীরত একজনের সাথে আলাপে জানতে পারি জমি কিনে রেখেছিলেন আগেই। এখন সেখানে বাড়ি করেছেন। স্ত্রী-সন্তানকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এ সিদ্ধান্ত। অবসর নেয়ার পর তিনিও পাড়ি দেবেন ভারতে, স্ত্রী, সন্তানের কাছে। তাঁর ভাষ্যে- হিন্দুদের জন্য মোটেই নিরাপদ নয় বাংলাদেশ। এখন কোনভাবে দিনাতিপাত করা সম্ভব হচ্ছে। ভ বিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। স্বপন দত্তের মতো এই ধারণা পোষণ করেন বাংলাদেশের বেশির ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এরা সকলেই বরিশালের বিশিষ্ট ও গণ্যমান্য ব্যক্তি।

দেশান্তরী হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল সাতচল্লিশে দেশভাগের আগে। একুশ শতকেও তা অব্যাহত রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ ছিল হিন্দু। কিন্তু ২০১১ সালের আদম শুমারিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় তা ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ। ভারতে ২০০১ সালে আদম শুমারি করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, ৩০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী এখন ভারতবাসী। এসব মানুষের ৬৫ শতাংশের বেশি ভারতে শরণার্থী হিসেবে গিয়েছিলেন ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে। এ হিসাবে, ভারতে প্রতিদিনই প্রবেশ করছেন অন্তত ৫০ বাংলাদেশী। তবে এই অভিবাসনকে অনুপ্রবেশ বলাই বাঞ্ছনীয়। কারণ, এসব অভিবাসন হয় একেবারেই সবার অগোচরে। পাসপোর্ট ছাড়া কাঁটাতাঁর অতিক্রমই এখানে মূখ্য। অর্থাৎ, অবৈধ অভিবাসন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা আরও কমবে। ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ হিন্দু দেশান্তরী হয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বুদ্ধিস্ট ক্রিশ্চিয়ান ইউনিটি কাউন্সিলের মহাসচিব রানা দাশ গুপ্ত ডয়েচে ভেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের যথাযথ সামাজিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাঁর মতে, বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মালম্বীরা প্রথম নিপীড়নের শিকার হন ১৯৪৭ সালে। এরপর এ ধারা অব্যাহত থাকে পূর্ব পাকিস্তানেও। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় দেশজুড়ে হিন্দু সমাজের ওপর আক্রমণ করা হয়। ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ উচ্ছেদের জেরে বাংলাদেশে ২০০টির বেশি মন্দির ভেঙে ফেলেন ইসলামপন্থীরা। এসময় অনেক হিন্দু পরিবারও তাঁদের আক্রমণের শিকার হয়। এতে সংখ্যালঘুদের অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বাপ-দাদার ভিটেমাটি, জমিজিরাতের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমান ওপার বাংলায়।

রাজনীতিও অবৈধ অভিবাসনের অন্যতম কারণ। সাধারণ নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ রূপ নেয় সহিংসতায়। সেসময় সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। এর জন্য জামাতে ইসলামী ও এর সমর্থকদের বিশেষভাবে অভিযুক্ত করেন দাশগুপ্ত। বাংলাদেশে হিন্দুরা সরকারের তরফ থেকে যথেষ্ট সমর্থন পান না বলে মনে করেন মানবাধিকার র্কর্মী আইনজীবি জ্যোর্তিময় বড়–য়া। এতে মাতৃভূমিতেও ব্রাত্য হয়ে পড়েন সংখ্যালঘুরা। তিনি ডয়েচে ভেলকে জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জমির মালিকানা দখলে নিতে হিন্দুদের ওপর সহিংসতা চালানো হয়। আবার অনেক সময় রক্ষকই ভক্ষক রূপে আবির্ভূত হয়। অর্থাৎ, সরকারি দলের কর্মীরা চড়াও হন সংখ্যালঘুদের জমি দখলে। আর বিষয়টি নিয়ে সরকার নীরব থাকায় সংখ্যালঘুরা নিজেদের অসহায় মনে করেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৫০ হিন্দু দেশত্যাগ করেন। অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের অধ্যাপক আবুল বরকতের করা গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম করে ঠাঁই নেন প্রতিবেশী ভারতে।

অর্থনৈতিক কারণেও হিন্দুরা দেশান্তরী হন বলে অনেকের ধারণা। তবে রানা দাশগুপ্ত এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ত্যাগের মূল কারণ ‘নিরাপত্তা’। বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘুদের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হলেই এ অবৈধ অভিশপ্ত অভিবাসন রোধ সম্ভব। অন্যদিকে ভারতের বর্তমান সরকার নাগরিক আইন পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা ভারতে বৈধ অভিবাসনের সুযোগ পাবেন। তাঁরা মুছে ফেলতে পারবেন ‘‘অবৈধ অভিবাসী” তকমাটি। এতে ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়াও সহজ হবে। দাশগুপ্ত আরও বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক বক্তব্য রেখেছেন।

এতেই প্রমাণ হয়, ভারতের প্রথম সারির রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশী হিন্দুদের প্রতি। কিন্তু সংখ্যালঘুদের বাংলাদেশ ত্যাগ এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়, জানান রানা দাশগুপ্ত। তাঁর মতে, ইসলামপন্থী ও রাজনীতিকদের সহিংসতা থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপদ রাখার দায়িত্ব নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই। বাংলাদেশের সংবিধান অসাম্প্রদায়িক নয়। এর আছে রাষ্ট্রীয় ধর্ম। সংবিধান এর ভিতে দাঁড়িয়ে। রাষ্ট্র ধর্মের তকমা সংবিধান থেকে না সরিয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব। বড়ুয়াও একমত পোষণ করেন দাশগুপ্তের সঙ্গে। মুসলিম গোষ্ঠীকেই অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে ময়দানে। মুসলিমরা সহিংস কর্মকাণ্ড বন্ধের উদ্যোগ না নিলে কোন আইনই হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মালম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমর্থ হবে না।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »