করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কবি শঙ্খঘোষ মারা গেছেন। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। জ্বর থাকায় গত সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন কবি। গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আগে থেকেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গত ২১ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালেও ছিলেন কয়েক দিন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর কলকাতার বাড়িতে থেকে তার চিকিৎসা চলছিল। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। আজ বুধবার সকালে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় জন্ম হয় শঙ্খ ঘোষের। তার পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়। তবে শঙ্খ ঘোষ বড় হয়েছেন পাবনায়। বাবার কর্মস্থল হওয়ায় তিনি বেশ কয়েক বছর পাবনায় অবস্থান করেন এবং সেখানকার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫১ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনে বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। বিশ্বভারতী ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অধ্যাপনা করেছেন। বাংলা কবিতার জগতে শঙ্খ ঘোষের অবদান কিংবদন্তিপ্রতিম। ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে বাংলায় ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি অনুবাদ করেও সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে তাকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার।
শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে। তবে কবি আড়ম্বর পছন্দ করতেন না বলে গানস্যালুটের আয়োজন থাকবে না।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।