৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ২:০৮

বাংলাদেশে আরসার ঘাঁটি থাকার অভিযোগ মিয়ানমারের, নাকচ করলো ঢাকা

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৮, ২০১৯,
  • 357 সংবাদটি পঠিক হয়েছে


বাংলাদেশে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান আর্মির (এএ) ঘাঁটি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে মিয়ানমার। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষার নামে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়ছে আরসা। আর ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। দুই সংগঠনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে দেশটির প্রেসিডেন্টের দফতর অভিযোগ করেছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে এক হয়ে কাজ করছে। আরাকান আর্মির মুখপাত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন। অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে মিয়ানমারের একজন জাতিবিশেষজ্ঞও। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, এমন অভিযোগের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ।ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আারাকান আর্মি বিগত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। গত মাস থেকে সংগঠনটি তাদের সামরিক তৎপরতা জোরদার করে। সম্প্রতি চারটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে তারা। অন্যদিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার রক্ষার কথা বলে আরসা ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালায়। ওই হামলার অজুহাতে রাখাইনে সংঘবদ্ধ ও কাঠামোগত সন্ত্রাস জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। পূর্ববর্তী সেনাপ্রচারণার ধারাবাহিকতায় পরিচালিত হয় কথিত শুদ্ধি অভিযান। ওই সেনা অভিযানে গণহত্যার নৃসংশ বাস্তবতা এড়াতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।২০১২ ও ২০১৭ সালে দুই দফায় জাতিগত নিধন ও গণহত্যার শিকার হয়ে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বাকীদের রাখাইন থেকে তাড়াতে বিভিন্ন ধারার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। সমগ্র আন্তর্জাতিক দুনিয়া যেখানে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে, মিয়ানমার সেখানে ওই জনগোষ্ঠীর মানুষকেও ‘বাংলাদেশের নাগরিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। পাশাপাশি বহুদিন থেকেই মিয়ানমার আরসার সদস্যদের ‘বাঙালি’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের ওপর তাদের দায় চাপানোর চেষ্টা করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশে আরসা ও এএ’র ঘাঁটি থাকার অভিযোগ তুললো নেপিডো।মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট অফিসের মুখপাত্র ইউ জাও হতে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে আরসার সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক এবং বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি থাকার অভিযোগ তোলেন। গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের রামুতে এএ ও আরসার কর্মকর্তারা বৈঠক করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছে, সভায় মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দুই গ্রুপের মধ্যে আলোচনা হয়। আমরা জানতে পেরেছি যে মায়ু পর্বতমালার পশ্চিম দিকের [বাংলাদেশ সীমান্তে] এলাকা নিয়ন্ত্রণ করবে আরসা, আর এর পূর্ব দিকের এলাকার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে এএ।’সংবাদ সম্মেলনে ইউ জাও হতে  দাবি করেন, বর্তমানে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে এএ’র দুটি ঘাঁটি রয়েছে, আর আরসার রয়েছে তিনটি। এ নিয়ে বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমার অভিযোগ করেছে বলে দাবি করেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, দুটি সংগঠনেরই অবৈধ মাদক বাণিজ্য নিয়ে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি। দাবি করেছেন, জুলাই মাসের সভার জের ধরেই এএ সাম্প্রতিক হামলা চালিয়েছে। তিনি আরো জানান, মিয়ানমার সরকার এসব হামলার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে।তবে এএ মুখপাত্র ইউ খাইঙ থুখা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আরসার সাথে তার সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কোনো ধরনের অবৈধ ব্যবসার সাথেও জড়িত নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব মিশনে রয়েছি। মিয়ানমার সরকার আরসার সাথে আমাদের সম্পর্কের কথা বলে আমাদের ভাবমূর্তি নস্যাতের চেষ্টা করছে।’আরসার সাথে এএ’র সম্পর্ক থাকার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারের জাতিগত বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইউ মঙ মঙ সো। তিনি ইরাবতিকে বলেছেন, ‘আরসার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকার অভিযোগ ওই সংগঠনকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করার শ্রেষ্ঠ পথ। তবে এই অভিযোগের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।’বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, সকালে তারা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে মিয়ানমারের অভিযোগ সম্পর্কে জেনেছেন। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আরসা বা অন্য কোনও ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠনের ঘাঁটি নেই। এই বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। এমন অভিযোগের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »