ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৮তম গ্রুপ অব টোয়েন্টি (জি-২০) শীর্ষ সম্মেলন। দুদিনের শীর্ষ সম্মেলনে আগামী শনিবার ও রোববার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মিলিত হবেন বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) ২০ সদস্যের এই জোটের মেগা ইভেন্টে অংশ নেবেন ৪০ দেশের নেতা ও প্রতিনিধিরা।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন কী, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
গ্রুপ অব টোয়েন্টি (জি-২০) হলো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম। এটি বৈশ্বিক স্থাপত্য গঠন ও শক্তিশালীকরণ আর সব প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থনীতি পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রতিষ্ঠাকাল
এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটের পর আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থিতিশীলতা উন্নয়ন সম্পর্কিত নীতি আলোচনার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৯ সালে গঠন করা হয় জি-২০। সদস্য দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বৈশ্বিক অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার একটি ফোরাম।
জি-২০’র সদস্য যারা
জি-২০’র সদস্য দেশ ১৯টি। এছাড়াও জোটে অন্তর্ভুক্ত আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
জি-২০’র সদস্য দেশগুলো বিশ্বের জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ ও বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ ও বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।
জি-২০’র কার্যক্রম
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন ও এক বছরের জন্য এজেন্ডা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন জোটের প্রেসিডেন্ট। গত বছরের ১ ডিসেম্বর জি-২০’র সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছিল ভারত। পরবর্তী সম্মেলনের জন্য ব্রাজিলের কাছে ইতোমধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২২ সালে সম্মেলনের সভাপতিত্ব করার দায়িত্বে ছিল ইন্দোনেশিয়া।
দুটি উদ্দেশ্যে জোটটি কাজ করে থাকে। একটি অর্থনৈতিক আর অন্যটি শীর্ষ সম্মেলনের আগে ক‚টনৈতিকদের প্রস্তুতিমূলক কাজ। অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা দিকগুলোর নেতৃত্বে থাকেন। অর্থনৈতিক দিকগুলো ঠিক হওয়ার পর কূটনীতিকরা বিভিন্ন নীতি ঠিক করেন।
যেখানে অনুষ্ঠিত হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন
সম্মেলনের আয়োজনে আছে ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন-কাম-কনভেনশন সেন্টার (আইইসিসি)। নবনির্মিত ভারত মন্ডপমে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের আতিথিয়েতা দেওয়া হবে। জুলাই মাসে নতুন এই কনভেনশন কমপ্লেক্সটির উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১২৩ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ভারত মন্ডপম।
নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি রুপি। এতে রয়েছে কনভেনশন সেন্টার, প্রদর্শনী হল, দোভাষী কক্ষ, অ্যাম্ফিথিয়েটারসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা।
সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন যেসব বিশ্বনেতা
বিভিন্ন দেশ ও বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতারা অংশ নেবেন ভারতের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে। সম্মেলনে যারা আসছেন তাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র–ডো ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো।
তবে এই শীর্ষ সম্মেলনটিতে যোগ দেবেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার পরিবর্তে প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও সম্মেলনে অংশ নেবেন না। শি জিনপিংয়ের পরিবর্তে সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রিমিয়ার লি কিয়াং।
বিশেষভাবে আমন্ত্রিত অতিথি
প্রতিটি শীর্ষ সম্মেলনে জি-২০’র সদস্য নয় এমন দেশ অথবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনটিতে ভারত আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল সিসি, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ কুমার জুগনাউথ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবু, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সানচেজ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ও ওমানের উপ-প্রধানমন্ত্রী সাইয়্যেদ আসাদ বিন তারিক আল সাইদ।
বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যেসব নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ, আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মহাপরিচালক অজয় মাথুর, কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মহাপরিচালক অমিত প্রোথি, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট ফসুন হাউংবো, আর্থিক স্থিতিশীলতা বোর্ডের চেয়ার ক্ল্যাস নট, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃতালিনা জর্জিয়েভা, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার মহাসচিব ম্যাথিয়াস কোরম্যান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো ইওয়ালা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানোস ঘেরব্রেয়ে।
শীর্ষ সম্মেলনের থিম ও এজেন্ডা কী?
এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন-২০২৩ যে থিমের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা হলো বসুধৈব কুটুম্বকম (এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ)। মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীবসহ সব জীবনের মূল্য ও পৃথিবী ও বিস্তৃত গ্রহে তাদের আন্তঃসম্পর্ককে কেন্দ্র করে এজেন্ডটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্মেলন ঘিরে রেল পরিষেবা ও ফ্লাইট বাতিল
ভারতের উত্তরাঞ্চলের রেলওয়ে আগামী শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ২০০টিরও বেশি যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সময়সূচি অনুযায়ী, শনিবার ৯০টিরও বেশি রেল পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে। রোববার বাতিল করা হবে ১০০টিরও বেশি যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা। এই ট্রেনগুলোর বেশিরভাগই দিল্লি থেকে দক্ষিণ হরিয়ানার সোনিপত-পানিপথ, রোহতক, রেওয়ারি ও পালওয়াল রুটে চলে।
অন্যদিকে দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড (ডিআইএএল) জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য শুক্রবার থেকে শুরু করে তিন দিন ৮০টি প্রস্থান ও আগমনকারী ফ্লাইট বাতিল করার জন্য এয়ারলাইনগুলোর কাছ থেকে অনুরোধ পেয়েছে।