২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ভোর ৫:২১

অরিত্রি আত্মহত্যা: হাইকোর্টের কমিটি গঠন

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, ডিসেম্বর ৮, ২০১৮,
  • 365 সংবাদটি পঠিক হয়েছে


রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন হাইকোর্ট। কমিটিকে ১ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ওই অনুসন্ধান কমিটিতে থাকবেন- একজন মনোবিদ, একজন আইনজ্ঞ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি ও একজন শিক্ষাবিদ।

এছাড়া, আত্মহত্যা রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ৫ সদস্যের একটি জাতীয় কাউন্সিলিং কমিটি গঠন ও একটি নীতিমালা নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

আদালতে অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনা নজরে আনেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অনিক আর হক, আনুন নাহার সিদ্দিকা প্রমুখ।

পরে ব্যারিস্টার অনিক আর হক বলেন, শুনানিকালে আদালত এ ধরনের ঘটনা দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। তাই শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধিকালীন তাদের কাউন্সিলিং এবং শিক্ষকদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন করে কাউন্সিলরের পদ সৃষ্টি এবং নিয়োগের বিষয়গুলো তুলে ধরে একটি নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।

এর আগে সকালে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অরিত্রি অধিকারী (১৫) আত্মহত্যার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে বলেন, আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করছি। তখন আদালত বলেন, অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনা খুবই হৃদয় বিদারক। এ সময় শিক্ষার্থীর সামনে বাবা-মাকে অপমানের ঘটনাকে বাজে রকমের দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন আদালত।

স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দেওয়ায় এবং নিজের সামনে বাবা-মাকে অপমান করায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রধান শাখার অরিত্রি অধিকারী (১৫) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। সে প্রভাতী শাখার ইংলিশ ভার্সনের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। শান্তিনগরের ২৩/২৪ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে।

অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, বড় মেয়ে অরিত্রি, ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলা ও স্ত্রী বিউটিকে নিয়ে শান্তিনগরের একটি বাসায় থাকেন তিনি। গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তিনি কাস্টমসের সিঅ্যঅন্ডএফের ব্যবসা করেন। ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলাও একই স্কুলের শিক্ষার্থী।

দিলীপ অধিকারী বলেন, অরিত্রির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রবিবার ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। স্কুলে মোবাইল নেওয়া নিষেধ থাকা সত্বেও অরিত্রি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে মোবাইলটি দেখতে পেয়ে শিক্ষকরা তা নিয়ে যায় এবং অরিত্রিকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়। সোমবার সকালে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্কুলে যায় অরিত্রি। কিন্তু তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে আমাকে ও স্ত্রীকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তখন আমি ও আমার স্ত্রী স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালের কক্ষে যাই। ভাইস প্রিন্সিপাল বলেন, মোবাইলে অরিত্রি নকল করছিল। আমরা এজন্য ক্ষমা চাইলে তিনি প্রিন্সিপালের কক্ষে পাঠান। প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়েও আমরা ক্ষমা চাই। কিন্তু প্রিন্সিপাল সদয় হননি। একপর্যায়ে পায়ে ধরে ক্ষমা চাই। কিন্তু প্রিন্সিপাল আমাদের বেরিয়ে যেতে বলেন। তিনি অরিত্রিকে টিসি (ছাড়পত্র) দেওয়ারও নির্দেশ দেন। স্কুল থেকে বের হয়ে আমি স্ত্রী ও মেয়েকে বাসায় নামিয়ে দেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবির শুরু করি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসে- অরিত্রি রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। বাসায় গিয়ে দরজা ভাঙলে অরিত্রিকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দীলিপ অধিকারী বলেন, অরিত্রিকে টিসি না দিতে আমি এবং তার মা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অরিত্রিকে আরেকবার সুযোগ দিলে হয়তো আমার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত না।

অরিত্রির মা-বাবাকে অপমান এবং টিসি দেওয়ার বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস কোনো মন্তব্য করেননি।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »