৯ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ১২:৪৭
ব্রেকিং নিউজঃ
নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে মহিলা শ্রমিক লীগের মতবিনিময় সভা আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার “বিশ্বরেকর্ড গড়লো বাংলাদেশের গর্ব ঋতুরাজ ভৌমিক হৃদ্য” রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশ শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি হলেন দেশ সম্পাদক সুমন হালদার বিশ্বে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে যাচ্ছে ভারত : হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আজ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস । কৃত্বিতে খ্যাতি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন মুন্সী আব্দুল মাজেদঃ ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রশ্ন : এক হিন্দুকে বাদী করতে চেয়েছিলেন শাল্লার ওসি আফগানিস্থানে শিক্ষাকেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলা : নিহত ১৯

ধর্মতত্ত্ব : স্মৃতিশাস্ত্র ও পুরাণে জাতিভেদ।

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, ডিসেম্বর ৯, ২০১৭,
  • 1712 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

        
———————————————————–
ঋকবেদের পুরুষসূক্ত প্রক্ষিপ্ত সংযোজন ও মনগড়া। এই শ্নোকের আখ্যায়িকাকে মূলধরে শতাধিক পুরাণ, উপপুরাণ রচনার মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে মিথ্যা তত্ত্বকে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা সত্যি বানিয়েছে। দার্শনিক প্লেটো ‘রিপাবলিক’ পুস্তকে খুব বেঠিক বলেন নি। “কিছু মানুষ কে সোনা দিয়ে আর কতক মানুষকে রূপা দিয়ে ঈশ্বর তৈরি করেছেন”, এটি ক্রমাগত প্রচার করে যাও, দেখবে একদিন মানুষ তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করছে। হিন্দুদের বেলায় এমনটি ঘটেছে। প্রচারই প্রসার।

ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, আর্যগণ বিজিত অনার্যদের হিন্দু সমাজে গ্রহণ করে পরিচর্যা মূলক সেবাকর্মে নিযুক্ত করেন। জাতিভেদ প্রথা আর্যরা তৈরি করার বহু পরে পুরুষসুক্তটি রচিত হয়েছে এবং ঈশ্বরের বাণী বলে ঋকবেদে সংহিতাকারে সংকলিত করেছে। এর দ্বারা অযৌক্তিক জাতিভেদ প্রথাকে ঈশ্বরের নামে বৈধতা দেয়া হয়েছে।

ভারতের আদিবাসী অনার্যদের শুদ্র নাম দিয়ে ধন-সম্পত্তি ও রাজনৈতিক-মানবিক অধিকার বঞ্চিত করে শোষণ-শাসন চিরস্থায়ী করার জন্য পূরুষসূক্ত রচনা করা হয়েছে। সংখ্যাগুরু শুদ্রকে বেদ শাস্ত্রসহ সকল ধরনের জ্ঞান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। অন্য ত্রিবর্ণ উপবীত বা পৈতা ধারণ করে নিজেদের শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করে সকল সম্পদ, ক্ষমতা ভোগ করেছে। ধর্মীয় অধিকার বঞ্চিত শুদ্ররা বেদ পাঠ, শ্রবণ বা উচ্চারণ পর্যন্ত করতে পারতো না। এর জন্য ছিল রাজার কঠোর শাস্তি, পাঠ করলে জিভ কর্তন, শ্রবণ করলে কানে তপ্ত গলিত-সিসা ঢেলে দেয়া আর বেদমন্ত্র মুখস্ত করলে সে হতভাগ্য শুদ্রকে হত্যা করা হতো।

বেদের পরেই স্মৃতির স্থান। স্মৃতি বেদজ্ঞ কর্তৃক রচিত ও বেদানুমোদিত। সামাজিক, নৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বিধিবিধান স্মৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অনেকগুলো স্মৃতিশাস্ত্র থাকলেও মনুস্মৃতি দ্বারা হিন্দু সমাজ মূলত পরিচালিত। ভারতবর্ষ ছাড়াও মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, জাপান ইত্যাদি দেশের আইন ও সামাজিক রীতিনীতিতে মনুস্মৃতির প্রভাব আজও রয়ে গেছে।

বেদ আর স্মৃতিশাস্ত্রকে প্রামাণ্য ধরে লোকশিক্ষার্থে পুরাণাদি রচিত। বহু সংখ্যক পুরাণ থাকলেও মোটামোটি ১৮ টিকে প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। অধিকাংশ পূরাণ মহামুনি ব্যাস রচিত, যদিও ব্যাস নামে এক ব্যক্তি, না একাধিক ব্যক্তি ছিলেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। পুরাণের উদ্দেশ্য গল্প, কাহিনী, আখ্যায়িকার মাধ্যমে সাধারণ লোকদের ধর্ম শিক্ষা দেয়া। পুরাণ কাব্যধর্মী এবং উচ্চাঙ্গের সাহিত্য; কোন কোনটি মহাকাব্য হিসেবে বহুল পঠিত। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মশিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও পুরাণগুলো গীত ও পঠিত হয়ে হিন্দুদের ধর্মীয় চেতনা সৃষ্ঠি করে চলেছে যুগে যুগে। তাই হিন্দুর ধর্মবোধ আসলে পুরাণ অনুগামী। পুরাণ জাতিভেদ বা বর্ণভেদের মাহাত্ম্য দ্বারা পরিপূর্ণ।

অবতারতত্ত্ব পুরাণের আবিস্কার। মৎস্যপৃরান, কূর্মপুরান, ভাগবত, ভবিষ্যপুরান, বরাহপুরান, রামায়ন, মহাভারত, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান, বৃহদ্ধর্মপুরান,কল্কিপুরাণ ইত্যাদির প্রভাব সাধারণ হিন্দুদের উপর অপরিসীম। বেদ সম্পর্কে খুব অল্পলোকই ওয়াকিবহাল। হিন্দুদের ধর্মবোধ পুরাণ অনুসারি। পুরাণাদিতে শুদ্রদের অনার্য, চন্ডাল, রাক্ষস, বানর, অসুর, দস্যু ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়েছে।

মনুসংহিতা অনুসারে শুদ্র মন্ত্রহীন- শুদ্রের কোন ধর্ম নাই। মনুর বিধিবিধান যে গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তাকে মনুসংহিতা বলে। হিন্দুর জন্য পূর্ণ জীবনাচরণের বিধান দিয়েছেন মনু। মনুর অনুশাসনে জাতিভেদকে পাকাপোক্ত করা হয়েছে। চতুর্বর্ণের কর্মপরিধি নির্দ্ধারন ও অলংঘনীয় করে এটিকে ধর্ম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উচ্চ তিনবর্ণের নিরলস সেবা অর্থাৎ দাস্যবৃত্তি শুদ্রের ধর্ম- এটিই মনুর অলংঘনীয় বিধান। মনুসংহিতার কতিপয় অনুশাসন দেখুন :

১. বেদজ্ঞ, গৃহস্থ, কীর্তিমান ব্রাহ্মণদের সেবা-শুশ্রূষাই শুদ্রের স্বর্গ লাভের একমাত্র উপায় এবং এটিই শুদ্রের শ্রেষ্ট ধর্ম। ৯/৩৩৪

২. উচ্চবর্ণের শুশ্রূষাকারী, মুদুভাষী, নিরহংকার এবং ব্রাহ্মণের আশ্রিত শুদ্র পরজন্মে উচ্চবর্ণে জন্ম লাভ করে। ৯/৩৩৫

৩. উচ্চবর্ণের সেবা করার একান্তই সুযোগ না পেলেই কেবল শুদ্র অন্য বৃত্তি অবলম্বন করতে পারবে। ১০/১২১

৪. ব্রাহ্মণের পক্ষে শুদ্রকে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ ধর্ম উপদেশ দেয়া অশাস্ত্রীয়। ৪/৮

৫. শুদ্রকে রাজা যত্নসহকারে উচ্চবর্ণের সেবায় নিযুক্ত করবেন। তা না হলে,স্বধর্মচ্যুত হয়ে অশাস্ত্রীয় উপায়ে শুদ্র ধন সঞ্চয় করে ঔদ্ধত্য হেতু সমাজবিরোধী কাজ করবে। ৮/৪১৮

৬. শুদ্রনারীর অধর-রস পান করলে, এমন কি নি:শ্বাস লাগলে এবং তার গর্ভে সন্তান উৎপাদন করলে ব্রাহ্মণের পাপমোচনের কোন পথ থাকে না। ৩/১৯

৭. শক্তেনাপি হি শুদ্রেন ন কার্য্যাে ধনসঞ্চয়ঃ।
শুদ্রো হি ধনমাসাদ্য ব্রাহ্মণেব বাধতে। ১০/১২৯
–শুদ্র সক্ষম হলেও ধনসঞ্চয় করবে না। কারণ শুদ্র ধনলাভ করলে ব্রাহ্মণদের পীড়া দেয়।

৮. ‘ মার্জারনকুলৌ হত্বা চাষং মন্ডুকমেব চ।
শৃগোধোলুককাকাংশ্চ শুদ্র হত্যাব্রতংচরেৎ। ’ ১১/১৩১
–ব্রাহ্মণ কর্তৃক শুদ্র হত্যা সামান্য পাপ–পেচক, নকুল, ভেক, বিড়াল, কুকুর বা কাক হত্যার তুল্য।

৯. শুদ্রানীর সঙ্গে তার ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যৌন সম্ভোগ করলে ব্রাহ্মণের সামান্য জরিমানা আর শুদ্র কর্তৃক ব্রাহ্মণ নারীর প্রতি একই আচরণের জন্য একমাত্র বিধান মৃত্যুদন্ড।

১০. মনু আরও বলেছেন, শুদ্র বা চন্ডালের নিকট ব্রাহ্মণ পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা শিখবে প্রয়োজন হলে; কিন্তু এই নিচুজাত কখনও অন্য ত্রিবর্ণের জামাতা হতে পারবে না।

জাতিভেদ প্রথার সুবিধাভোগী ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের অন্যায় আচরণ আর শুদ্রদের মানবেতর জীবন যাপনের বাধ্যতাবাধকতামূলক বৈষম্যকে মনুসংহিতা ঈশ্বরের বিধান হিসাবে অভিহিত করেছে এবং যুগ যুগ ধরে শুদ্রদের বাধ্য করেছে অধিকারহীন মানবেতর জীবন যাপন করতে। বিস্ময়কর হল আজও শুদ্ররা বর্ণাশ্রম প্রথা মেনে চলেন, নিজেদের অবমাননাকর অবস্থা ঈশ্বর প্রদত্ত নিয়তি জেনে বিশ্বাস করেন যে, এ জীবনে শুভকর্ম ও ব্রাহ্মণাদির সেবাশুশ্রূষা করে স্বর্গলাভসহ পরজন্মে ব্রাহ্মণ জন্ম পাবেন এবং জন্মান্তরে একদা মোক্ষলাভ করবেন।

মূঢ়তা, অন্ধত্ব আর অজ্ঞতার কী অদ্ভূত পরকাষ্ঠা!

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »