৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৩:২০

সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮,
  • 273 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

সাংবাদিক হত্যা বন্ধ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তাদের দাবি, ‘নির্বাচনি ইশতেহারে মিডিয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকা দরকার। সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার থাকতে হবে। সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ এবং বিচার নিশ্চিত করার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
শনিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসন ব্লুতে ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেশন স্টাডিজ (আইসিএস) আয়োজিত সাংবাদিক হত্যার বিচারহীনতা নিয়ে আলোচনা সভায় এসব দাবি করেন বক্তারা। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী, অধ্যাপক এ জে ম শফিউল আলম ভূইয়া, ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেশন স্টাডিজের নাঈমা নার্গিস। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক রাহুল রাহা ও কালের কণ্ঠের খুলনার সিনিয়র সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় ঝুঁকি ও দক্ষিণাঞ্চলের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এছাড়া সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালুর ছেলে আশিক কবীর ও মেয়ে আইনজীবী হুসনা মেহেরুবা আলোচনায় অংশ নেন। সাংবাদিক বালুর এই দুই সন্তান তাদের বাবা হত্যার বিচার দাবি করেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল আলোচনায় বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারে এক ধরনের জটিলতা রয়েছে। কোথায়, কীভাবে যে আটকে যায় বলা মুশকিল। গত ৫ আগস্ট সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ২২ জন সাংবাদিককে আক্রমণ করা হয়। এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের হস্তক্ষেপ চেয়ে ৭ আগস্ট চিঠি দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠির ব্যাপারে পুলিশ কর্মকর্তারা এক মাস পরে জানান- তথ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন সেই ব্যাপারে স্বরাষ্টমন্ত্রী ভালো বলতে পারবেন, আমাদের জানা নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশকে। তথ্যমন্ত্রী চিঠি দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছিল কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তথ্যমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কোনও আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতিকে পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ।’মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘ঢাকা শহরে হামলায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হলো। তথ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে বিচার চাইলেন, আমরা আন্দোলন করলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের আন্দোলনে এসে অনশন ভঙ্গ করালেন। মামলা হবে, গ্রেফতার হবে বলে আশ্বস্ত করলেন কিন্তু কিছুই হলো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘লুৎফুজ্জামান বাবর তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ২০০৫ সালে দক্ষিণাঞ্চলে প্রকাশ্যে রাজপথে সাংবাদিকরা আন্দোলন করলেন। আমরা বিচার পাই নাই। এই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনে বিচারের অবস্থা। সাংবাদিক হত্যার বিচারের জন্য আমরা ঢাকায় কনভেনশন করার উদ্যোগ নিলাম। ওই বছর ১০ নভেম্বর কনভেনশনের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে সেই কনভেনশন করতে দেওয়া হয়নি।’ সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘সাংবাদিকরা নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন এটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি বিচার নিশ্চিত হবে এটাও স্বাভাবিক। সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড বন্ধে সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এছাড়া সাংবাদিকরা যেহেতু নাগরিকের জন্য কাজ করেন তাই নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।’ সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী অনুষ্ঠানে দক্ষিণাঞ্চলের সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড ও বিচার নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ‘১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের দুই-একটির বিচার হলেও তা নিয়ে কথা রয়েছে। বাকিদের বিচার হয়নি। অপরাধী যদি চিহ্নিত না হয়, সাজা না পায়, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা খুব বেশি এগিয়েছে তা দাবি করতে পারবো না।’

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »