জুলেখা বেগম। বয়স শতাধিক। তার দাবি বয়স ১২০ বছর। এ বয়সে তার সঙ্গী হওয়ার কথা বিছানা। অথচ রাস্তায় শুয়ে আছেন তিনি! কি অমানবিক! চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। এই শীতের মধ্যে রেল স্টেশন তার আশ্রয়স্থল। শীতে কুঁকড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই। ব্যস্ত এই নগরীতে কত মানুষই তো ফুটপাতে রাত কাটায়। ক্ষুধায় হাত পাতে অন্যের কাছে। কিন্তু এই বৃদ্ধা নারী তাদের মতো নন। আদরের সন্তান ও পুত্রবধূ তাকে রেল স্টেশনে ফেলে গেছে। দুইদিন যাবৎ চাষারা রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে ‘আবুল কি আর আসবে?’ বলে কাতরাচ্ছেন বার্ধ্যকের শেষ সীমানায় চলে যাওয়া এই বৃদ্ধ।
‘আবুল কে?’ এমন প্রশ্ন করতেই বৃদ্ধা জানালেন, ‘আবুল তার ছেলে।’
প্রত্যক্ষদর্শী স্টেশনের এক দোকানদার বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকালে ছেলে এবং ছেলের স্ত্রী তাকে স্টেশনে নিয়ে আসে। তখন দোকানদার তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, উনি কে হয় আপনার?
প্রশ্নের উত্তর দেয় তার স্ত্রী। উত্তরে বলে, আমার শাশুড়ি। আমার বড় ৬ ভাসুর মরার পর থেকে আমার কাছেই থাকেন।
কথাগুলো বলেই আবুল এবং তার স্ত্রী জুলেখা বেগমের পাশ থেকে চোখের আড়াল হয়। ছেলে চলে যেতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন জুলেখা বেগম। কান্নার শব্দ শুনে আবুল ফিরে আসে।বৃদ্ধা ভাবেন তার কান্নার শব্দ শুনে ফিরে এসেছে ছেলে। কিন্তু ছেলেটি ফিরে আসে মাকে শাসানোর জন্য। কান্নাটা বোধহয় বড্ড বেশি বিরক্ত লাগছিল তার।
মাকে শাসিয়ে আবুল চলে যায় তার স্ত্রীর কাছে। আর ফিরে আসেনি।’বৃদ্ধা মা মানতে নারাজ আবুল তাকে ফেলে চলে গেছে। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করলে তার একটাই কথা ‘আবুল কি আমারে নিতে আইতাছে?’
বৃদ্ধা জুলেখা বেগমের পায়ে ক্ষত। ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। আশেপাশের সবাই জোর করে নিয়ে যায় হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন তাকে। তারা থানায় জানাতে বলে।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানার ডিউটি অফিসার বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আপনারা তাকে আশ্রমে দিয়ে আসতে পারেন।
এদিকে জুলেখা বেগমের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আবুল কি আইবো আমারে নিতে?’ তার প্রশ্নের জবাব দেওয়ারও কেউ নেই। তার প্রশ্ন শুনে নির্বাক তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই কারো!
অসহায় মা এখনো পড়ে আছেন হাসপাতালে একাকী তার ছেলের ফিরে আসার আশায়!