জনশুমারির জন্য জুন মাসে সারা দেশজুড়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোট ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন।
প্রতিবেদনটি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আজ বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। গত জুনে সারা দেশে জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিলো।
এর আগে ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসেবে দেশের জনসংখ্যা ছিলো ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিলো নারীর চেয়ে বেশি।
তখন পুরুষের সংখ্যা ছিলো ৭ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ জন আর নারী ছিলো ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ জন।
বিজ্ঞাপন
অর্থাৎ গত দশ বছরে দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
অবশ্য এবারের এই জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ যথাযথ হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি পরিকল্পনা এম এ মান্নান স্বয়ং স্বীকার করেছিলেন যে, “এবারের মানুষ গোনার কাজে অবহেলা হয়েছে”।
বাংলাদেশে পুরুষদের চাইতে নারীদের গড় আয়ু বেশি কেন
বাংলাদেশে আদমশুমারি শুরু, ‘ডিজিটাল জনশুমারি’ কেন বলা হচ্ছে
ঢাকা শহরে বস্তিবাসী: সংখ্যা কত, কেমন তাদের জীবন?
বাংলাদেশে যেসব কাজের জন্য মৃত্যু নিবন্ধন জরুরি
বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় বেশি।
পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বাড়ার পেছনে যেসব কারণ
চলতি বছরের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানেই অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন জনসংখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম।
মিস্টার ইসলাম বলছেন বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি।
মূলত মেয়েদের জীবনের আয়ুষ্কাল বেশি হওয়া এবং অভিবাসনকেই তিনি নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ মনে করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবেই বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৪.২ বছর। আর পুরুষদের ৭১.১ বছর।
আবার জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২১’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো যে, বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৫ বছর, যেখানে পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর।
অর্থাৎ বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় ৩-৪ বছর বেশি।
মিস্টার ইসলাম বলছেন যে দেশে নারীর সংখ্যা বেশির আরেকটি কারণ হতে পারে অভিবাসন।
“দেশ থেকে এক কোটিরও বেশি মানুষ বিদেশে গেছে। এর মধ্যে দৃশ্যত পুরুষের সংখ্যাই অনেক বেশি। সেটিও জনশুমারির তথ্যে প্রভাব ফেলতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
তবে এগুলো ছাড়াও নারীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার আর কোন কারণ আছে কি-না সেটি জানতে জনশুমারির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পাশাপাশি কিছু জরিপ বা গবেষণার প্রয়োজন হতে পারে।
এগুলো পেলে নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত পাওয়া সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন মিস্টার ইসলাম।
২০১১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ।
জনশুমারি ২০২২: জনসংখ্যা কমেছে?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস গত বছর জুনে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো এবং ওই প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিলো যে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার (২০২১ সালের জানুয়ারি)।
অথচ আজ বিবিএস জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলছেন দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন।
কর্মকর্তারা বলছেন যে জনশুমারি দশ বছর পরপর হলেও প্রতি বছরের তথ্য সমন্বয়ের জন্য স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস তৈরি করে বিবিএস।
তবে নির্ধারিত কিছু এলাকার মৃত্যু, বিয়ে, আগমন বা বহির্গমনসহ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে জনমিতি সম্পর্কিত সূচক সমূহ প্রকাশ করার কারণেই জনসংখ্যার তথ্যে কম বেশি দেখা যায়।
জনশুমারির পাশাপাশি গৃহগণনা ও আর্থিক অবস্থাসহ ৩৫ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
কমেছে হিন্দু জনগোষ্ঠী
এবারের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী দেশে হিজড়ার সংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯ জন।
অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে মুসলিম সংখ্যা বেড়ে ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে যা ২০১১ সালে ছিলো ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
আবার হিন্দু জনগোষ্ঠী ২০১১ সালের ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালের জনশুমারিতে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
সামান্য করে কমেছে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের হারও।
জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশের ৫৫ দশমিক ৮৯ ভাগ মানুষ এখন মোবাইল ফোন আর ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন। রাজধানীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এর বাইরে চট্টগ্রামে ৩ কোটি ৩২ লাখ, রাজশাহীতে ২ কোটি ৩ লাখ মানুষ বাস করছেন এবং বরিশাল বিভাগে দেশের সর্বনিম্ন ৯১ লাখ মানুষ বসবাস করছেন।
প্রতি ১০ বছর পরপর বাংলাদেশে আদমশুমারি করা হয়ে থাকে
আদমশুমারি নিয়ে কিছু তথ্য
* ভারত উপমহাদেশে প্রথম আদমশুমারি হয় ব্রিটিশ আমলে, ১৮৭২ সালে। পরের আদমশুমারি হয় ১৮৮১ সালে। এরপর থেকে এই উপমহাদেশে প্রতি ১০ বছর পরপর আদমশুমারি হয়েছে।
* বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয় ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
* প্রতি ১০ বছর পরপর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালে না হয়ে একবছর পিছিয়ে যায়।
* পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৩ লাখ। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ। প্রতি ১০ বছরে অন্তত দুই কোটি জনসংখ্যা বাড়ে বলে ধারণা করা হয়।
* দুই হাজার এগার সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের সীমান্ত এলাকায় আদমশুমারি করে।