দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবার বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সংকল্পবদ্ধ আওয়ামী লীগ। এ জন্য প্রতিটি সংসদীয় আসন ধরে ধরে জরিপ করা হচ্ছে। এ জরিপের কাজ মনিটরিং করছেন দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন ও আওয়ামী লীগের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, এবার কপাল পুড়ছে চলতি সংসদের ১৪০ এমপির।
তাদের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্যাতন, মামলা-হামলা করে হয়রানি, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে ‘এমপি লীগ’-‘ভাই লীগ’ বলয় সৃষ্টি, জনবিচ্ছিন্ন, এলাকাবিমুখ, নিয়োগ, টেণ্ডার বাণিজ্য, জলমহাল-বালুমহাল দখল, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের দিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণসহ বিস্তর অভিযোগ উঠে এসেছে। এর মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রভাবশালী এমপিদের নামও রয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় এমপিরা।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভোট হবে। টানা বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ কৌশলে এগোবে। এরমধ্যে অগ্রাধিকার পাবে বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন এমপিদের বাদ দেওয়া এবং ক্লিন ইমেজ ও এলাকায় অধিকতর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নৌকার প্রার্থী করা। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে যে বড় একটা পরিবর্তন আসছে সে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যে কোনো নির্বাচনে নমিনেশনে পরিবর্তন আনা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ক্ষেত্রবিশেষে আমরা অবশ্যই যাচাই করে দেখব কার জেতার সম্ভাবনা আছে কার নেই। কে ভোট পাবেন, কে পাবেন না। ’ দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত। কারণ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত এমপিদের বাদ দিয়ে উজ্জ্বল ভাবমূর্তির প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দিতে পারলে জয়ের ব্যাপারে নির্ভার থাকা যাবে। বিতর্কিত এমপিদের পরিবর্তন না করে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হবে, তেমনই ওই প্রার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্নের মধ্যে থাকতে হবে। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং দেশ-বিদেশে সবার কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক, সেটাও প্রত্যাশা দলটির হাইকমান্ডের। মুখে যাই বলুক বিএনপি দলের অস্তিত্ব রক্ষায় আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। আর সে কারণে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো রকম ঝুঁকি নেবে না আওয়ামী লীগ। সে কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো জনগণের ম্যান্ডেট নিতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীর ওপর এবার ভরসা করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এই দলটিকে এত সময় ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যে দলটির সব তিনি চেনেন, ভালো চেনেন, ভালো বোঝেন। তিনি দল হোক নির্বাচনে মনোনয়ন হোক, সময় উপযোগী করে সাজিয়ে থাকেন। এবারও সেভাবেই সাজাবেন। যেসব এমপির বিরুদ্ধে ন্যূনতম অভিযোগ আছে তাদের এবার নৌকা দেবেন না বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ’