৯ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ১২:৪২
ব্রেকিং নিউজঃ
নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে মহিলা শ্রমিক লীগের মতবিনিময় সভা আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার “বিশ্বরেকর্ড গড়লো বাংলাদেশের গর্ব ঋতুরাজ ভৌমিক হৃদ্য” রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশ শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি হলেন দেশ সম্পাদক সুমন হালদার বিশ্বে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে যাচ্ছে ভারত : হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আজ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস । কৃত্বিতে খ্যাতি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন মুন্সী আব্দুল মাজেদঃ ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রশ্ন : এক হিন্দুকে বাদী করতে চেয়েছিলেন শাল্লার ওসি আফগানিস্থানে শিক্ষাকেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলা : নিহত ১৯

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শংকর মঠ

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, অক্টোবর ৪, ২০১৭,
  • 595 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

শ্রী শ্রী শংকর মঠ বরিশাল নগরীতেই নানা উত্থানপতনের মধ্যদিয়েই সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এক চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়টি

তবে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটিতে একসময় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিণত হয়েছিল জরাজীর্ণতায়। পরে অবশ্য মন্দিরটি রক্ষা পেয়েছিল বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের পরিশ্রমের কারণে

১৯১০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক সতীশ চন্দ্র মুখোপ্যাধায় প্রায় সাড়ে ৩ একর জমির উপর শংকর মঠ নামে এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করার কারণ হিসেবে জানা যায়, সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষ স্বাধীনতা আন্দোলনে এখান থেকেই রাজনৈতিক চেতনায় যুব সম্প্রদায়কে উজ্জীবিত করার কাজ করত, এছাড়া তিনি মহাদেব শিবের উপাসনা করতেন এ আশ্রমটিতে অবস্থান নিয়ে।

ইংরেজি ১৯০৮ সনের শেষে দিকে তখন পণ্ডিত সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ব্রজমোহন স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ব্রহ্মচারী হিসাবে তার আচার-আচরণ পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অতি সাধারণ।

ব্রজমোহন কলেজে (বর্তমানে সরকারি ব্রজমোহন কলেজ) সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতি ও ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান হতো। সংস্কৃত ভাষায় ভাগবৎ স্ত্রোত্র পাঠ হতো। যুবকরা অনেকেই এখানে উপস্থিত থাকত। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে বৃটিশ রাজ্যের রোষানলে পড়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অশ্বিনী কুমার দত্তের বিভিন্নমুখী কর্মকাণ্ড বাঁধার সৃষ্টি হতে লাগল। প্রশাসনিক বিরোধিতার ফলে যে কোন মহৎ কাজ সুষ্ঠুভাবে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অক্সফোর্ড মিশনের মি. স্ট্রং-এর পরামর্শে বরিশাল বিএম কলেজ সরকারি সাহায্য লাভের বিনিময়ে শর্তাধীনে পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হলো। এটা সতীশ বাবুর মনপুত ছিল না। প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করা তার এখতিয়ার বহির্ভূত। এ জন্য তিনি মনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বিএম স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিলেন।

এর পরেই সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় কিছুটা ধর্ম সাধনার প্রতি অনুরাগী হলেন। চলে গেলেন কাশীতে। সংস্কৃত শিক্ষা লাভের নিমিত্তে।  নিজে বেদ অধ্যয়ন করতেন, সাথে সাথে অন্যকেও শিক্ষা দিতেন। কাশী থেকে ফিরে এসে তিনি পরিপূর্ণভাবে এক সন্ন্যাসীরূপে সমাজে পরিচিতি লাভ করলেন। তিনি সন্ন্যাস নাম ধারণ করেন স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী। এ নামেই সকলে চিনত। ইংরেজি ১৯১১ সনের ডিসেম্বর মাসে গয়াধামে গিয়ে মহাতাপস স্বামী শংকরার্যের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। সন্ন্যাসী প্রজ্ঞানানন্দর গৈরিক বসন, গৈরিক উত্তরীয় হাতে কমন্ডলু। একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করার সংকল্প নিয়ে বিএম কলেজের সন্নিকটে রাস্তার পাশে সম্পত্তি কেনার জন্য সম্পত্তির মালিকের কাছে গেলেন। কিন্তু কি কারণে যে তার কাছে সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি নয়- তা জানা যায়নি। এ ব্যাপারে বরিশাল শহরের অতি পরিচিতি অনুশীলন কমিটির সক্রিয় সদস্য অগ্নিযুগের বিপ্লবী সৈনিক দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ যেভাবেই হোক রাজি করিয়ে ছিলেন।

১৯১২ সালে জায়গাটি সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ক্রয় করেন। সম্পত্তির উপর গড়ে তুলেন এক আশ্রম। আশ্রমের নাম দেয়া হয় শ্রীশ্রী শংকর মঠ। আশ্রমের উদ্দেশ্য ছিল স্বাদেশিকতা। ভারত মাতার মুক্তি সংগ্রাম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পূজা অর্চনা হতো। পাঠশালাও চালু করেন। গোয়েন্দা বিভাগ বিষয়টি জানতে পারে যে, আশ্রমের নামে এখানে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাই গোয়েন্দারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখার জন্য শ্রীশ্রী শংকর মঠের ঠিক রাস্তার ওপারেই একটি গোয়েন্দা অফিস স্থাপন করে।

১৯১৫ সনে সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় (স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী) কাশীতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯১৯ সনে তিনি অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করেন। মুক্তি লাভের পরই সরাসরি তিনি বরিশালে চলে আসেন। শ্রীশ্রী শংকর মঠ আশ্রমের সম্পত্তি (স্থাবর-অস্থাবর) পরবর্তীতে যাতে তার কোন ওয়ারিশ দাবি না করতে পারে, এ জন্য আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ সমুদয় সম্পত্তি তিনি শ্রীশ্রী শংকর মঠ আশ্রমের নামে ট্রাস্টি ডিড করে যান।

১৯২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় থাকাকালে পরলোক গমন করেন তিনি। তার মরদেহ ৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে আনা হলে ভোলাগিরি মহারাজের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রজ্ঞানান্দকে তারই প্রতিষ্ঠিত শংকর মঠে সমাধিস্থ করা হয়।

এ প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব অত্যধিক বলে মতামত বরিশালের বিশিষ্টজনদের।

১৯৪৭ সনে দেশ বিভাগের পর এ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। শহরটিতে বসবাসকারী বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ৪৭ ও পরবর্তীতে ১৯৫০ এর দাঙ্গার ফলে শহরের বাড়িঘর ত্যাগ করে দেশান্তরিত হলেন। শহরের পরিত্যক্ত জায়গায় ঘরবাড়ি শূন্য। চারদিক খাঁ খাঁ করে এ অবস্থায় জায়গাটি ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরও অস্বাভাবিকরূপ লাভ করল। এ সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার মত লোক খুঁজেই পাওয়া ছিল দুষ্কর।

জীবিতাবস্থায় সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় শংকর মঠের সম্পত্তি রক্ষার জন্য ট্রাস্টি কমিটি গঠন করেন। যাদের নামে ডিড করেছিলেন তারা ১৯৫০ ও ১৯৬৪ সনের দাঙ্গার পর স্বদেশভূমি ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। বিশাল এ ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করার মত বলতে গেলে কেউ ছিল না। এ ভূসম্পত্তি রক্ষার্থে এবং সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের আদর্শ ও উদ্দেশ্য যাতে বজায় থাকে এ জন্য বরিশালের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এসেছিলেন। তন্মধ্যে আইনজীবী অবনী নাথ ঘোষ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী সৈনিক দেবেন্দ্র নাথ ঘোষসহ অনেকেই তাদের সাথে থেকে সহযাগিতা প্রদান করেছিলেন। পরিত্যক্ত এ সম্পত্তির আশেপাশে লোক বসতি আদৌ ছিল না। মঠের অভ্যন্তরে যে মন্দির আছে সেখানে পূজা অর্চনা ও সন্ধ্যায় ধূপ দীপ প্রদান করার মত অবস্থা ছিল না বলেই চলে। মালিকবিহীন পরিত্যক্ত সম্পত্তি অবহেলিত অবস্থায় পড়েছিল। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা কালেভদ্রে আসতেন। তখন অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুন। জায়গাটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ে আর মঠ ও মন্দিরে সরীসৃপ জাতীয় জীবের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছিল। এককালে পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে একটি পাঠাগার ছিল। পাঠাগারে ছিল মূল্যবান পুস্তকাবলী আর ছিল অবৈতনিক একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরিচালকের অভাবে সবকিছু বিলীন হয়ে যায়। খালি জায়গা গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়। সেটা ছিল অত্যন্ত করুণ ও জীর্ণদশা। বিশাল এ ভূসম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে স্বীকৃত।

১৯৮২ সালের দিকে কিছু ব্যক্তিরা মূল্যবান বিশাল এ সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য নানাভাবে দুরভিসন্ধিমূলক কাজকর্ম শুরু করে। মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং রাজস্ব বিভাগের অসৎ কর্মচারীদের সাথে আতাত করে ঐ সম্পত্তি গ্রাস করার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তাতে তারা অনেকটা সফলকাম হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছে এ দেবোত্তর সম্পত্তি অবমুক্ত করার জন্য আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে কথা দেন এবং তার পিএ কে জরুরিভিত্তিতে যাতে অবমুক্ত হয় সেজন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেবার জন্য এ সম্পত্তি নোট করতে বলেন। বাস্তবিক পক্ষে অতি অল্প দিনের মধ্যেই এ সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে ঝামেলা মুক্ত হয় বলে জানা যায়। এর পরেই এগার সদস্যবিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। যার সভাপতি ছিলেন স্বর্গীয় বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ। শ্রীশ্রী শংকর মঠে উদিত হল নতুন সূর্য। রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হল ঐতিহ্যবাহী ঐ প্রতিষ্ঠানটি। তারপরের ইতিহাস অত্যন্ত দুঃখজনক। নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, ভুল বোঝাবুঝিতে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যহত হয়েছিল এর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। এ প্রতিষ্ঠানটি শক্ত হাতে রক্ষা করার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এসেছিলেন সমস্ত অব্যবস্থা দূর করে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও একটি সাংগঠনিক নীতিমালা প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যে।

 

গঠনতান্ত্রিক নীতিমালা প্রণয়ন করার নিমিত্তে পণ্ডিত স্বর্গীয় মনীন্দ্র নাথ সামাজদার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিখিল সেনের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তারপর নিয়মাতান্ত্রিক উপায়ে প্যানেলভুক্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে এ্যাড. শান্তি রঞ্জন চক্রবর্তী ও হিমাংশু দাশ গুপ্ত (নাথুকে) সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত করা হয়। শ্রীশ্রী শংকর মঠ ও আশ্রম পরিচালনা পরিষদের সদস্য সংখ্যা একুশ জন। শ্রীশ্রী শংকর মঠ প্রতিষ্ঠানটি নবজীবন লাভ করে। নবগঠিত কমিটির দায়িত্ব লাভের পরই শুরু হল শংকর মঠের উন্নয়নমূলক কাজের ব্যাপক আয়োজন। তাদের মাধ্যমে মন্দির সংস্কার মন্দির অভ্যন্তরে রাস্তা ঘাটের সুব্যবস্থা, বন জঙ্গল পরিষ্কার, ছাত্রাবাসের পরিবেশ সুন্দর ও বাস উপযোগীকরণ প্রধান গেট সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মাণ, চতুর্দিকে প্রাচীর বেষ্টন। পুকুরের ঘাটলা বাঁধানো এবং আরও বিভিন্ন ধরনের সংস্কারমূলক কাজ অল্প দিনের মধ্যেই সমাধা করা হয়। শংকর মঠ মন্দিরটিকে ১৯ শতকের শেষের দিকে পুনরায় সংস্কার করা হয়। বর্তমানে শংকর মঠের মূল মন্দিরের মাঝখানে শিব লিঙ্গ স্থাপিত করা রয়েছে। এছাড়া বাম দিকে স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতীর সমাধি এবং ডান দিকে জগৎগুরু শংকরাচার্যের মূর্তি স্থাপন করা রয়েছে।

শ্রীশ্রী শংকর মঠের পূর্বদিকে প্রায় এক একরের মত খালি জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকত। এ সম্পত্তি শ্রীশ্রী শংকর মঠের অন্তর্ভুক্ত। এ খালি জায়গায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘ইসকন’ নামক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। অপূর্ব শোভামন্ডিত এ মন্দির, কীর্তনের জন্য আটচালা বিশিষ্ট আঙ্গিনা। খাবার ঘর, ফুল ও ফলের বাগান, পুকুর সব মিলিয়ে মনমুগ্ধকর জায়গা। এ মন্দিরটিতে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড যথারীতি পালিত হয়। বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অগণিত ভক্তের সমাগম হয়। উপস্থিত সকলকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এখানে বসবাসকারী সাধু ব্যক্তিরা গৈরিক বসন পড়ে সনাতন ধর্ম দিকে দিকে ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে সারা শহর এমনকি প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। হরে কৃষ্ণ রাম এ মহামন্ত্রই হলো সংসারবদ্ধ জীবের মুক্তি লাভের একমাত্র পথ। এ বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার ব্রত নিয়ে সাধুদের পরিক্রামা।

শ্রীশ্রী শংকর মঠ সংলগ্ন রাধাশ্যামসুন্দর মন্দির (ইসকন) থেকে মহা আড়ম্বরের সাথে শুরু হল শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব।  বরিশালে কয়েক বছর যাবৎ শ্রী শ্রী শংকর মঠ সংলগ্ন ইসকন মন্দির থেকে জাঁকজমকের সাথে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় এ অনুষ্ঠানটি পালিত হয়ে আসছে। পূর্বে খুব বেশী লোকের সমাগম হত না। বর্তমানে এটা এক উলে¬খযোগ্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

মঠের সম্পত্তি অবমুক্ত হওয়ার পর খালি জায়গায় বৃক্ষরোপন ও পূজা অর্চনা যথারীতি শুরু হয়। সম্পত্তি অবমুক্তর পর অবনী কুমার সাহা বাং ১৪০৫ সনে মন্দিরের প্রবেশ পথে একটি তোরণ নির্মাণ করেন তার পিতা দেবেন্দ্র লাল সাহা ও মাতা চপলা বালা সাহার স্মৃতি স্মরণে।

এদিকে মন্দিরে থাকা তিনটি পুকুরের মধ্যে একটি পুকুর ইসকন মন্দির স্থাপনের পর ভরাট করে ফেলা হয়।

শংকর মঠে ১৯৯৯ সালে পরিমল চন্দ্র দাস স্থানীয় দুর্গামন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে মন্দিরের ট্রাস্ট কমিটি ২০০৬ সালে শ্রীশ্রী কালিমাতার মন্দির এবং পরবর্তীতে আবার পরিমল চন্দ্র দাস ২০১৬ সালে মনসা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মঠের মোট ৪ মন্দিরে বার্ষিক  পূজাসহ এখানে প্রতিদিনই পূর্জা অর্চণা করা হয় বলে জানিয়েছেন মন্দিরের পুরোহিত শিবু চ্যাটার্জি।

মন্দিরটিতে পূজা পার্বণ পালনের জন্য প্রতিবছরই পূজা উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটি বছরে মন্দিরের সকল পার্বনের পরিচালনা করে থাকে বেশ জাঁকজমকভাবে। বিশেষ করে শারদীয় দূর্গাপূজায় এ মন্দিরে চার দিন যাবৎ বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায় দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের।

শ্রী শ্রী শংকর মঠ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কিশোর কুমার দে বলেন, সারাবছর এ মন্দিরে বেশ কয়েকটি পূজা পার্বন বেশ জাঁকজমকভাবে পালিত হয়, তবে দূর্গাপূজা এবং শিবচতুর্দশীতে বিপুল ভক্ত এবং দর্শনার্থীদের সমাগম হয় এখানে। তাছাড়া প্রতিবছরই দেশ বিদেশ থেকে অনেক লোক আমাদের এ মন্দির দেখতে আসে।

শংকর মঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গঠিত শ্রীমৎ স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কর্মকার বলেন, শংকর মঠ পুরোনো জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে অনেকটা উন্নত। পূর্বের জরাজীর্ণ অবস্থা না থাকলেও আর্থিক অবস্থা থেকে শংকর মঠ অনেকটা দুর্বল। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এ মন্দিরটিকে যাতে আরো উন্নত করা যায় সে লক্ষ্যে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »