সব জল্পনার অবসান? তাহলে, বিজেপির হয়েই লড়াই শুরু করলেন মুকুল রায়? বিজেপির বিভিন্ন সোশ্যাল গ্রুপ যারা সামলান তাদের সঙ্গে সোমবার নিজাম প্যালেসে এক গোপন বৈঠকে বসেন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসা মুকুল রায়৷ আর তারপরেই ফের জল্পনার জাল বোনা শুরু রাজ্যের রাজনীতিতে৷ কবে বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন মুকুল রায়? আগামীদিনে বাংলায় বিজেপির মুখ কি মুকুল রায়ই?
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারটা বরাবরই শক্তিশালী বিজেপির৷ বিভিন্ন গ্রুপ করে নিজেদের প্রচার করার কৌশলটা ভাল রকমই জানে কেন্দ্রের শাসক দল৷ আর এই রাজ্যে সেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা বিজেপির হয়ে লড়ে, সেইরকম বেশ কিছু গ্রুপের সদস্যরা গত কয়েকদিনে দেখা করলেন মুকুল রায়ের সঙ্গে৷ সোমবারও এইরকমই কয়েকজন নিজাম প্যালেসে গিয়ে দেখা করলেন মুকুলের সঙ্গে৷ ছিলেন একসময় বিজেপির আই টি সেলে যুক্ত থাকা দেবযানী হালদারও৷ সেই ছবি পোস্ট করেছেন দেবযানী নিজেই। শুধু ছবিই নয়, দেবযানী লিখেছেন, এদিন মুকুলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে তাঁদের। মুকুল রায়ের সঙ্গে দেবযানী হালদারের ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ তাহলে কি বিজেপির আই টি সেল দিয়েই নিজের পরিকল্পনা শুরু করলেন মুকুল? রাজ্য রাজনীতিতে এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন৷বাংলায় কি মুকুল রায়কে মুখ করেই এগোচ্ছে বিজেপি? বিজেপির নিচু তলার নেতারা নেত্রীরা কিন্তু মুকুল রায়ের দলে যোগদান নিয়ে বেশ নিশ্চিত৷ তাদের মতে মুকুল রায়কে মুখ করেই বাংলায় এগোবে বিজেপি৷ ২০১৯ র লোকসভা ভোটে মুকুল রায়ই হবেন বিজেপির সেনাপতি৷ যদিও বিজেপির রাজ্যস্থরের কোন নেতা মুকুল রায়কে নিয়ে এখনই মুখ খুলতে একেবারেই রাজী নন৷ তবে, নাটক করার পর বিজেপিতেই নিজের তরী ভেড়াতে চলেছেন মুকুল, এটাও তাদের কাছে পরিস্কার৷ কিন্তু যেহেতু, মুকুল রায়ের সমস্ত ব্যপার দেখছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, তাই মুকুলকে নিয়ে রাজ্যের নেতারা একেবারেই স্পিকটি নট৷
রাজ্য রাজনীতিতে কতটা ভাইট্যাল ফ্যাক্টর মুকুল? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তৃণমূলের জেলা সংগঠনের পুরোটাই মুকুলের হাতে গড়া৷ জেলার নিচুতলার কর্মীদেরও নামে চেনেন মুকুল রায়৷ মুকুল বিজেপিতে গেলে তৃণমূলের নীচুতলার অনেক নেতা কর্মীই যে তাঁর সঙ্গে যাবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ মনে করা হচ্ছে, লোকসভা ভোট নয় আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটেই তৃণমূল টের পাবে দলে কতটা ভাঙন হয়েছে৷ বিজেপির একশ্রেণীর নেতারা আবার মনে করছেন মুকুলকে মুখ্যমন্ত্রী প্রজেক্ট করেই ২০২১ এর ভোটে এগুতে পারে বিজেপি৷ কেউ কেউ আবার বলছেন, বিজেপিতে যোগ দিয়েই কেন্দ্রে মন্ত্রী হবেন মুকুল রায়৷ মন্ত্রী মুকুল রায়কে দিয়েই বাংলার লোকসভা ভোটে লড়বে বিজেপি৷ জল্পনা রয়েছে৷
বিজেপি কর্মীরা একের পর এক নিজাম প্যালেসে গিয়ে মুকুলের সঙ্গে দেখা করার পর এই জল্পনা আরও বেড়েছে৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটের প্রায় পুরোটাই এনে দিয়েছেন মুকুল রায়৷ মুকুল রায়ের হাতেই এখনও নিয়ন্ত্রক শক্তি সংখ্যালঘু ভোটের৷ অন্যদিকে মমত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ রাজনীতির বিরোধীতা করেই এগুতে চাইছে বিজেপি৷ তাই, হিন্দু ভোট কমার সঙ্গে সঙ্গে মুকুলের হাত ধরে সংখ্যালঘু ভোট কমে গেলে সমস্যায় পড়বেন মমতা৷ এদিকে সবাইকে টপকে অত্রি ভট্টাচার্যের স্বরাষ্ট্রসচিব পদে প্রমোশনে ইতিমধ্যেই আমলাদের একটা বড় লবি ক্ষুব্ধ৷ ডিএ ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ সরকারী কর্মীচারিদের সংগঠনগুলিও৷ সবমিলিয়ে এই সব ইস্যুগুলি আগামী ভোটে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে৷ আর মুকুলকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠান বিরোধী এই ভোটগুলিরই সুবিধা নিয়ে চায় বিজেপি৷ তাই ধীরে চল নীতি নিলেও মুকুলকে কেন্দ্র করেই গুটি সাজাচ্ছে বিজেপি, সেটা একেবারেই পরিস্কার৷ যদিও বিজেপির রাজ্য নেতারা এই নিয়ে বেশি কিছু বলতে রাজী নয়৷ তাঁরা জানিয়েছেন যাঁরা মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন তারা দলের কোন পদে নেই, নিজে থেকেই গেছেন৷ সত্যি কি বিজেপির হয়ে গুঁটি সাজাচ্ছেন মুকুল? না হলে হঠাৎ করে বিজেপির আই টি সেলের সদস্যদের সঙ্গে তিনি দেখা করবেনই বা কেন? প্রশ্ন উঠছে৷ বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি কর্মী দেবযানী হালদারের সঙ্গে মুকুল রায়ে ছবি ভাইরাল হবার পর এই জল্পনা আরও বেড়েছে৷ সিপিএমের হয়ে যেটা করেছিলেন অনিল বিশ্বাস, সেই সংগঠন ঢেলে সাজাতেই কি সবার সঙ্গে বসছেন মুকুল, উঠছে প্রশ্ন৷ আর সেই কারণেই কি বিজেপির নিচু তলার থেকেই সব বুঝে নিতে চাইছেন মুকুল? ঠিক যেভাবে তৃণমূলের নিচুতলার সমস্ত কর্মীকে একডাকে চিনতেন তিনি৷ বাংলার রাজনীতির চাণক্যকেই কি এবার চন্দ্রগুপ্ত করে সিংহাসনে বসানোর লড়াই শুরু করবে বিজেপি?