দু’দশক ধরে তিল তিল করে সংগঠনকে মজবুত করার কাজ করেছেন তিনি৷ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের পর সেই মুকুল রায়ের সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পেতে যেভাবে গোয়েন্দাকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ক্ষুব্ধ খোদ তৃণমূলের নিচুতলার একাংশ কর্মী৷ তাঁদের কথায়, ‘‘দলনেত্রীর পর তৃণমূলে যদি কেউ যোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তাহলে তিনি অবশ্যই মুকুল রায়৷ তৃণমূলে তাঁর অবদান কেউই অস্বীকার করতে পারবে না৷ কিন্তু তাঁর সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা আসলে নোংরামি ছাড়া আর কিছুই নয়৷’’
শুক্রবারই রাজধানী দিল্লির মাটিতে পা রেখেছেন মুকুল৷ শনিবার অধীর চৌধুরীর বাড়ি গিয়েছেন৷ সূত্রের খবর, রাজ্য রাজনীতির তিন মেরুর মেলবন্ধন হয় ওই বৈঠকে৷ অধীরবাবুর বাড়িতে মুকুল রায় যাওয়ার পরই সেখানে যান সিপিএমের বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত চক্রবর্তী৷ স্বাভাবিকভাবেই ত্রয়ীকে নিয়ে বঙ্গ তৃণমূলে আলোচনার শেষ নেই৷
নিজে দল গড়বেন নাকি অন্য দলে (বিজেপি) যাবেন, এদিনও সেই রহস্য জিইয়ে রেখেছেন মুকুল রায়৷ সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই ঝুলি থেকে রহস্য উন্মোচন করবেন তিনি৷ সেদিকেই তাকিয়ে বঙ্গ তৃণমূলের বিগ্রেড৷ দুই মেদিনীপুর, জঙ্গলমহল, বর্ধমান, হাওড়া, দুই ২৪ পরগণা সহ রাজ্যের সিংহভাগ জেলার একাংশ তৃণমূল কর্মী সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন৷
মুকুল ঘনিষ্ট শিবির সূত্রের খবর, মুকুল রায়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পেতে তাঁর ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় আদতে সাপে বরই হয়েছে৷ কারন, এই ঘটনৈায় চরম ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নীচুতলার কর্মীরা৷ মুকুল ঘনিষ্ট এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা প্রয়োজন পড়লে দাদার রক্ষীদের মোবাইলে ফোন করে অনায়াসে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে নিচ্ছি৷ কিন্তু ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টিকে কেউই ভালোভাবে দেখছেন না৷ এর থেকেই তো স্পষ্ট তৃণমূল মুকুল রায়কে ভয় পাচ্ছে৷ তাই তো তাঁর ওপরে নজরদারি চালানো হচ্ছে৷’’
ওই নেতার সংযোজন, মুকুল রায় প্রসঙ্গে শুধু উত্তর দিনাজপুর নয় সারা রাজ্যেই তৃণমূলে ভাঙন অবশ্যম্ভাবী৷ ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তৃণমূলের অন্দরেই ‘সততার প্রতীক’ প্রসঙ্গটি তীব্র সমালোচিত হচ্ছে৷ একান্ত আলাপচারিতায় তৃণমূলের নীচুতলার কর্মীরা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গেই বলছেন, ‘‘দলনেত্রীকে বলা হয় সততার প্রতীক৷ যিনি তিল তিল করে দলের সংগঠনটা গড়লেন, এখন গোপনে তাঁরই তথ্য পেতে গোয়েন্দাকে দিয়ে ফোনে আড়ি পাতানো কি তাঁরই নমুণা৷’’
ওই অংশের সাফ কথা, আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি৷ দাদা নতুন দল গড়ুক বা বিজেপি-তে আত্মপ্রকাশ করুক যেখানেই যাবেন আমরাও সেখানেই যাব৷ মুকুল রায় ইস্যুতে জোর জল্পনা চলছে তৃণমূল নেতাদের অন্দরেও৷ যদিও কৌশলগত কারণেই তাঁরা প্রকাশ্যে এবিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে তৃণমূলে ভাঙন অবশ্যম্ভাবী৷
আশঙ্কা বাস্তবায়িত হয় কি না, তার সদুত্তর অবশ্য মিলবে সময়েই৷