কিশোরগঞ্জে কটিয়াদীর বনগ্রামে বিধবা নারী ও তার কিশোরী কন্যার ওপর একই পরিবারের তিন সদস্যের বর্বরোচিত ও পাশবিক নির্যাতনের সংবাদ যমুনা টিভিতে প্রচারের পর এলাকায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে।
এদিকে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুলিশ মারামারির মামলা সাজিয়ে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় মহিলা পরিষদ কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন এবং এলাকাবাসী বনগ্রামে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। এলকাবাসী ও সুশীল সমাজের দাবি, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নিয়ে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার।
প্রসঙ্গত, চৌদ্দ বছর আগে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় স্বামী মারা যাওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়া কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ওই নারী জীবিকা নির্বাহ ও কন্যাসন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় মাটিকাটার কাজ করার পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র কন্যাসন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগানোর পাশাপাশি পরিবারের অনটনের কারণে সম্প্রতি একই গ্রামের ব্যবসায়ী ধনু মিয়া তার বাড়িতে কাজ দেন। এলাকার এ ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের লোকজনের কুদৃষ্টি পড়ে ওই চল্লিশোর্ধ্ব বিধবা নারী ও তার ১৪ বছরের কিশোরী কন্যার ওপর। একপর্যায়ে ব্যবসায়ী ধনু মিয়া ও তার ভাই ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছেলু মিয়া ওই বিধবা গৃহপরিচারিকাকে এবং ধনু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন মিয়া ওই বিধবার কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করে।
পাশবিক নির্যাতনের এ ঘটনা যাতে এলাকাবাসীকে বলতে না পারে এবং মামলা করতে না পারে এ জন্য ওই বিধবা গৃহপরিচারিকাকে বাড়িতে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো হয় নির্যাতন। ওই নারীর শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নিষ্ঠুর নির্যাতনের অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। অবশেষে এলাকার লোকজনের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে।
মানববন্ধনে মহিলা ঐক্য পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ঊষা রাণী দেবী অভিযোগ করেন, পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা আড়াল করে মিথ্যা মারামারির ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হয়েছে। আমরা কখনও এমনটি আশা করিনি। আমরা আশা করবো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার সরকার বলেন, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ সময় ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এবং এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে ও হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক অভিযোগ করেন, এখানে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটেছে বিধবা নারী ও কিশোরী কন্যার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা। অথচ এ ঘটনা আড়াল করার জন্য মিথ্যা ও সাজানো মামলা নেয়া হয়েছে।