২৮শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশের হিন্দু

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, মে ১৭, ২০২১,
  • 808 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

কৃত্তিবাস ওঝাা
প্রথম অধ‍্যায়
পর্ব―৩
আমাদের এলাকায় বর্ণহিন্দু ও নমঃশূদ্র সমাজ পৃথক। নমঃশূদ্র সমাজের একজন অবস্থাসম্পন্ন সমাজপতি, বাবার চাষ করা জমিতে গরু ছেড়ে ফসল খাওয়াতো। এই নিয়ে বাবার সাথে ঐ সমাজপতির ঝগড়া হয়। সেই কলহের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, উভয়ের মধ্যে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। ঐ কুটিল সমাজপতি কান কথা বলে, নমঃশূদ্র সমাজের অন‍্যান‍্য প্রভাবশালীদের বাবার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। বাবা বাধ্য হয়ে এলাকার নেতৃস্থানীয় একটি শিক্ষিত কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বাবা ঐ পরিবারের জমি চাষ করতো, ফাই-ফরমাশ খাটতো; আবার বিপদে আপদে তাদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতাও পেতো। ঐ শিক্ষিত কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারটির আর্থিক প্রাচুর্যের কারণে, তাদের প্রতি এলাকার অন‍্যান‍্য সাধারণ হিন্দুরা ঈর্ষান্বিত ছিল। ঐ পরিবারটি এলাকায় ‘ঠাহুর'(ঠাকুর) নামে পরিচিত। ঐ ঠাকুর পরিবারের একটি বালক তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে, আমাদের সহপাঠীতে পরিনত হলো। স্কুলের খাতায় তার একটি দীর্ঘ নাম থাকলেও, তাকে সবাই ‘সেন্টু’- নামে ডাকতো।
সেন্টু ছিল খুবই অন্তর্মুখী ও চুপচাপ। সে প্রতিদিন আগে ভাগে স্কুলে এসে প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য সংগ্রাম করতো; আর মুসলমান সহপাঠীরা তাকে বেধরক পিটাতো। মাঝে মাঝে তারা, ওর বই খাতা বাইরে ছুড়ে ফেলে দিতো। আমি বেশ কয়েকদিন ওর বই-খাতা বাইরে থেকে কুড়িয়ে এনে, ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পিছনের বেঞ্চে নিয়ে আমার পাশে বসাতাম। পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার সূত্রে সেন্টুর সাথে মিশছি দেখে, বন্ধু পরিপমল-সরল সহ অন‍্যান‍্য হিন্দু সহপাঠীরা টিটকারি দিয়ে বলতো, “…বড়লোকের শরীলের লগে গা ঘস্ – পয়সা আইবে…”
সেন্টু ইসলাম ধর্মাবলম্বী শ্রেণী শিক্ষকের কাছে নালিশ করেছিল যে, মুসলমান ছাত্ররা রোজ তাকে সামনের বেঞ্চ থেকে পিটিয়ে উঠিয়ে দেয়। ন‍্যায়বিচার পাওয়া দূরে থাকুক, উশৃঙ্খলতার অভিযোগে সেন্টু উল্টো ঐ স‍্যারের হাতে মার খেলো।
ঐ মুসলমান শ্রেণী শিক্ষকের পান চর্বিত মুখ থেকে নির্গত, হিন্দু-বিদ্বেষী নানা কথা বার্তার শেষ কথা থাকতো,”…এই ব্রাহ্মণ‍্যবাদী গুলাইন হইছে সমস্ত নষ্টের গোড়া। এই ক্রিমিনাল গুলায় ষড়যন্ত্র করইয়া আমাগো দ‍্যাশটারে দুই টুকরা হরছে; এই বামনা ক্রিমিনালের জাত দ‍্যাশ ভাগের সোমায়ও মোগো ঠগাইছে…”
গ্রামের বাজারে কিশোর-বয়সী দু’টি কায়স্থ ছেলে ভীষণ মারামারি করছিল। মারামারি থামানোর শেষচেষ্টা হিসেবে বাবা, ঐ ছেলে দু’টিকে চড় মেরে দুই দিকে সরিয়ে দেয়। ঘটনাটি এলাকার বর্ণহিন্দুদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। একজন নমঃশূদ্র বাজারের মতো প্রকাশ‍্য স্থানে দু’টো অভিজাত-বংশজাত কায়স্থ ছেলের গায়ে হাত তুলেছে ; হোক না তারা বাচ্চাছেলে―তাতে কী! তারা তো উচ্চবংশীয়―জাত সাপের ছেলে জাত সাপই হয়―একথা বর্ণহিন্দুদের মুখে মুখে ফিরতে লাগলো এবং সমাজ অবমাননার অভিযোগে, বাবার মতো একজন দরিদ্র-অবদমিত নমঃশূদ্রের বিরুদ্ধে সমস্ত বর্ণহিন্দু একত্রিত হয়ে গেলো।
পরদিন সন্ধ‍্যায় বহু সংখ্যক বর্ণহিন্দু মশাল হাতে গ্রামের বাজারের পুকুর পারে এসে সমাবেশিত হয়ে, উচ্চস্বরে ঘোষণা দিলো ― হরলাল ঘরামি(আমার বাবা) যে কুঁড়ে ঘরটিতে সপরিবারে বসবাস করে, সেটি তারা পুড়িয়ে দেবে।
এই সংবাদ পেয়ে বাবা ও দাদা স্বজাতি নমঃশূদ্রদের কাছে ছুটে গেল। কিন্তু সমাজপতিরা অতীতের তুচ্ছ বিবাদ-বিসংবাদের জের ধরে, কোন নমঃশূদ্রকে আমাদের পক্ষে এগিয়ে আসতে দিল না। তারচেয়েও বড় কথা, বর্ণহিন্দুরা- নমঃশূদ্র সমাজপতিদের কাছ থেকে সম্মতি নিয়েই আমাদের বসত ঘরে আগুন লাগাতে উদ‍্যত হয়েছে।
একসময় দেখলাম, বর্ণহিন্দু সমাজপতিদের নেতৃত্বে মশালধারীরা আমাদের বাড়ির দিকে হৈ হৈ করে এগিয়ে আসছে। আরো আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, ঠাকুর বাড়ির সেন্টু, সমাজপতিদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে। এক কায়স্থ বংশীয় বর্ণহিন্দু সমাজপতি, সেন্টুকে বলছে,”দাদুভাই, এইডা বড়গো ব‍্যাপার, তুমি এইয়ার মধ্যে আইয়ো না।”
মালাকার বংশীয় এক বর্ণহিন্দু সমাজপতি মুখ ভেংচিয়ে সেন্টুকে বলছে,”নোমোর লইগ্গা দেহি দরদ এক্কারে উথলাইয়া ওঠছে!”
শীল বংশীয় এক বর্ণহিন্দু সমাজপতি সেন্টুকে বলছে,”সরইয়া যা কইত আছি, মুই কোলম ঠাহুর মানমু না।”
এক ছিঁচকে ধর্মগুরু সেন্টুকে বলছে,”চাইর আঙ্গুল ছ‍্যাড়া, আইছে মাতব্বরি দ‍্যাহাইতে! আইয়া লউক তোর বাপে বাড়িতে, দেখপিহানে হ‍্যারে দিয়া তোরে ক‍্যামনতারা বাইন ছ‍্যাচা দেওয়াই।”
বাবার ক্রোধান্বিত চিৎকার, “মদনা —”
বাবা বগিদাও হাতে উঠানে দাঁড়িয়ে আছে। দাদার হাতে ‘চল'(বংশদণ্ডের মাথায় লাগানো তিন মাথা বিশিষ্ট সুঁচালো লৌহ ফলাকা)। বাবার নির্দেশে আমি একটা গাবের কচা হাতে তুলে নিয়ে বাবা ও দাদার পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম। অমল একটা বাঁশের লাঠি নিয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেও, বিমাতা তাকে সরিয়ে নিয়ে দু’বাহুর বন্ধনে জড়িয়ে রাখলো।
হিন্দুদের জাতিভেদ প্রথা বড় বিচিত্র! ব্রাহ্মণরা যেমন অন্য জাতিদের ঘৃণা করে; অন্য সমস্ত জাতিরাও তেমনি ব্রাহ্মণদের ঘৃণা করে। বাঙ্গালী হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণ ও অস্পৃশ্যদের মাঝখানে বিশাল সংখ্যক মধ‍্যবর্ণের হিন্দু আছে, যারা বৈদ‍্য, কায়স্থ, শীল, পাটিকর, মালাকার, কর্মকার প্রভৃতি বর্ণগত পরিচয় বহন করে। এই মধ‍্যবর্ণের হিন্দুরা বর্ণভেদের প্রসঙ্গে যখন কথা বলে, তখন তারা জাতিভেদ প্রথাকে ‘ব্রাহ্মণ‍্যবাদ’ বলে ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে-তাই খেদোক্তি করে; অথচ তারা নমঃশূদ্র ও দলিতদের এত ঘৃণা করে – যা ব্রাহ্মণদের ঘৃণার থেকে একটুও কম নয়! এই দ্বিচারী মধ‍্যবর্ণের হিন্দুদের জাতিভেদ-বিরোধী কথা-বার্তায় অনেকেই বিভ্রান্ত হয়; কিন্তু এদের ঘরে যদি কখনো দলিত বা নমঃশূদ্র প্রবেশ করে, এরাও ব্রাহ্মণদের মতোই পানীয় জল ও খাবারদাবার ফেলে দেয়। এই মধ্যবর্ণের হিন্দুদের বিশেষত্ব হচ্ছে, এরা অনর্গল ‘ব্রাহ্মণ‍্যবাদ’- শব্দটির অতি-ব‍্যবহার করে নিজেদের দলিত ও নমঃশূদ্র বিদ্বেষ আড়াল করে রাখে।
অতীতে নমঃশূদ্র-রা জন্মগত বংশীয় ব্রাহ্মণ ছিল―একথা জানতে পেরে, ব্রিটিশ আমলে নমঃশূদ্ররা যখন ব্রাহ্মণ হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তখন এই সব বৈদ‍্য, কায়স্থ ও অন‍্যান‍্য পেশাগত বর্ণহিন্দুরা, ব্রাহ্মণদের সাথে একজোট হয়ে- নমঃশূদ্রদের ব্রাহ্মণ সমাজে প্রবেশের প্রচেষ্টা প্রতিহত করে। পেশাগত বর্ণ হিন্দুদের মধ্যে এতটা-ই গোড়ামী―এরা নিজস্ব গোষ্ঠীর বাইরে বৈবাহিক সম্পর্ক পর্যন্ত স্থাপন করে না।
কেবল নমঃশূদ্ররা নয়, অতীতের সমস্ত হিন্দুরাই ব্রাহ্মণ ছিল। তার প্রমান – কুল গোত্র খুঁজতে গেলে দেখা যায়, সমস্ত হিন্দুই কোনো না কোনো ব্রাহ্মণ ঋষির বংশধর। ক্ষমতালোভী রাজশক্তি পরিবারতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে ‘অবতার তত্ত্ব’ নিয়ে এসে, ‘ক্ষত্রিয় সুপ্রিমেসি’ প্রতিষ্ঠার জন্য- বর্ণভেদ সৃষ্টি করে। এই বর্ণভেদ সৃষ্ট জাতীয় বিভাজনের ফলে, অর্ধ-পৃথিবী হিন্দুদের হাতছাড়া হয়ে গেছে।
মধ‍্যবর্ণের হিন্দুরা মুসলমানদের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে, ‘ব্রাহ্মণ‍্যবাদ’ শব্দটির অপব্যবহার করে, ‘ব্রাহ্মণ’―শব্দটিকে একেবারে ঘৃণিত শব্দে পরিনত করে ফেলেছে। ‘ব্রাহ্মণ‍্যবাদ’ শব্দটি কোন বর্ণবাদী অর্থ বহন করে না। যখন লিখন পদ্ধতির বিকাশ ঘটে নি, তখন সদ‍্য-বিভক্ত সনাতন সমাজের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ- বৈদিক শাস্ত্র সমূহ, গুরুর মুখে শুনে মুখস্থ রাখতেন। এজন্য বৈদিক ধর্মের আরেক নাম ‘ব্রাহ্মণ‍্যবাদ’।
‘ব্রাহ্মণ’ শব্দটির অর্থ- যার ব্রহ্মজ্ঞান আছে। ‘ব্রহ্মজ্ঞান’ হচ্ছে- সৃষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান। যেমন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-শিল্প-বানিজ‍্য-যুদ্ধবিদ‍্যা-চিকিৎসাবিদ‍্যা- রাজনীতি ইত্যাদি। কোনভাবেই এসব জন্মসূত্রে অর্জন করা সম্ভব নয়। সুতরাং ‘বর্ণবাদ’ ও ‘ব্রাহ্মণ‍্যবাদ’ সম্পূর্ণ আলাদা দু’টি বিষয়। তাছাড়া ‘ব্রহ্মজ্ঞান’ ছাড়া এই আধুনিক যুগে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ‍্য-রা মধ‍্যবর্ণের হিন্দুদের ঘৃণা করে; মধ‍্যবর্ণের হিন্দুরা নঃমশূদ্রদের ঘৃণা করে; নমঃশূদ্ররা আবার দলিতদের ঘৃণা করে। এতো বিভেদ-বিদ্বেষ নিয়ে একটা জাতি কিছুতেই সামনে আগাতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে এই জাতির বিলুপ্তি অবধারিত।
মশালধারী বর্ণ হিন্দুরা আমাদের বাড়ির সীমানায় ঢুকলো। বাবা উঠান ছাড়িয়ে এগিয়ে গিয়ে বললো, “মোর ঘরে যেডায় আগুন ধরাইবে, মুই হ‍্যার কল্লা লামাইয়া দিমু; হেয়াথে মোর জেল-ফাঁস যেয়া হওয়ার হইবে।”
জটলার মধ্য থেকে একজন বলে উঠলো, ”
“শ‍্যাক(মুসলমান)-রা কাউঠট্টা নোম কয় সাধে!…(অশ্লীল) ভরা জুম(জেদ)…”
দাদা আমার হাত থেকে গাবের কচাটা কেড়ে নিয়ে, একটা জং ধরা লেজা ধরিয়ে দিয়ে বললো, “মদনা তুই পিছকূল আগলাইয়া খাঁড়া।…(অশ্লীল) ভাইরা পেছোনে গোনে আগুন ধরাইয়া দেতে পারে। যে …(অশ্লীল) পোয় আউগ্গাইবে, আন্ধারে-গোন্ধারে প‍্যাডের মইধ‍্যে ল‍্যাজা হান্দাইয়া দিবি; এক্কারে হুজুরি লাইম্মা যায় যেন।”
“দাদো, হালারা যে লুহা(মশাল) লইয়া আইছে, হেয়াথে আন্ধার কোম্মে! এক্কারে জোনাক রাইতের নাহান ফকফকা।”
দাদা চর হেঁকে বললো, “ছ‍্যাড়া বেশি ফাজিল। তোরে যেয়া কইছি, হেইয়া হর।”
সেন্টু তার পিতামহীকে ডেকে নিয়ে এলো।
সেন্টুর পিতামহী একজন সাত্ত্বিক বিধবা। সমাজের তিনি একজন মুরুব্বি। আমাদের পরিবারের ছোটবড় সবাই তাকে ঠাউরাইন বলে ডাকে। বাবা বলল,” কি মা ঠাউরাইন তামশা দ‍্যাখতে আইছো!”
ঠাউরাইন লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়ানো এক কুলীন কায়স্থ বৃদ্ধকে বললেন, “ঠাকুরপো আপনেও কি মোর নাহান তামশা দ‍্যাখতে আইছেন? না-কি আগুন ধরাইতে আইছেন?
দমা কাশি দিয়ে বৃদ্ধ লোকটি বললো, “বৌঠারইন, মোর না আছে বিত্ত, না আছে প্রতিপত্তি; মোর কথা কেডা হোনে! সমস্যা কোলোম জটিল।”
সমবেত জনতার অগ্রে দণ্ডায়মান সমাজপতিদের উদ্দেশ্যে ঠাউরাইন বললেন,”মোগো বাড়ির পোলারা হগলডি টাউনে থাহে, হেইয়ার লইগ্গা তোমরা মনে করছো নাকি যে, সবাই মতব্বর জালাইয়া গ‍্যাছো! যেয়া মনে চায়, হেইয়াই করবা! মগের মুল্লুক পাইছো! মোরে একবার জানানো দরকার, মনে করলা না!”
ঘোষাল পদবীর এক তরুণ ব্রাহ্মণ বললো,”জ‍্যেডিমা, হরইয়া যে”
ঠাউরাইন তাকে থামিয়ে দিয়ে ধমকির সুরে বললেন, “হরইয়া কি-রে হারামজাদা! হরইয়া তোর চাইয়া কয় দিনের ছোড! বাপ-মায় ভদ্রতা শিখায় নায় যে, বড়গো নাম ধরইয়া ডাকতে নাই। পোলার বয়সী দুইডা ছ‍্যামরা মারামারি করতে আছিলো, হরইয়া হ‍্যাগো দুইডা থাবড় দিয়া ছাড়াইয়া দিছে; হেয়াথে কি মহাভারত অশুদ্ধ হইয়া গ‍্যাছে নাকি ! হেইয়ার লইগ্গা তোরা অর ঘরে আগুন ধরাইয়া দিবি! এই কাদা-বইষ‍্যার দিনে বউ-পোলাপান লইয়া ও কোথায় ওডবে!”
পিছন থেকে একজন টিটকারি দিয়ে বলে, “আপনের ঘরে নিয়া রাখপেন। নোমোর লইগ্গা এতো টান, নোমো নিয়া ঘরে উডান।”
ঠাউরাইনের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। চড়া গলায় তিনি বললেন, “কোনডায় কইলি, সামনে আউগ্গা দেহি! তোরা ভাবজোডা কি মনে মনে!”
ঠাউরাইন বাবাকে বললেন,”হরইয়া তুই সরইয়া খাঁড়া। কেও তোর ঘরে আগুন লাগাইয়া দেহুক। মুই পেত্তেকটারে পুলিশে ধরাইয়া দিমু।”
জটলার ভিতর থেকে দাস পদবীধারী এক বর্ণ হিন্দু এগিয়ে এসে ঠাউরাইনকে বললো, “কাকিমা, একটা কথা কইতে চাইছিলাম, রাগ করইয়েন না। হরইয়া আপনের হাইল্লা(বর্গাচাষী); হে আপনের সবচাইক্কা কাছের মানু। আপনারে না জিগাইয়া মোগো এইহানে আওয়া ভুল হইছে। মোরা ভাবজিলাম, আপনাগো বাড়ির দাদারা-ভাইডিরা আসন(সবাই) টাউনে থাহে, আপনে ধর্ম-কর্ম লইয়া আছেন, এইসব ঝামেলায় জড়াইবেন না। হেইয়ার লইগ্গা আপনার ধারে যাই নাই। ঘরে আগুন দেওয়া ঠিক না, এইডা মুই মানি। কিন্তু সমাজে তো একটা বিচার আচার থাকোন দরকার। আপনে বয়সে সবাইর বড়ো, এলাকার গন‍্যমান‍্য-পয়সাআলা। আপনার বিচার সবাই মানবে। আপনে একটা বিহিত করইয়া দ‍্যান।”
(চলবে)

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »