নিজ এলাকার ঐতিহ্য সংস্কৃতি মানুষ গর্বের সাথে স্মরণ করে। সেই ঐতিহ্য সংস্কৃতি বুকে লালন করে। প্রাচীন অবকাঠামো সহ পুরকৌশলের স্থাপত্য যুগ যুগ সংরক্ষণ করে। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সমূহ দেশবাসী সহ বিশ্বব্যাপী নিজেদের গর্বের পরিচয় তুলে ধরতে সাহায্য করে। সংরক্ষণ ও খনন সহ হাজারো আয়োজনে এই সব তুলে ধরার প্রতিযোগিতা চলতে থাকে শত শত বছর ধরে। সেই দিন থেকে একটি পশ্চাৎপদ উপজেলা বলা চলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাকে।
এই উপজেলাবাসী বুঝে হোক না বুঝে হোক তাদের পুরার্কীতিগুলো নিজেরাই ধ্বংস করেছে। সংরক্ষণ ও খনন সহ বহুমুখী প্রচারের তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নি। উপজেলাবাসীর এমন অন্যায়ের চুড়ান্ত উদাহরণ বর্ধনকুঠি রাজবাড়ীর ধ্বংস সাধন।
বর্ধনকুঠি রাজবাড়ী মূলত একটি জমিদার বাড়ী। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হলে বর্ধনকুঠি জমিদারীর সর্বশেষ জমিদার শৈলেশ চন্দ্র ভারতে চলে যান। কয়েক বছর পরিত্যক্ত থাকার পর এই জমিদারীতে গোবিন্দগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠা সহ বিভিন্ন ব্যক্তি জমিদারী বাড়ীর বিভিন্ন অংশ দখল করে নেয়।
বর্তমানের বর্ধনকুঠি জমিদার বাড়ীর যে কয়টি ভঙ্গুর ইমারত ও ধংস্বাবশেষ, কুপ ও খননের উপযোগী অংশ আছে তা সংরক্ষণ করা জরুরি। ইতিহাস খ্যাত ২৫০০ বছর আগের বর্ধনকোট আসলেই গোবিন্দগঞ্জের বর্ধনকুঠি কিনা তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতভেদ আছে। অনেক ঐতিহাসিক গোবিন্দগঞ্জের বর্ধনকুঠিকে প্রাচীন ইতিহাসখ্যাত বর্ধনকোট বলে উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন বর্ধনকোট বগুড়ার মহাস্থানের পুন্ডবর্ধনের মত একটি সমৃদ্ধ জনপদ ছিলো। প্রাচীন বর্ধনকোট প্রমত্ত করতোয়া নদীর তীরবর্তী ছিলো। প্রমত্ত বলতে যে নদীর দুই প্রান্ত খালি চোখে দেখা যায় না তেমন নদীকে বোঝায়।
বর্তমান করতোয়া নদীর করুন অবস্থা দেখে অনেক ঐতিহাসিক পুন্ডবর্ধন ও বর্ধনকোটকে এক মনে করলেও অনেকেই আবার দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের যুক্তি পুন্ডবর্ধন ও বর্ধনকোট আলাদা। তাদের মতে পুন্ডবর্ধন থেকে বর্ধনকোট ১১ মাইল দুরবর্তী একটি সমৃদ্ধ জনপদ। সেদিন থেকে গোবিন্দগঞ্জের বর্ধনকুঠি প্রাচীন ঐহিত্যাসিক নগরী বর্ধনকোট হওয়ায় যুক্তিযুক্ত। তাই পুনঃপুনঃ খনন ও গবেষণার মাধ্যমে আবিস্কার করতে হবে বর্ধনকুঠির প্রাচীন ঐতিহ্য।
গোবিন্দগঞ্জের সংস্কৃতি কর্মী বিভিন্ন সময় লোক সাহিত্য নিয়ে কাজ করা এ এইচ এম আবু সাহেল বেলাল বর্ধনকুঠি নিয়ে কথা বলতেই নিজের আবেগ সংবরণ করে বলেন, অতীতের ভুলক্রুটি ভুলে বর্ধনকুঠি বাজবাড়ীর বর্তমানেও যে টুকু অবশিষ্ট আছে তা দ্রুত সংরক্ষণ করতে হবে। নিজেদের অস্তিত্ব আমরা এভাবে বিসর্জন দিতে পারি না।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন চিন্তকের চেয়ারম্যান দেশখ্যাত সাংস্কৃতিক সংগঠক বাবুলাল চৌধুরী আক্ষেপ করেই বলেন, গোবিন্দগঞ্জের নিজস্ব ঐতিহ্য তুলে ধরতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রশাসন স্থানীয় জনগণ এমনকি সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোও বুঝে হোক আর না বুঝে হোক তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে নি। যার ফলশ্রুতিতে আজ ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধংস্বের পথে। এখনো যে টুকু আছে তা সংরক্ষণ করা জরুরী বলে অভিজ্ঞ মহল মত পোষন করেন।