গান্ধীর আততায়ী আচরন কোন দিন বাঙ্গালি হিন্দুরা ভুলবে না। আবার কংগ্রেসের দালালি এবং মুসলিম তোষন বাঙ্গালি হিন্দুরা চিরদিন মনে রাখবে।
নেতাজি সুভাষচন্দ্রকে গান্ধী তথা গোটা কংগ্রেস কখনো মুল্যায়ন করেনি। আর যদি করতো তাহলে ভারতবর্ষের ইতিহাস আজ অন্য রকম হতো। এই দুই নেতাই স্বাধীনতার প্রাক্কালে নেতাজি সুভাষ বসুর বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিলেন গান্ধী তার একমাত্র কারণ মুসলিম তোষন ইংরেজদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন৷
১৯৪৭ সালে গোটা দেশের স্বাধীনতা মিলেছিল দেশভাগের যন্ত্রণার বিনিময়ে৷ অর্থাৎ দেশের অনেকাংশ যখন শুধুই স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করেছে তখন বাঙালির কাছে তা বিস্বাদ হয়ে ওঠে দেশের সীমারেখা টানা ব়্যাডক্লিফ লাইনটির জন্য৷ এই লাইনটির করা হয় মুসলমান এবং ইংরেজদের স্বার্থে।
গান্ধী সবসময় বাঙ্গালী হিন্দুদের সহ্য করতে পারতেন না। যার কারণে বাঙ্গালি হিন্দুদের নেতৃত্বও তার সহ্য হতো না। ১৯৩৮ সালে গান্ধীর বিরোধিতা থাকলে শেষমেশ হরিপুরায় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন সুভাষচন্দ্রই। কিন্তু তারপরে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য সুভাষ ত্রিপুরি সেশনে কংগ্রেসের সভাপতি হতে উদ্যোগী হন। তখন গান্ধীজির সমর্থনে সুভাষের বিরূদ্ধে পট্টভি সিতারামাইয়া দাঁড়ালেও তাঁকে হারিয়ে দেন নেতাজি ৷ তবে সেই নির্বাচনের ফল জানার পর তিনি যে সুভাষের কতটা বিরোধী তা বোঝাতে গান্ধী বলেওছিলেন “পট্টভির হার আসলে আমার হার”৷ ফলে জিতলেও গান্ধী অনুগামীদের বাধার চোটে ঠিকমতো কাজ করতে পারলেন না সুভাষ৷ পরিস্থিতি এমনই দাঁড়াল যে তখন নেতাজি বাধ্য হলেন সভাপতি পদ ও দল ছাড়তে ৷ নতুন দল ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করলেন।
গান্ধীর নেতাজির প্রতি এই বিরোধ তো বাঙালি হিন্দুরা ভুলতে পারে না৷ তাছাড়া সেনাবাহিনীর দিকে নজর করলেই বোঝা যায় তেমন ব্যতিক্রমী না হলে বঙ্গসন্তানেরা এখনও তেমন ভাবে যুদ্ধে উৎসাহী নয়৷ কারণ তাদের সাথে গান্ধী এবং কংগ্রেস বেইমানি করেছে। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য, মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক সব মিলিয়ে বাঙালি কাছে তিনি আজও যেন জীবিত থেকে যান ৷ সুভাষ ঘরে না ফেরার জন্য দায়ী গান্ধী এবং কংগ্রেস ও নেহরু পরিবার ৷ আর জাতিরজনক তো চিরকালই নেতাজিকেই দ বলেই মনে করে আপামর বাঙালি৷
স্বাধীনতা এসেছিল দেশভাগের বিনিময়ে, হয়েছিল বাংলা ভাগ৷ যার ফলে আর্থ–সামাজিক দিক থেকে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বাঙ্গালি হিন্দুরা। উদ্বাস্তু সমস্যায় বাঙালি হিন্দুর অর্থনীতিটাই তো বদলে গেল৷ আজও বাঙালির ক্ষোভ কেন গান্ধী দেশভাগ মেনে নিলেন ? যেখানে পরাধীন ভারতে গান্ধীজি বার বার বলেছিলেন তিনি দেশভাগকে সমর্থন করেন না৷ শুধু তো তাই নয় তিনি বলেছিলেন– যদি দেশভাগ করতে হয় তা যেন হয় তার শরীরের উপর দিয়ে৷ গান্ধীর জীবিত অবস্থাতেই তো দেশ স্বাধীন হল আর বাংলাও ভাগ হল৷ কেন তিনি পারলেন না দেশভাগ আটকাতে৷ গান্ধী কথা রাখেননি বাঙ্গালি হিন্দুদের সাথে৷ হ্যাঁ তিনি দেশ ভাগ আটকাতে পারেননি কিন্তু পাকিস্তান ও ভারতের একদল নেতার মতো ধর্মের ভিত্তিতে এ ভাবে দেশভাগের সিদ্ধান্তও তিনি মেনে নেন৷
স্বাধীনতার ঠিক আগে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের আগুনে তখন জ্বলছিল নোয়াখালি, কলকাতা। দেশ স্বাধীন হওয়ার দু–দিন আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন সোদপুরের খাদি আশ্রম–এ। গান্ধীজি বেলেঘাটায় দাঙ্গাক্রান্ত এলাকা পায়ে হেঁটে ঘুরলেন ৷ তখন বাঙ্গালি হিন্দুরা তাঁর কাছে নিরাপত্তা চায়। পরিস্থিতি বিচার করে তিনি তখন ঠিক করলেন বেলেঘাটায় থাকবেন৷ ১৩ আগস্ট বেলেঘাটার বাড়িতেই এলেন তিনি। ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হল আর রাত বারোটার পর ১৫ আগস্ট স্বাধীন হল ভারত। মধ্যরাতে জন্ম হল স্বাধীন ভারতের৷ দিল্লিতে উড়ল ভারতের জাতীয় পতাকা৷ দেশভাগ কিংবা দাঙ্গার দায় যে গান্ধী ও কংগ্রেসের দায় ৷ ৷
ভারতবর্ষের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত৷ যদি গান্ধী সিধান্ত নিতে পারতেন। আর নেতাজি সুভাষ বসুর সঙ্গে বেইমানি না করতেন। গান্ধীজি কেন সিদ্ধান্তহীন হয়ে মৌনব্রত নিলেন, কেন দেশভাগ রুখতে আরও সচেষ্ট হলেন না, সে প্রশ্নই আজও বাঙালিরা করে চলেছে জাতির জনককে৷