এক অসহায় হতভাগীনি সংখ্যালঘু নারী পূর্ণিমা। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের উলুডাঙ্গা গ্রামের ঋষি পল্লির পরিতোষ দাশের স্ত্রী। এক সময় পূর্ণিমার অনেক কিছু থাকলে ও আজ তার মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু ও নেই। পূর্ণিমার জীবনের শুরুটাই ছিল দুঃখের এবং কষ্টের। রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় পিতা, ভাই ও একমাত্র পুত্র সন্তানের। আপন সবাই কে হারিয়ে একাকী হয়ে যায় সে।
অসহাত্বের সুযোগ নিয়ে তার সকল সম্পত্তি গ্রাস করতে মরিয়া হয়ে যায় এলাকার কতিপয় প্রভাবশালীরা। তাদের কাছ থেকে ঔষধ কেনার জন্য মাত্র দুইশত টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালীদের পূর্ণিমা কে দিতে হয়েছে চার বিঘা জমি।
এভাবেই হাতিয়ে নেন পূর্ণিমার সকল সহায় সম্পত্তি। মাথা গোঁজার জন্য ও এক শতক জায়গা রাখেননি তারা। হঠাৎ দুর্বিষহ জীবনের মাঝে তার সামনে এসে হাজির হন এক পুলিশ কর্মকর্তা। ২০০৮ সালের দিকে তিনি পাইকগাছা থানায় সেকেন্ড অফিসার হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় অসহায় পূর্ণিমার সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ভাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ন হন। দেবতার মতো ভাইকে কাছে পেয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে অসহায় পূর্ণিমা। কিন্তু এ পুলিশ কর্মকর্তার বদলি বেঁচে থাকার সব স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন করে।
২০১৭ সালের ৭ মে ওই পুলিশ কর্মকর্তা পদান্নতি নিয়ে পুনঃরায় পাইকগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন। ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব যোগদান করে ছুটে যান বোন পূর্ণিমার খোঁজে। শুরু করেন প্রভাবশালীদের দখলে থাকা পূর্ণিমার সম্পত্তি উদ্ধার মিশনে। এ মিশনে অনেক প্রভাবশালী, রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের রোষানলে পড়তে হয় ওসি আমিনুলকে। আসতে থাকে অনেক লোভনীয় অফার। সবকিছুর উর্দ্ধে থেকে সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে অটল থাকেন তিনি।
সরেজমিন পরিদর্শন ও দীর্ঘ আলোচনান্তে গত বুধবার (১১অক্টোবর) প্রতিপক্ষ সহ পূর্ণিমাকে হাজির করেন নিজ কার্যালয়ে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে সমঝোতার আলোকে প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী মহলটি পূর্ণিমার বসবাসের জন্য তার সম্পত্তি তাকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হন। উক্ত সম্পত্তি আগামী বুধবার রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার মাধ্যমে পূর্ণিমার নিকট হস্তান্তর করে দিবেন প্রতিপক্ষরা।
ওসি’র শান্তিপূর্ণ সমাধানের সাথে একমত পোষণ করেন উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। দীর্ঘদিনপর সম্পত্তি ফিরে পাওয়ায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পূর্ণিমা। এর আগেও পূর্ণিমা থানায় এসেছে একাধিকবার। তখনও তিনি কেঁদেছেন, কিন্তু তখনকার কান্না আর এখনকার কান্নার মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক। তখনকার কান্নার মধ্যে ছিল দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি। আর সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার কান্নার মধ্যে ছিল ভাই ওসি’র জন্য বুকভরা ভালবাসার আনন্দের অশ্রু।ghp