২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ভোর ৫:৪৪

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে আসলে কী পেল বাংলাদেশ?

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ মঙ্গলবার, আগস্ট ১০, ২০২১,
  • 622 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জেতাটাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। যদিও বাংলাদেশের কন্ডিশন বিবেচনায় কেউ কেউ বলছিলেন মিরপুরের মাঠে বাংলাদেশ একটি বা নিদেনপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে যেতে পারে। সেখানে প্রথম তিনটি ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করল সাকিব, মুস্তাফিজ, আফিফদের দল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে ৪-১ ব্যবধানে। সিরিজসেরা হয়েছেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী?

মুস্তাফিজের স্বরূপে ফেরা : মুস্তাফিজুর রহমান একেবারে প্রথম সিরিজ থেকেই বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকে বৈচিত্র্য এনে দিয়েছিলেন। রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ব্যাটসম্যানদের স্লোয়ার কাটারের ফাঁদে ফেলে ব্যাট স্পিড নিয়ে দ্বিধায় ফেলে দিয়েছিলেন তিনি সেই ২০১৫ সালেই। কখন চালাতে হবে ব্যাট! এই ভাবনায় এখন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলও, তৃতীয় ও চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একটি বলেও চার বা ছয় হজম করেননি মুস্তাফিজ, এই দুই ম্যাচে মোট আট ওভারে দিয়েছেন ১৮ রান।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মুস্তাফিজের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, মুস্তাফিজের এই স্পেলগুলো যেকোনো পাঁচ উইকেট পাওয়া স্পেলের মতোই কার্যকর। মুস্তাফিজকে বর্ণনা করতে গিয়ে মইজেজ হেনরিক্স ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিশিয়াল ফেসবুক পাতায় এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মুস্তাফিজ কবজির মোচড় পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারেন এবং একই সঙ্গে কাঁধের ব্যবহার অনেক ভালো। প্রথম দুই ম্যাচে মুস্তাফিজ ৪৬টি স্লো বল করেছেন এবং দুটি বল করেছেন জোরের ওপর।’

হেনরিক্সের ব্যাখ্যায় উঠে আসে এই কন্ডিশনে মুস্তাফিজ পুরো উপযোগিতাই তুলতে পারেন, কারণ তার হাতে বৈচিত্র্য আছে, একই সঙ্গে আছে গতি, যখন যা প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন পর্যবেক্ষক এবং বিকেএসপির ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘মিডিয়াম পেস স্পিন বোলার বলব কি না জানি না, এটা একেবারেই একটা নতুন ধরনের বল, জোরের ওপর স্পিন করছে মুস্তাফিজ, যেটা বোঝা যায় না।’

অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে উন্নতি : বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং নিয়ে অভিযোগ ও সমালোচনা হয় নিয়মিত, বিশেষত সীমিত ওভারের খেলায় ফিল্ডিং দিয়েই বৃত্তের ভেতরে রান থামানো, কঠিন ক্যাচ ধরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো বিষয় যেখানে ঘটে থাকে, সেখানে সহজ ক্যাচ ছেড়ে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও সেটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না – এটা অনেক সময় দেখা গেছে।

চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতেই একটা হাইলাইট হয়ে থাকবে শরিফুল ইসলামের বলে অ্যাস্টন অ্যাগার সোজা ব্যাট চালালে সেটা শামিম হোসেনের দারুণভাবে ডাইভ দিয়ে ধরে ফেলার মুহূর্তটি। এই সিরিজে মাথার অনেক ওপরে ওঠা বলগুলোও বাংলাদেশের ফিল্ডাররা মিস করেননি। বৃত্তের ভেতর বল খুব বেশি বেরোতে দেননি, যার ফলে অপ্রয়োজনীয় রান কম হজম করতে হয়েছে। ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে দেখা যায়, চার বা পাঁচ রানের ব্যবধানই ম্যাচের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায় নিয়মিত – সেখানে ফিল্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ম্যাচ হারে বা জয়ে।

নুরুল হাসান সোহানের উইকেটকিপিং : আগে অনেক ম্যাচেই খোলা চোখেই দেখা গেছে বাংলাদেশের উইকেট কিপিংয়ে দুর্বলতা। তবে বিশেষ করে স্পিন বোলিংয়ে উইকেটের ঠিক পেছনেই থাকা ব্যক্তির ভূমিকা অনেক বেশি, বোলারের সঙ্গে যোগাযোগ, স্ট্যাম্পিং করার সুযোগ তৈরি করা, যথাযথ রিভিউ সিদ্ধান্তে সহায়তা – এসব ভূমিকায় নুরুল হাসান সোহানকে বেশ চটপটে মনে হয়েছে এই সিরিজে।

তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ১০ রানের জয় পায়। যেখানে ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজ মাত্র এক রান দেন, সেই ওভারে একটি বল ব্যাটের কানায় লেগে পেছনে যেতে পারত – কিন্তু সোহান ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্তত দুটি রান বাঁচিয়ে দেন। এ ছাড়া স্পিন বোলিংয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে ক্ষিপ্রতা ও ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠে যথাযথ জায়গায় ফিল্ডারদের নির্দেশনা দেওয়ার কাজেও সোহানের বিচক্ষণতা লক্ষ করা গেছে এই সিরিজে।

নতুন স্পিনাররাও নিজেদের প্রমাণ করেছে : মেহেদি হাসান ও নাছুম আহমেদ গত কয়েক সিরিজ ধরেই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আছেন এবং কয়েক ম্যাচ খেলেছেনও। কিন্তু এই সিরিজ জয়ে দুজন সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট এনে দেওয়া এবং ওভারপ্রতি বেশ হিসেবি বোলিং করে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছেন। বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের এই যাত্রায় প্রথম আশাব্যঞ্জক মুহূর্তও আসে মেহেদি হাসানের হাত ধরে। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের একদম প্রথম বলেই অ্যালেক্স ক্যারিকে বোল্ড আউট করে তিনি প্যাভিলিয়নে ফেরান। অভিজ্ঞ স্পিন বোলার অ্যাডাম জাম্পা, অ্যাস্টন অ্যাগার, এমনকি সাকিব আল হাসানের চেয়েও সফল ছিলেন মেহেদি আর নাছুম।

আফিফ হোসেন ও শরিফুলের উত্থান : আফিফ হোসেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে পারফর্ম করার পর থেকেই তাকে নিয়ে আলোচনা চলছে ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে। কেউ কেউ ‘পরবর্তী সাকিব’ তকমাও দেন তাকে। আফিফ হোসেন ছোট ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি ছাপও রেখেছেন নিজের সামর্থ্যের – কিন্তু বড় কোনো দলের বিপক্ষে এই প্রথম এভাবে পারফর্ম করলেন। সাকিব সর্বোচ্চ রান করলেও এই সিরিজে আফিফ হোসেন ব্যাট হাতে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, উইকেটে যেখানে রান নেওয়া কঠিন, আফিফ নামার সঙ্গে সঙ্গেই রান বের করার বেশ সাবলীল চেষ্টা করে থাকেন।

মিচেল স্টার্কের বলে একটা কভার ড্রাইভ তো পুরো সিরিজের সেরা শটগুলোর একটি হয়ে আছে। আফিফের আরেকটি দিক – খুব সাবলীলভাবে ছক্কা মারতে পারেন তিনি। মুস্তাফিজের সঙ্গে জুটি বেঁধে শরিফুল ইসলামও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন এই সিরিজে। সেরা উইকেট শিকারিদের তালিকায় তার নাম আছে, শেষদিকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শরিফুলের বল থেকে রান নিতে হিমশিম খেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। একই সঙ্গে মুস্তাফিজ যখন একপ্রান্তে রান নেওয়া কঠিন করে তুলছিলেন, তখন শরিফুল এর ফায়দা নিয়ে উইকেট আদায়ের কাজটাও করেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »