আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি অংশগ্রহণ নির্বাচন হবে এবং সেখানে নিজেদের কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করছে ক্ষমতাসী দল আওয়ামী লীগ। এ জন্য তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে দলকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখা, উপকমিটিতে দেশের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্ত করা, বাম দলগুলোকে নিয়ে গঠিত নতুন জোটকে বিবেচনায় এনে কাজ করা ইত্যাদি।
এ ছাড়া দলের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর সম্মেলন নিয়ে নির্বাচনের আগে না ভাবার ব্যাপারেও পরিকল্পনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ২০তম সম্মেলনে পদবঞ্চিত কর্মীদের উপকমিটিতেও জায়গা হয়নি। এ নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে, যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও জানিয়েছেন নেতাদের।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, পুরোনো জটিলতার অবসান ঘটানোর পাশাপাশি নতুন করে দলের ভেতর যেন কোনো বিভেদের দেয়াল না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখাই দলের কাজ। পদবঞ্চিতদের মধ্যে যেমন প্রতিক্রিয়া আছে তা আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরো বাড়বে। এ ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টায় সাংগঠনিকভাবে কাজ চলছে।
নেতারা জানান, দল মনে করছে আগামী নির্বাচন একটি অংশগ্রহণ নির্বাচন হবে এবং সেখানে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হবে। সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন মিলে যে জোট গঠিত হয়েছে সেটাকেও সহজভাবে দেখছে না আওয়ামী লীগ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে তারাও আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন ভাবনাও দলের নেতাদের মধ্যে রয়েছে।
অন্যদিকে জেএসডি, গণফোরাম, বিকল্পধারাসহ কয়েকটি দল নিয়ে আরেকটি জোট গঠনের পরিকল্পনা এখনো বাস্তবে রূপ না নিলেও তারা যেকোনো সময় আলাদা জোটের আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে আওয়ামী লীগ ধারণা করছে। তারা দেশের মধ্যে সেভাবে জনপ্রিয় না হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক ও কূটনৈতিক মারপ্যাঁচে একটা ভূমিকা রাখতে পারে বলে তাদের বিষয়টা নিয়ে মাথাব্যথা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের।
তবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা নেই আওয়ামী লীগের।
উপকমিটিতে লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণের বিষয়ে ওই নেতারা জানান, বুদ্ধিবৃত্তিক মারপ্যাঁচ মোকাবিলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে সরব থাকা ও বিরোধী রাজনীতির বিপরীতে দূরদর্শী রাজনৈতিক চর্চার অভিপ্রায়ে এ কমিটি করা হয়েছে। এতে আগামী নির্বাচনে একটা ফল দেবে বলে বিশ্বাস আওয়ামী লীগের।
যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও আগামী নির্বাচনের আগে সম্মেলনের কথা ভাবছে না বলে জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সংবিধান অনুযায়ী হবে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আশা করছি, আমরা আমাদের কৃতকর্মের জন্যই আগামী নির্বাচনে বিশাল জনসমর্থন নিয়ে জয়ী হব।’
দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা মানুষের জন্য কাজ করে মানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার রাজনীতি আওয়ামী লীগ করেনি, করবে না। অন্যত্র কী হচ্ছে তা নিয়ে চিন্তা নেই আওয়ামী লীগের। কারণ, জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতি অতীতের মতোই আস্থাশীল।’ সূত্র : এনটিভি।